বিকল্প হিসেবে ফুল চাষ দেখাচ্ছে লাভের মুখ
ট্রেনে করে চারা পৌঁছচ্ছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। পূর্বস্থলী স্টেশনে।
গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষি।
বিকল্প চাষ হিসেবে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফুলের চারা তৈরি। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পূর্বস্থলী, পলাশপুলি ও পারুলিয়া এলাকার চাষিরা প্রায় এক হাজার বিঘারও বেশি এলাকা জুড়ে নিজেদের জমিতে তৈরি করছেন এই চারা। লাভের নিশ্চয়তা থাকায় প্রতি বছরই বাড়ছে চাষের এলাকা। শীত পড়তেই শুরু হয়েছে ডালিয়া, ক্যালেন্ডুলা, অ্যাস্টার, বেবিডল, কনফ্লাওয়ার, বিগুনিয়া, কসমস, বাহারি গোলাপ, গাঁদা-সহ দেড়শোরও বেশি প্রজাতির ফুলের চাষ। এতে কর্মসংস্থানও হচ্ছে কয়েক হাজার বেকার যুবকের।
চাষিরা জানান, দু’দশক আগেও এই এলাকায় চাষের ছবি ছিল অন্য রকম। গতানুগতিক সব্জি বা ধান, পাটের চাষ করতেন চাষিরা। ফসল ঘরে উঠলেও লাভের নিশ্চয়তা ছিল না। বরং প্রায়ই অভাবি বিক্রি করে পরের মরসুমের চাষের কাজ করতে গিয়ে দেনায় জড়িয়ে পড়তেন চাষিরা। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরেই ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে। পূর্বস্থলী ও পলাশপুলির বেশ কয়েক জন চাষি প্রথমে ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের জমিতে ফুল ও ফলের চারা তৈরি করে। তাঁদের দেখে উৎসাহিত হন অন্যেরাও।
এই মরসুমে এই তিন এলাকার মাঠে গেলেই দেখা যাবে, জোর কদমে চলছে চারা তৈরির কাজ। জমি থেকে ছোট ছোট চারা তুলে নিয়ে কাগজের প্যাকেটে মুড়ছেন চাষিরা। পাইকারি বিক্রেতাদের হাতে নির্দিষ্ট মূল্যে সেই চারা তুলে দিচ্ছেন জমির মালিকেরা। হরেক রকম ফুলের চারা কিনতে আসানসোল, দুর্গাপুর, পাণ্ডুয়া, হাওড়ার ব্যবসায়ীরা তো আসছেনই। পাশাপাশি আসছেন ভিন্ রাজ্যের ব্যবসায়ীরাও। এমন কী এলাকার বিভিন্ন প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা এসেও পছন্দ করে ফুলের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ঝাঁকা ভর্তি চারা নিয়ে পূর্বস্থলী স্টেশনে দাঁড়িয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের যুবক রমেশ রাজোয়াড়। তিনি বলেন, “গত ছ’বছর ধরে শীতে পলাশপুলি গ্রাম থেকে চারা নিয়ে যাই। জেলার নানা জায়গায় বিক্রি করি। এখানকার চারার দাম অনেক কম। ক্রেতাদেরও চাহিদা রয়েছে।” অপর এক ব্যবসায়ী, আসানসোলের রমেন অগ্রবালের কথায়, “শীতের ফুল লোকে বেশি ভালবাসে। পূর্বস্থলী থেকে ফুলের চারা নিয়ে গেলে ব্যবসা খারাপ হয় না। আমার মতো কয়েক হাজার ছোট ব্যবসায়ী এখান থেকে ফুলের চারা নিয়ে গিয়ে রাজ্যের নানা জায়গায় বিক্রি করে।”
ফুলচাষিরা জানান, প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে চাষের জন্য জমি তৈরি করা হয়। চারার জন্য কিছু ‘মা বীজ’ নিজেরাই তৈরি করেন তাঁরা। হাওড়া বা কলকাতার নামী বাজার থেকে কিছু চারা কিনেও আনা হয়। নভেম্বরের শুরু থেকেই বিক্রি হতে শুরু করে চারাগুলি। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে শীতের ফুল চারা বিক্রি। মার্চ-এপ্রিলে গরম পড়তেই বেলি, জুঁই, পাতাবাহারের চারা বিক্রি শুরু হয়। বর্ষা নামার আগেই অবশ্য চারা তৈরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সময়ে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লেবু, নারকেল-সহ নানা ফলের চারা বিক্রি করা হয়। এমনই এক চাষি হরেকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “এবার তিন বিঘে জমিতে চারা তৈরি করেছি। আগে সব্জির চাষ করতাম। তাতে লাভের নিশ্চয়তা ছিল না। এখন চাষের আগেই জানি, লাভ নিশ্চিত। তাঁর দাবি, শীতের মরসুমে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাভ হয়। ফুলচাষি পরিমল ধারা, সজল ধারা, কৃষ্ণ ধারাদের বক্তব্য, “অন্য চাষের তুলনায় এই চাষে পরিশ্রম বেশি। তবে লাভ নিশ্চিত বলে পুরনো চাষে ফিরতে চায় না কেউ।” তবে চাষিদের আক্ষেপ, বছর তিনেক আগে অবশ্য উদ্যানপালন দফতরের সাহায্যে সামান্য কিছু চাষের সরঞ্জাম মিলেছিল। কিন্তু তার পরে ওই দফতর থেকে তেমন কোনও সহায়তা পাননি তাঁরা। তাঁদের আরও ক্ষোভ, বিক্রির জন্য এলাকায় কোনও বাজার না থাকায় তাঁদের বহিরাগত ব্যবসায়ীদের দিকেই নির্ভর করে থাকতে হয়।
চাষিদের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছে, পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতি। ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মানসী দাসের আশ্বাস, “খুব তাড়াতাড়ি চাষিদের সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে জেলা উদ্যানপালন দফতরকে।” ওই তিন এলাকার বিকল্প চাষ হিসেবে ফুল ও ফলের চারা তৈরির জনপ্রিয়তার কথা স্বীকার করেছে কৃষি দফতরও। মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “প্রতি বার ওই এলাকাগুলিতে ফুল ও ফল চাষের জায়গা বাড়ছে। পাশাপাশি ওই ব্লকের আরও কয়েকটি এলাকায় বাওকুলও চাষ হচ্ছে।”
—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.