খেয়ালি শীতে বাড়ছে রোগ, ঠান্ডা দু’দিন দূরে
খনও ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টি হচ্ছে ৩৪.২ মিলিমিটার। কখনও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নামছে ১৪ ডিগ্রির নীচে। কখনও তা এক লাফে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা এখন স্বাভাবিকের ৭ ডিগ্রি বেশি।
তা হলে কলকাতায় শীত পড়বে কবে? কাল, রবিবার থেকে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করবে বলে আশ্বাস আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের। তাঁর পূর্বাভাস, “সোমবার থেকে উত্তুরে হাওয়া ঢুকে পড়বে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায়। ফিরে আসবে শীতের অনুভূতি।” অর্থাৎ, এই অস্বস্তিকর আবহাওয়া কলকাতাবাসীকে সহ্য করতে হবে আরও দু’দিন। তার পরে পারদ নামবে ১৪ ডিগ্রির নীচে।
এ দিকে, ডিসেম্বরের প্রথম পক্ষে আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় কিছুটা বিস্মিত আবহবিদেরা। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ওই ১৫ দিনের মধ্যে ১১ দিনই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। তার মধ্যে গত ছ’দিনে কলকাতাবাসী সূর্যের মুখ দেখেছেন মাত্র কয়েক বার। আর ওই মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া সক্রিয় করে তুলেছে নানা রোগ-জীবাণু এবং তাদের বাহকদের।
শীতের কলকাতায় তাই হাজির ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, আন্ত্রিকও। সঙ্গে গলা ব্যথা, সর্দি-জ্বর। তার মধ্যে কোনওটা আবার ভাইরাস-ঘটিত, কোনওটা ব্যাক্টেরিয়া বা পরজীবীর সংক্রমণ। সকালের ঘন কুয়াশায় অনেকে আবার শ্বাসকষ্টেও ভুগছেন। পুরোপুরি শীত না পড়লে, আবহাওয়া স্থিতিশীল না হলে ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাসের প্রকোপ কমবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন আবহবিদেরা।
শুধু মানুষের শরীরের উপরেই নয়, আবহাওয়ার এই খামখয়ালিপনায় বাঙালির হেঁশেলেও টান পড়েছে বেশ। কারণ, বাজারে শীতের সব্জির দাম চড়া। সব্জি-বিক্রেতা ও কৃষক— দু’পক্ষই বলছেন, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, হঠাৎ তুমুল বৃষ্টিতে শীতের সব্জির ফলন আশানুরূপ হচ্ছে না। শিম, বিন, লাউ, কুমড়ো, টোম্যাটো গাছে পোকা হচ্ছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি আকারে বাড়ছে না। খামখেয়ালি আবহাওয়ায় টান পড়েছে মাছের জোগানেও।
ডিসেম্বরের এ সময়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগেও ২১-২২ ডিগ্রিতে ঘোরাফেরা করেছে। তার জন্য দায়ী বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয়। সে ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়লেও এ ভাবে ঘন কুয়াশা পড়ে না, কিংবা বৃষ্টি হয় না। বঙ্গোপসাগরে এ বারও তৈরি হয়েছে উচ্চচাপ বলয়। কিন্তু সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়ার জন্য এ বার মূলত দায়ী পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। ডিসেম্বর মাসের এই সময়ে কলকাতা বা দক্ষিণবঙ্গে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কিন্তু অনভিপ্রেত। এক দিনে ৩৪.২ মিলিমিটারের বৃষ্টি, ভোরের কুয়াশা কিংবা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মূলে ওই অনাহূত অতিথি।
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে গোকুলবাবু বলেন, “এ রাজ্যে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আসে ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথমে। এ বার তা এসেছে বহু আগে। তাতেই আবহাওয়ার এ পরিবর্তন।” গোকুলবাবু বলেন, “শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, কাশ্মীর-হিমাচল প্রদেশেও এ বার পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এসেছে অনেক আগে। তাই সেখানে অনেক আগেই তুষারপাত শুরু হয়ে গিয়েছে। উত্তর ভারতের অন্যত্র বৃষ্টি হচ্ছে। তাপমাত্রা নামছে হুহু করে। সেই ঝঞ্ঝাই চলে এসেছে পূর্ব ভারতে।” রাজ্যের উপকূল অঞ্চলে ঝঞ্ঝার সঙ্গে জোট বেঁধেছে বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয়। ফলে আবহাওয়ার চরিত্র অনেক বদলে গিয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, গত ১০ বছরে ডিসেম্বরের প্রথম পক্ষকালে কখনও ১২ ঘণ্টায় ৩৪ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়নি। তার আগেও হয়েছে কি না সন্দেহ। ২০০৯ এবং ২০১০ সালে ডিসেম্বরে এক দিন ১৬ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছে। তা-ও শেষের দিকে। কিন্তু ডিসেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে এমনটা হওয়া যে অস্বাভাবিক, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন আবহবিদেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.