পাশের গ্রামের দুই বাসিন্দাকে খুনের দায়ে ১৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক। বুধবার এই সাজা শোনান রামপুরহাট ফাস্ট ট্র্যাক দ্বিতীয় আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক কুমকুম সিংহ। সাজাপ্রাপ্তদের সকলেরই বাড়ি ময়ূরেশ্বর থানার হাজিপুর গ্রামে।
সাজাপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে অস্ত্র নিয়ে জমায়েত, ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত ও গুরুতর জখম করা, প্রাণনাশের চেষ্টা, খুনের এবং আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমাবাজি করার অভিযোগ ছিল। সোমবার আদালতে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মামলায় মোট ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। মামলা শুরু হওয়ার দীর্ঘদিন আগে দু’জনের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি আরও এক জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া মামলায় অভিযুক্ত এক জন নাবালকের বিরুদ্ধে বিচার চলছে সিউড়ি জুভেনাইল আদালতে। সোমবার আট জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেন বিচারক। বুধবার যাদের সাজা হয় তারা হল-- আবদুল করিম, মোর্তাজা শেখ, পটল শেখ, মনি শেখ, উজ্জ্বল শেখ, নজু শেখ, জিসামউদ্দিন গলু ওরফে গোলেমা শেখ, খন্দেকার মল্লিক, বাদল শেখ, শ্যামল ওরফে সামিউল্লা শেখ, চাঁদ মহম্মদ, নুরুল হুদা, নাজির মল্লিক ও দুলাল মণ্ডল। |
মামলার সরকারি আইনজীবী উৎপল মুখোপধ্যায় জানান, ১৯৯২ সালের ২২ মে দুপুর ১টা নাগাদ ময়ূরেশ্বর থানার পাইকপাড়া মৌজায় গণগড়িয়া পুকুরপাড়ে একটি বটগাছে খড় দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় পার্শ্ববর্তী হাজিপুরগ্রমের কয়েক জন রাখাল। সেই সময় কয়েক জন গ্রামবাসী পাইকপাড়া গ্রামের মাঠে কাজ করছিলেন। তাঁরা প্রতিবাদ করেন এবং পুকুরের জল দিয়ে বটগাছের আগুন নিভিয়ে দেন। তখন হাজিপুর গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা বল্লম, তলোয়ার, পিস্তল, বোমা, লাঠি, টাঙ্গি নিয়ে পাইকপাড়া মাঠে কাজ করা লোকেদের ওপর চড়াও হয়। ঘটনায় কিঙ্কর দাস বৈরাগ্য নামে এক প্রৌঢ গুরুতর জখম হয়েছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল দয়াল ঘোষ নামে এক যুবকের। ওই ঘটনায় পাইকপাড়া গ্রামের ১৫ জন জখম হন।
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং জখমদের মধ্যে এক জন অতুল সাহার দাবি, “ওই বটগাছটি গ্রামের একজন লাগিয়েছিলেন। গ্রামের সবাই ওই বটগাছটিকে পুজো করতেন। ওই বটগাছে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হলে গ্রামের মানুষ প্রতিবাদ করেন। এক নাবালক রাখাল সেটা নিয়ে অপপ্রচার চালায় যে, পাইকপাড়া গ্রামের লোকেরা তাদের মারধর করছে। তার পরেই হাজিপুর গ্রামের বাসিন্দারা আমাদের ওপর চড়াও হয়।” এ দিন সাজা শোনার জন্য এসেছিলেন হাজিপুর ও আশপাশের গ্রাম থেকে প্রচুর লোকজন। ধারায় বিচারক প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। তাদের মধ্যে নজু শেখ ও চাঁদ মহম্মদকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। বিচারক ১৪৮ ধারায় প্রত্যেকের ৩ বছর, ৩২৩ ধারায় প্রত্যেকের ১ বছর, ৩২৬ ধারায় প্রত্যেকের ১০ বছর, ৩০৩ ধারায় প্রত্যেকের ১০ বছর এবং ৯ডি২ ধারায় প্রত্যেকের ২ বছর কারাদণ্ড দেন। সব কটি সাজা একসঙ্গে চলবে বলে জানান সরকারি আইনজীবী। |