ছিঁড়ে গেল বন্ধন, কেঁদে ফেললেন অমলাশঙ্কর
বুর সঙ্গে পরিচয় প্যারিসে। এক রবিবার। ওদের বাড়ি গিয়ে দেখি পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ভলিবল খেলছে। পাঞ্জাবিটা পায়জামার মধ্যে গোঁজা। ও তখন সাড়ে দশ। স্মৃতিচারণ করছিলেন অমলাশঙ্কর। “আমি সাড়ে এগারো। আমাকে দেখে তড়িঘড়ি পাঞ্জাবিটা নামিয়ে নিল।”
’৩১-এর জুলাইয়ে প্যারিসে প্রথম পরিচয় রবিশঙ্কর-অমলাশঙ্করের।
“সে যাত্রায় প্রায় দেড় বছর ছিলাম শঙ্কর পরিবারে, রবুর মা হেমাঙ্গিনী দেবীর তত্ত্বাবধানে। রবুর সঙ্গে সেই যে বন্ধন, এ বার ছিঁড়ে গেল” কেঁদে ফেললেন তিনি।
স্মৃতির টুকরো টুকরো কোলাজ দিয়ে দক্ষিণ কলকাতায় ১১তলার ফ্ল্যাটে বসে বর্ষীয়ান নৃত্যশিল্পী বলছিলেন ‘রবু’-র কথা। “গোড়ায় ও গান-বাজনায় মজেনি। ‘লঙ্কাদহন’ পালায় ও হত হনুমান। ভিল লোকনৃত্যে হত বুড়ো। তিনের দশকের মাঝপর্বে ঝুঁকে পড়ল গান-বাজনার দিকে। পুরোদস্তুর সুরের সাগরে ভেসে গেল ১৯৩৭-এ ওস্তাদ আলাউদ্দিনের কাছে যাওয়ার পর।”
নিজের বাড়িতে স্মৃতিচারণায় অমলাশঙ্কর।—নিজস্ব চিত্র
রবিশঙ্করের বাবা শ্যামশঙ্কর চৌধুরী ছিলেন একাধারে সংস্কৃত পণ্ডিত এবং আইনজীবী। অমলাশঙ্কর জানান, প্যারিস-প্রবাসে শ্যামশঙ্কর গঠনমূলক বই পড়ার পরামর্শ দিতেন। যদিও তাঁরা কিছুক্ষণ বই খুলে থাকার পরই চলে যেতেন মুখরোচক খাবারের লোভে। কখনও সদ্য দেখা পশ্চিমী নাচের অনুকরণ করতেন। বললেন, “মঞ্চে দেখেছিলাম সঙ্গীতের মূর্চ্ছনার মাঝে একটি মেয়ের হাত-পা ধরে দুই শিল্পী নেচেছিলেন। মেয়ে পাব কোথায়? একটা বালিশকে মেয়ে ভেবে দু’দিক ধরে ও রকম ছন্দে নাচার চেষ্টা করতাম। রবু ছিল আমার প্রাণের বন্ধু।”
স্মৃতির সরণি বেয়ে হরেক ঘটনা, দুঃখ-আনন্দ খেই হারিয়ে ফেলছিলেন অমলাশঙ্কর। বললেন, “জানেন, অন্নপূর্ণার সঙ্গে রবুর বিয়েতে আমি নিজের হাতে সাজিয়েছিলাম অন্নপূর্ণাকে।”
কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। স্মৃতি বিদ্রোহ করছে। তার মাঝেই অ্যালবামের পাতা খুলে দেখালেন দৈনিকে প্রকাশিত নানা ক্লিপিংস। ২০০২-এর ২২ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করছেন অমলাশঙ্কর। পিছনে নৃত্যরত উদয়শঙ্করের ছবি। পাশে মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, রবিশঙ্কর ও ভূপেন হাজরিকা। একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রচ্ছদ-নিবন্ধে প্রায় সাত দশক আগের এক দুর্লভ ছবি। নৃত্যের তালে এক সঙ্গে রবিশঙ্কর-অমলাশঙ্কর। ছবিতে হাত বুলিয়ে চলেছেন। চোখে জল।
ঠিক যেমন চোখে জল শঙ্কর পরিবারের আরেক জনের। অমলাশঙ্করের পুত্রবধূ তনুশ্রীশঙ্কর। বললেন, “বিয়ের পর থেকেই টেনশনে থাকতাম। এত নামী শ্বশুরমশাই। কখন কী ভুল করে ফেলি! উনি কিন্তু কাছে টেনে নিয়েছিলেন। আমাদের সম্পর্কটা ঠিক শ্বশুর-বউমার মতো ছিল না।”
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দিল্লিতে তনুশ্রীশঙ্করের নাচের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন রবিশঙ্কর। তনুশ্রী বললেন, “নাচ দেখে কাকা একটাই শব্দ বলেছিলেন, ‘সুপার্ব’। তার পর মাথায় হাতটা রেখেছিলেন।” কলকাতায় একাধিক বার তাঁদের পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে এসেছেন রবিশঙ্কর। বাড়িতে রান্না করা বাঙালি খাবার খেয়েছেন তারিয়ে তারিয়ে। তনুশ্রীশঙ্কর জানালেন, কলকাতায় এসে বালিগঞ্জ পার্ক রোডে বন্ধুর বাড়িতে উঠতেন। সেখানেও কাকার জন্য মাছের নানা পদ রান্না করে নিয়ে যেতেন তিনি। তাঁর কথায়, “খেতে জানতেন। ভাল রান্নার কদরও করতেন। শিল্পী সত্তার পাশাপাশি আদ্যোপান্ত একটা পারিবারিক মানুষকে আমরা পেয়েছি। এমন সৌভাগ্য ক’জনের?”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.