ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের ঝড় থামার মুখে। তবে আমি যদি ভারতীয় দলের ক্রিকেটার হতাম, সিরিজ হারের ক্ষত শুকোতে দিতাম না। কারণ, এটা কোনও সাধারণ সিরিজ হার নয়। বরং একটা বার্তা যে, ভবিষ্যতে টেস্টে সমীহ পাওয়ার জন্য ভারতের এখন ঠিক কী কী করা দরকার।
যেমন ভারতীয় দলে ছটফটে, দ্রুতগামী কিছু ছেলেকে নেওয়া দরকার। নিষ্ঠুর সত্য হল, ভারতীয় দলে তরুণ ফাস্ট বোলার দরকার। জাহির খানের যা দেওয়ার সব দিয়ে দিয়েছে। ভারতের এখন জেমস অ্যান্ডারসনের মতো কাউকে দরকার।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, ওদের একজন স্পিনার কোচেরও দরকার। ইংল্যান্ডের যেমন মুস্তাক আহমেদ আছে। ভারতের এমন একজনকে দরকার যে কি না স্পিন বোলিংটা জানে। অশ্বিনকে যে কি না বলতে পারবে, তুমি বলটা ছাড়ার সময় শরীরকে ঠিক মতো ব্যবহার করছ না। অথবা বল ডেলিভারির মুহূর্তে অশ্বিনের কাঁধটা আরও ঘোরানো দরকার। তবে যার যেটা প্রাপ্য সম্মান তাকে সেটা দেওয়া উচিত। টেস্টে অশ্বিন এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা আট নম্বর ব্যাটসম্যান। আর এটা যে কোনও টিমের একটা বিরাট শক্তি যে, তাদের একজন বোলার যার ব্যাটের হাতও বেশ ভাল। কিন্তু তখনই, যখন সেই বোলার উইকেটও পায়। আর পীযূষ চাওলা নিয়ে কিছু বলা মানে আমার কাছে মজার ব্যাপার। ওর বর্তমান ফর্মে ও কোনও দ্বিতীয় সারির দলে ঢোকারও যোগ্য নয়। হ্যাঁ, প্রজ্ঞান ওঝা ভাল স্পিনার। তা সত্ত্বেও যে উইকেট স্পিনারদের সাহায্য করেছে, সেই পিচে ভারতীয় স্পিন বোলিং এক রকম হাওয়া হয়ে গিয়েছে। সহজ কারণ, ইংল্যান্ডের স্পিনার জুটি পানেসর-সোয়ান বিপক্ষের চেয়ে কয়েকশো মাইল এগিয়ে ছিল। ভারতের সামনে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর আছে। এবং দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার সময় ওদের একটা ভাল বোলিং আক্রমণ তৈরি রাখতে হবে। বিশেষ করে দু’জন বোলার যারা ঘণ্টায় ১৪০ বা তার বেশিতে বল করতে পারে।
সিরিজের আগে প্রস্তুতিতেও ভারতকে টেক্কা দিয়েছে ইংল্যান্ড। ভারত সফরের বরাবরের অসুবিধের দিকগুলো নিয়ে কোনও গাঁইগুই করেনি। আর এই অজুহাত না দেওয়ার প্রবণতা থেকেই কুকদের মনোভাবে কাঠিন্য ভাবটা এসেছে এই সিরিজে। অন্য দিকে ভারতীয় দল বিশেষ করে আমদাবাদ টেস্টে জেতার পর আত্মতুষ্টিতে ভুগেছে।
এই সিরিজে ভারতের তরুণরা যে কিছুই ভাল করেনি তা নয়। কোহলি আর পূজারা চমৎকার ব্যাট। কিন্তু কোহলির মাথা ঠান্ডা রাখতে শেখাও দরকার। আবার কোনও ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করলে আপনারা তাকে প্রশংসায় প্রশংসায় আকাশে তুলে দেন। একেবারে ভুলে যান যে, সেই ব্যাটসম্যান টানা পাঁচটা ইনিংসে ফ্লপও করেছে। সোজা কথায়, ভারতের এখন দরকার দ্রাবিড়ের মতো নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ের। আর একটা ক্ষতের জায়গা হল গম্ভীরের বর্তমান ব্যাটিং। কেউ বলতে পারবেন, ও কবে শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি করেছে? খুব বেশি ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টি খেলা কি ওর ফুটওয়ার্ক আর ধৈর্যে প্রভাব ফেলছে? আমার তাই মনে হয়। কারণ, গম্ভীর এখন টেস্টেও যেন প্রতি বলেই রানের জন্য ব্যাট করে। ওর উচিত দু’বছর আগে কী ভাবে ব্যাট করত সেটা ভাবা।
এবং সব শেষে এমএস ধোনি নিয়ে দু-চারটে কথা। তরুণদের জন্য ও দুর্দান্ত ক্যাপ্টেন। ওর ব্যাটিং, কিপিংও আমার ভাল লাগে। কিন্তু ও ট্যাকটিসিয়ান নয়। নাগপুরে তৃতীয় আর চতুর্থ দিনে ও ম্যাচটা পরিষ্কার নিজের হাত থেকে যেতে দিয়েছে। অতএব ধোনিকে হয় শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে, না হলে অন্য কাউকে অধিনায়কের আসনে বসাতে হবে। যা-ই হোক, ভারতের এ বার পছন্দের ফর্ম্যাট শুরু হচ্ছে। আশা করছি, টেস্ট সিরিজের বিপর্যয় এ বার ধোনিরা কাটিয়ে উঠতে পারবে। |