জেল ম্যানুয়াল বদলাতে উদ্যোগী বিহার
ব্রিটিশ আমলের ‘জেল ম্যানুয়াল’ আমূল বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিহারের নীতীশ সরকার। জেল যে এখন সংশোধনাগার, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই জেলের নিয়মকানুনে মানবিক দিকগুলিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভা এই পরিবর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিয়েছে। আইজি (কারা) আনন্দ কিশোরের কথায়, “বন্দিদের বোঝাতে হবে এটা অত্যাচারের জায়গা নয়, সংশোধনের জায়গা। অপরাধের জন্য তাদের অনুতাপের সুযোগ করে দিতে হবে। তার জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন সেটাই তৈরি করা হচ্ছে। এর জন্য তিহার-সহ বিভিন্ন রাজ্যের ‘জেল ম্যানুয়াল’-ও খতিয়ে দেখে একটি মানবিক ম্যানুয়াল তৈরি করতে চাইছে রাজ্য।”
নতুন নিয়মাবলী চালু করার আগেই অবশ্য কারা দফতরের প্রসাসনিক পরিকাঠামোয় বেশ কয়েকটি পরিবর্তন করা হয়েছে। জেলের জন্য দু’টি ডিআইজি পদ তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি ডিআইজি (বন্দি-কল্যাণ) এবং অন্যটি ডিআইজি (প্রশাসন)। প্রথম জন দেখবেন বন্দিদের সুযোগ-সুবিধার দিকটি, অন্যজন জেলের প্রশাসনিক কাজ। বন্দিরা ঠিক মতো প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে কি না তা দেখভালের জন্য যেমন ব্যবস্থা থাকছে, একই সঙ্গে তাদের যদি কোনও অভিযোগ থাকে তাও শোনার ব্যবস্থা রাখা হবে এই নতুন নিয়মে। রাজ্যের ৮টি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার-সহ ৫৬টি জেল, ৩২টি জেলা জেল এবং ১৬টি মহকুমা জেলে এই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। জেলাশাসক দু’মাসে একবার বন্দিদের সঙ্গে কথা বলবেন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বন্দি দরবার’। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার যে ভাবে জনতা দরবারে হাজির হয়ে মানুষের সমস্যার কথা শোনেন, তেমনই জেলাশাসক শুনবেন বন্দিদের সমস্যার কথা।
বন্দিদের খাওয়া-দাওয়ার দিকটিও এই নিয়মে ভেবে দেখা হচ্ছে। তৈরি করা হবে জেল ক্যান্টিন। যেখানে পয়সা দিয়ে পছন্দমতো খাবার পাবে বন্দিরা। আত্মীয়দের দেওয়া টাকা তারা জমাতে পারবেন। সেই টাকা দিয়ে তারা খেতে পারবেন ক্যান্টিনে। এ ছাড়াও, অল্প বয়সের অপরাধীরা দাগীদের সঙ্গে থাকলে আরও খারাপ হতে পারে, এই ভেবে নয়া বন্দিদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বন্দিদের জন্য চালু করা হচ্ছে স্বাস্থ্য কার্ড। জেলে ঢোকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেল সুপারিন্টেডেন্টের উপস্থিতিতে বন্দিদের শারীরিক পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য কার্ডে সমস্ত নথি রাখা হবে। মাসে মাসে করা হবে স্বাস্থ্য-পরীক্ষা। রাখতে হবে তারও রেকর্ড। দীর্ঘদিনের অসুস্থ কোনও বন্দি থাকলে তার জন্য নিয়মিত চেকআপের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে তার চিকিৎসা করা হবে।
নিরক্ষর বন্দিদের জন্য হাতে নেওয়া হবে সাক্ষরতা কর্মসূচি। ‘স্বয়ং সেবক’ নামে একটি প্রকল্পে কাজে লাগানো হবে জেলেরই শিক্ষিত বন্দিদের। শিক্ষক-বন্দিরা এর জন্য সামান্য টাকাও পাবেন। পাশাপাশি, ভাল কাজের জন্য জেল মেয়াদে ‘রেমিশন’ বা ছাড়ের সুযোগ তো আছেই। জেলের রান্নার জায়গা এবং খাবার পরিবেশনের বিষয়টি সিসিটিভি-র মাধ্যমে দেখভাল করা হবে। আনন্দ কিশোর বলেন, “বন্দিদের খাওয়ার মান নিয়ে অভিযোগ সব সময়েই সব থেকে বেশি। এই মান উন্নত করতে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। সেই জন্য ক্যামেরার মাধ্যমে দেখভালের ব্যবস্থা করা হবে।” এরই পাশাপাশি, বন্দিদের সর্ম্পকে সমস্ত নথি নিয়ে একটি তথ্য-ভাণ্ডার গড়ে তোলার বিষয়েও কারা প্রশাসন ভাবনাচিন্তা করছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে এই তথ্য ভাণ্ডার তৈরির কথা ভাবা হয়েছে। অর্থাৎ বন্দিদের আঙুলের ছাপ, চোখের মণির বিশ্লেষণ সবই কমপিউটারে ভরা থাকবে। পরবর্তী ক্ষেত্রে কোনও অপরাধের কিনারা করতে এই তথ্য ভাণ্ডার আরও দ্রুত, সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারবে বলে প্রশাসনের কর্তারা মনে করেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.