টিফিন-খরচে অর্থাভাব যন্ত্র সারানোয়
টাকা নেই। তাই জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের প্রায় কোটি টাকা মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। অথচ একই জেলায় স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন শোভাযাত্রা, বৈঠকের টিফিনে বছরে খরচ হয়ে যায় লক্ষাধিক টাকা। গত কয়েক মাসে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগের উদ্বোধন, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠক, শোভাযাত্রার টিফিনের প্যাকেটে সরকারি হিসেবে খরচ হয়েছে অন্তত ১ লক্ষ টাকা। গত সেপ্টেম্বর মাসে লাটাগুড়িতে রিসর্ট ভাড়া করে ‘নিশ্চয় যান প্রকল্প’-এর একটি বৈঠকেই সরকারি তহবিল থেকে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবই জানাচ্ছে, টিফিনের প্যাকেট বাবদ এই খরচেই সারিয়ে তোলা যেত ৭টি ইসিজি মেশিন, ২০টি রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, স্টেরিলাইজার, অটোক্লেভ, ডায়াথার্মির মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র। ব্যবহার করা যেত দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এন্ডোস্কোপি মেশিনটিও। মাত্র একটি যন্ত্র দিয়ে সদর হাসপাতালে ইসিজির কাজ করা হয়। সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে গরিব রোগীদের বাইরে থেকে বেশি টাকা দিয়ে ইসিজি করাতে হয়। একই ভাবে সদর হাসপাতালের আইটিইউতে একটি ভেন্টিলেটর অকেজো হয়ে থাকায় মস্তিষ্কে সংক্রমণে আক্রান্ত বহু গরিব রোগীকে ছুটতে হয় বেসরকারি নার্সিংহোমে। যার খরচ হয় হাসপাতালের তুলনায় অন্তত চার গুণ। অথচ এন্ডোস্কপি থেকে ইসিজি সব পরিষেবারই সুযোগ ছিল জেলা হাসপাতালে।
কী হাল যন্ত্রগুলির? শুধুমাত্র তার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাস ছয়েক আগে কেনা দুটি ইসিজি যন্ত্র বন্ধ হয়ে রয়েছে। পাঁচ হাজার টাকা খরচ করলেই চালু করা যাবে মেশিন দুটি। বিষয়টি জানানো হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে। কবে টাকা মঞ্জুর হবে অথবা রাজ্য থেকে তার কিনে পাঠানো হবে তার জন্য মাস দুয়েক ধরে অপেক্ষা চলছে। একই আলমারিতে পড়ে রয়েছে আরও পাঁচটি ইসিজি যন্ত্র। যেগুলিকে সারিয়ে তুললে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাখা সম্ভব। হাসপাতাল সূত্রই জানাচ্ছে, কুড়ি হাজার টাকা খরচ করলেই সেগুলি আবার সচল হবে বলে জানা গেল। একই ভাবে এন্ডোস্কোপি, ভেন্টিলেশন, স্টেরিলাইজার, ডায়াথার্মি, অটোক্লেভ, ল্যারিঙ্গোস্কোপের মতো অন্তত ১৫টি দামি যন্ত্র শুধুমাত্র ন্যূনতম মেরামতির কারণে অকেজো হয়ে রয়েছে। সদর হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “যন্ত্র সারাইয়ের জন্য যে সব সময়ে যে প্রয়োজন মতো বরাদ্দ পাওয়া যায় তা নয়। সদর হাসপাতালের ক্ষেত্রে যে সমস্যা রয়েছে তা হল, যন্ত্রগুলি মেরামতির জন্য কলকাতা, দিল্লি থেকে লোক আনতে হবে। যার ব্যয়ভার অনেক। সে কারণেই কিছু সমস্যা রয়েছে।” সদর হাসপাতাল সূত্রের খবর, যে যন্ত্রগুলি অকেজো তার বর্তমান ক্রয়মূল্য কাটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। হাসপাতালের যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের মতে অন্তত ১ লক্ষ টাকা খরচ করলেই ইসিজি, স্টেরিলাইজার, প্লাসগ্লুকোমিটার, ল্যারিঙ্গোস্কোপ, অটোক্লেভ এবং রক্তচাপ মাপার যন্ত্রগুলিকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। হাসপাতালের আইটিইউতে বিকল হয়ে থাকা ভেন্টিলেটার, এবিজির মতো যন্ত্র সারাতে লাখ দুয়েক টাকা প্রয়োজন।
পাশাপাশি, দেখে নেওয়া যাক হাসপাতালের বিভিন্ন বৈঠকের খরচ। প্রতি মাসেই হল ভাড়া করে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মাসিক পর্যালোচনা বৈঠক হয়। দিন ভর বৈঠকে চা, কফি থেকে শুরু করে দুপুরের খাবার, সব মিলিয়ে প্রতিটি মাসিক বৈঠকে শুধুমত্র টিফিন, খাবার এবং গাড়ির তেল বাবদ খরচ হয়ে যায় ১৫ হাজার টাকা। বিশ্ব এডস, জনসংখ্যা দিবসের মত বিভিন্ন দিবস উদযাপনে গড়পরতা খরচ ১০ হাজার টাকা। এক বছরে বিভিন্ন দিবস উদযাপনেই অন্তত ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। লাখ খানেক টাকা দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমাদের কিছু করার নেই। উপর থেকে যে নির্দেশ আসে তেমনই করতে হয়।”
জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার আসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী হাসপাতালের বিষয়ে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। তিনি বলেন, “হাসপাতালে কাজের মানসিকতাটাই হারিয়ে গিয়েছে। সঠিক এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে টিফিনের প্যাকেটের চেয়ে গরিবের পরিষেবার দিকে বেশি মনোযোগ দেখা যেত।” পাশাপাশি, জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিয়ে কেন যন্ত্রগুলি সারানো হচ্ছে না সেই প্রশ্নও উঠেছে। ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তরফে হাসপাতালকে জানানো হয়েছে, কোনও অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই তারা ওই সারানোর কাজ করে দিতে রাজি। প্রস্তাব পাওয়ার মাস খানেক কাটতে চললেও সদর হাসপাতাল কলেজকে অকেজো যন্ত্রের তালিকা দিতে পারেনি।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ জ্যোতির্ময় ঝম্পটি বলেন, “কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই এই যন্ত্র মেরামত করে দিতে পারে। আমরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছি। তবে আমরা এখনও কোন চূড়ান্ত তালিকা বা সম্মতি পাইনি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। হাসপাতাল কতটা এগোল খোঁজ নিচ্ছি।”
সময়ে ওষুধ না পাওয়ায় মৃত্যুর নালিশ
সময় মতো ওষুধ না পাওয়ায় তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এক যুবক। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আশিসকুমার জানা (৫২)। বাড়ি সবংয়ের মোহাড়ে। মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। আশিসবাবুর ছেলে শুভঙ্কর জানার অভিযোগ, “সময় মতো ওষুধ না পাওয়ার জন্যই বাবার মৃত্যু হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের সামনে সব ওষুধ দোকান বন্ধ ছিল। ফলে ওষুধ না পেয়ে দোকান থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি।” এ দিন ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকানের উদ্বোধন করতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মন্ত্রীর কাছেও ওই অভিযোগ জানান শুভঙ্কর। দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ শুদ্ধদন বটব্যাল বলেন, “লিখিত কোনও অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ এলে তা খতিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.