যে আশঙ্কা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করছেন, এ দিন সেটাই নিরসনের চেষ্টা করলেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। এক সময় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। সেই কৌশিকবাবু বুধবার আইআইএম-কলকাতার এক অনুষ্ঠানে জানালেন, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে চাষি এবং ছোট উৎপাদক অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
ছোট চাষি এবং ছোট বিক্রেতাদের স্বার্থরক্ষার কথা বলেই মমতা এই এফডিআইয়ের বিরোধিতা করছেন। মাস পাঁচেক আগে কলকাতায় এসে কৌশিকবাবু আশাপ্রকাশ করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝালে তিনি নিশ্চয়ই বিষয়টি বুঝবেন। কিন্তু বাস্তব হল, এখনও এ নিয়ে অনড় মমতা। এ দিন অবশ্য এই প্রসঙ্গে সরাসরি পশ্চিমবঙ্গ বা মমতাকে নিয়ে কিছু বলেননি কৌশিকবাবু। তবে যা বলেছেন, তা যেন মমতার আশঙ্কারই উত্তর।
কৌশিকবাবু স্পষ্ট ভাবে এফডিআই নীতির ভাল-খারাপ দু’দিকের কথাই উল্লেখ করেন। বলেন, “প্রতিটি নীতিরই ভাল-খারাপ দিক থাকে। এ ক্ষেত্রেও কিছু খারাপ দিক রয়েছে। এর ফলে সাধারণ ক্রেতার যে খুব বেশি লাভ হবে তা নয়। কিন্তু চাষি এবং ছোট উৎপাদকেরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। তাই সবটাই খতিয়ে দেখতে হবে।” |
আইআইএম-কলকাতার অনুষ্ঠানে কৌশিক বসু। ছবি: পি টি আই |
কী ভাবে? কৌশিকবাবুর বক্তব্য, এই দুই পক্ষেরই নিজেদের বাজার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। চাষি তো বটেই, ছোট উৎপাদকের কাছ থেকেও মাল কিনবে বহুজাতিক সংস্থাগুলি। ফলে দু’পক্ষের ব্যবসার পরিধিও বাড়বে। এর ফলে তাদের যেমন লাভ হবে, তেমনই দেশের আর্থিক বিকাশের ক্ষেত্রেও তার সুফল মিলবে।
উন্নয়নের পালে ফের হাওয়া আনতে কেন্দ্র সংস্কারের পথে হাঁটতে শুরু করলেও প্রতিপদে বাধার মুখে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে কায়েমি স্বার্থের অভিযোগও উঠছে। এ দিন কৌশিকবাবুর বক্তৃতার বিষয়টিও ছিল ‘ভারতের আর্থিক সংস্কার: বাধা ও ভবিষ্যৎ’। কৌশিকবাবু, যিনি এই সংস্কার যজ্ঞের অন্যতম প্রবক্তা, তাঁর মতে, কায়েমি স্বার্থটা সমস্যা নয়। মূল প্রতিবন্ধকতা হল চিন্তাশক্তির বাধা। তাঁর দাবি, চিন্তাশক্তির স্থবিরতাই আর্থিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে বাধার সৃষ্টি করে। সেই সূত্রেই এসেছে বহুপণ্যের খুচরো বিপণনে বিদেশি লগ্নির দরজা খোলার প্রসঙ্গ। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তন অধ্যাপকের মতে, ওই সিদ্ধান্ত দেশের পক্ষে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই নীতি ঘিরে যে সংশয় রয়েছে, তার উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে বুঝিয়ে দেন, সংশয় থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু নীতি রূপায়িত হলে লাভের অংশ অনেক বেশি হবে।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ কিছু রাজ্য এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধী। কৌশিকবাবুর মতে, এই নীতি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত রাজ্যগুলির হাতে ছেড়ে দিয়ে ভালই হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যদি দেখা যায়, কিছু রাজ্যে এই নীতির সুফল মিলছে, তা হলে অন্য রাজ্যগুলিও সেই পথে সামিল হবে বলে তাঁর আশা। আবার যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে তা থেকে শিক্ষাও নেওয়া যাবে। তাঁর কথায়, “এটা একটা পরীক্ষাগারের মতো।”
গরিবদের সরাসরি ভর্তুকি দেওয়ার পক্ষেও এ দিন সওয়াল করেন তিনি। কৌশিকবাবুর বক্তব্য, এখন যে ভাবে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তাতে অর্থের বড়সড় অপচয় ঘটে। কিন্তু সেই সরাসরি ভতুর্কির টাকা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো কি তৈরি? পরিকাঠামো গড়তে সময় লাগার কথা মানলেও তাঁর দাবি, আপাতত যে পরিকাঠামোয় বিপিএল-এর ভর্তুকি দেওয়া হয়, তা ব্যবহার করেই নতুন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। পরে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়াতেও আশাবাদী তিনি। |