‘কুকুর সামলাও’ রব উঠেছে বিমানবন্দরে
ঘাড় ঘুরিয়ে ককপিটের কাচের ভিতর থেকে চালক দেখলেন, বিমানের পাশ দিয়ে দৌড়চ্ছে কুকুর। রাতের কলকাতায় গাড়ি চালানোর সময়ে এ অভিজ্ঞতা চালকদের কাছে নতুন নয়। তা বলে বিমানবন্দরের ভিতরে বিমানের চাকা লক্ষ করে দৌড়! ঠিক এমনটাই ঘটেছে দিন চারেক আগে, কলকাতা বিমানবন্দরে।
রানওয়েতে কুকুরের আনাগোনা এই বিমানবন্দরে নতুন নয়। কোথা দিয়ে কুকুর ঢোকে, কর্তৃপক্ষের সে ধারণা আছে। গত ৯ নভেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত ন’টি এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে চলন্ত বিমানের সামনে চলে এসেছে কুকুর। সমস্যায় পড়েছে বিভিন্ন সংস্থার উড়ান। রানওয়েতে বিমানের সামনে আচমকা কুকুর চলে এলে তার পরিণতি যে কী ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা-ও জানেন কর্তৃপক্ষ। তবু দীর্ঘদিন ধরে কুকুরের এই আনাগোনায় টনক নড়েনি। সম্প্রতি একের পর এক অভিযোগ পেয়ে অবশেষে ঘুম ভেঙেছে। কুকুর তাড়ানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।
অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী
সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ১৪ ডিসেম্বরের। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর কাছে ইন্ডিগো-র একটি বিমানের চালক অভিযোগে জানান, চেন্নাই থেকে কলকাতায় নেমে বিমান নিয়ে ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে টার্মিনালের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। তখনই আচমকা দেখেন, পাশ দিয়ে দৌড়চ্ছে কুকুর। বিশাল এয়ারবাস-৩২০ বিমান। যার চাকার তলায় পড়লে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে কুকুরের দেহ। তার চেয়ে বড় কথা, ক্ষতি হবে বিমানেরও। একটি চাকার দামই প্রায় ৯০ হাজার টাকা! বিমান নিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। বিমানচালকের ওই অভিযোগ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর কাছে। তাতে নড়েচড়ে বসেছেন বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষও।
আর দশটা পাড়ায় যেমন হয়, তেমনই কলকাতা বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় মোড়া ‘অ্যাপ্রন’ এলাকায় আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুরের দল। চলে আসছে যাত্রিবাহী বাসের সামনে। কখনও মালবাহী ট্রলার, কখনও বা অফিসারের জিপের সামনে। তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে রানওয়ে থেকে দেড়শো-দুশো যাত্রী নিয়ে নামা-ওঠার সময়ে বিমানের সামনে কুকুর এসে পড়লে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে। চালক বা এটিসি-র ভুল বা যান্ত্রিক ত্রুটি নয়, কুকুরের সঙ্গে ধাক্কায় বড় দুর্ঘটনা ঘটলে দায় বর্তাবে কর্তৃপক্ষের উপরেই।
গত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ এমনই বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কলকাতা থেকে ওড়ার সময়ে শিলচরগামী এয়ার ইন্ডিয়া-র বিমানের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৭০ কিলোমিটার। ওড়ার মুহূর্তে সামান্য ঝাঁকুনি খেয়ে চালক এটিসি-কে জানান, মনে হচ্ছে কোনও প্রাণীর সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে। যদিও পরীক্ষা করে তিনি দেখেন, বিমানের কোনও ক্ষতি হয়নি। ওই বিমানটি উড়ে যাওয়ার পরে রাঁচি থেকে বিমান নিয়ে কলকাতায় নেমেই জেট-এর পাইলট এটিসি-কে জানান, রানওয়ের উপরে আলফা ট্যাক্সিওয়ের কাছে একটি কুকুরের দেহ পড়ে রয়েছে। অনুমান, এয়ার ইন্ডিয়া-র সেই বিমানটি ওড়ার সময়ে পিছন দিকের অংশের ধাক্কায় মারা যায় ওই কুকুরটি।
এত দিন শোনা যেত শিয়ালের কথা। বন দফতরের সহযোগিতায় তাদের ধরার জন্য খাঁচাও রাখা হয়েছে বিমানবন্দরে। সাম্প্রতিক কালে শিয়ালের উপদ্রব কমে গিয়েছে। খাঁচা ফাঁকাই পড়ে থাকে। পাখির ধাক্কায় বিমানের ইঞ্জিনের ক্ষতি হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। সম্প্রতি মৌমাছির ঝাঁকও আক্রমণ শানিয়েছে। এ বার পালা কুকুরের। শিয়ালের বাসা ছিল রানওয়ের পূর্ব প্রান্তের জঙ্গল এলাকায়। সেখান থেকে তারা ছিটকে চলে আসত রানওয়ের উপরে। এ বার কুকুরের উপদ্রব রানওয়ের পশ্চিম দিকে, যেখানে সব চেয়ে বেশি গাড়ি-বাস-বিমান চলাচল করে।
বিমানবন্দরের মোট আটটি গেট রয়েছে। অভিযোগ, সেখান দিয়ে গাড়ি ঢোকা-বেরোনোর সময়ে সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়ছে কুকুর। সিআইএসএফ জওয়ানেরা গেট পাহারা দেন। কিন্তু, কুকুর আটকানো তাঁদের কাজ নয়। অনেক সময়ে তাঁদের চোখ এড়িয়েই ঢুকে পড়ছে কুকুর। দ্বিতীয়ত, কুকুর ঢুকে পর্যাপ্ত উচ্ছিষ্ট খাবার পেয়ে যাচ্ছে বিমানবন্দরের ভিতরে। বিমানে যাত্রীদের উচ্ছিষ্ট, কর্তৃপক্ষ-বিমানসংস্থার কর্মীদের ক্যান্টিনের উচ্ছিষ্ট থেকে তাদের বেশ পেট ভরে যাচ্ছে। ফলে, বাইরে থেকে ভিতরে অনুপ্রবেশের প্রবণতাও বেড়ে গিয়েছে।
বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ভ্যান নিয়ে এলেও একসঙ্গে বেশি কুকুর ধরতে পারছে না।” গত ২৯ নভেম্বর মাত্র ছ’টি কুকুর ধরে নিয়ে যায় তারা। ওই সংস্থার এক কর্তা বলেন, “এত বিশাল এলাকায় আমাদের যেখানে হাত ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, আমরা সেখানেই যাই। যা পাই ধরে নিয়ে আসি।”
প্রতি বার পরিদর্শনে তিন হাজার টাকা ছাড়াও কুকুর প্রতি এক হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে ওই সংস্থাকে। বিমানবন্দরের এক অফিসার বলেন, “কুকুর ধরতে এত খরচ হয়ে গেল। গত মাসে একটা লেজ-কাটা কুকুর ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে ইদানীং আবার কুকুরদের ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.