শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা
উত্তরেই ভুল, কাঠগড়ায় স্কুল সার্ভিস কমিশন
প্রতিবন্ধী পড়ুয়া স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে আগ্রহী শিক্ষক বা শিক্ষিকা কী ভাবে বিষয়টি সমাধান করবেন জানতে চাওয়া হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের ‘টেট’ (টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট) পরীক্ষায়। কিন্তু ‘তাকে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্রীড়ায় উৎসাহদানকারী দলের সদস্য করে দেবেন,’ এই উত্তর লিখে নম্বর পাননি পরীক্ষার্থীরা। কারণ, কমিশনের পছন্দের জবাব, ‘তাকে (প্রতিবন্ধী পড়ুয়াকে) ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফল লিপিবদ্ধ করে রাখতে বলবেন।’
প্রথমে প্রশ্নপত্র ফাঁস, দেরিতে প্রশ্ন পৌঁছনো নিয়ে এ বছরের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা ঘিরে বিতর্ক তো ছিলই। সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা জুড়েছে, এ ধরনের ‘উত্তর-বিভ্রাট’। যেখানে বিভ্রান্তির মাত্রা ব্যাকরণের ঠিক-ভুল পেরিয়ে প্রশ্নকর্তাদের সমাজচেতনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তা ছাড়া, একাধিক প্রশ্নের ‘বিতর্কিত’ জবাব, সরাসরি ভুল উত্তর বাছার মতো অভিযোগও রয়েছে কমিশনের বিরুদ্ধে। ‘ডাক্তার, নিজের রোগ সারাও’, কথাটি প্রচলিত রয়েছে ইংরেজিতে। এ বার ‘টেট’ পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে তাই নানা মহলের অনুযোগ, ‘পরীক্ষক, নিজের পরীক্ষা নাও’। কমিশনের চেয়ারম্যান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নিয়ম, স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রথম ভাগ ‘টেট’-এ বাংলা, ইংরেজি ও শিশুশিক্ষা-শিশু মনস্তত্ত্ব নিয়ে মোট তিনটি বিষয়ে ৬০ শতাংশ পেলে তবেই দ্বিতীয় ধাপে তাদের বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের খাতা দেখা হবে। কিন্তু ডিসেম্বরের গোড়ায় কমিশনের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ঠিক উত্তরের তালিকায় ৯০টির মধ্যে ১০টিরও বেশি প্রশ্নের উত্তর ভুল, এই অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষাবিদ স্বপন সরকার মনে করছেন, পরীক্ষার্থীদের পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত।
প্রতিবন্ধী পড়ুয়ার ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার প্রশ্নের কমিশন-নির্ধারিত জবাবটি কাটাছেঁড়া করা হচ্ছে নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সর্বশিক্ষা প্রকল্পের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে প্রায় ২.৮৫ লক্ষ পড়ুয়া প্রতিবন্ধকতার শিকার। প্রতিবন্ধকতার জন্য একটি শিশুও যাতে শিক্ষার পরিমণ্ডলের বাইরে না থেকে যায়, সে কথা মাথায় রেখেই সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্প ২০০১ সালে ‘কাউকে না ফেরানোর’ নীতি নিয়েছিল। তার এক দশক পরেও শিক্ষক নির্বাচনের পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে নিয়ে এ ধরনের প্রশ্নের বিতর্কিত জবাব কেন বেছে নেওয়া হচ্ছে সে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। প্রতিবন্ধীদের অধিকার-সংক্রান্ত সংগঠন ‘শ্রুতি’-র অধিকর্তা শম্পা সেনগুপ্ত আবার তুলে ধরছেন অন্য দিক। তাঁর কথায়, “কমিশনের এই উত্তরে তো বলেই দেওয়া হচ্ছে, যে সেই প্রতিবন্ধীকে খেলায় অংশগ্রহণ করতে দিয়ো না। এ ধরনের জবাব তো শিক্ষার অধিকার বিধিই ভঙ্গ করছে।”
কমিশনের উত্তরে রয়েছে আরও ‘বিভ্রাট’। ‘শ্রেণিকক্ষের অপরিহার্য অঙ্গ কী?’ এই প্রশ্নের উত্তর কমিশনের বিচারে ‘ব্ল্যাকবোর্ড’ নয়, ‘মডেল।’ যদিও শিক্ষক প্রশিক্ষণের বি এড পাঠ্যপুস্তকেই রয়েছে, ব্ল্যাকবোর্ডই অপরিহার্য। একটি প্রশ্ন ছিল, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে এক জন অনগ্রসর ছাত্রকে সাহায্যের জন্য কোন পদ্ধতির প্রয়োগ করবেন?’ অনেকেই উত্তর দিয়েছেন, ‘তার জন্য বিদ্যালয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার আয়োজন করবেন।’ কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিচারে ঠিক উত্তর হল, ‘তাকে এক ক্লাস নীচে ভর্তি হয়ে এক বছর পড়তে বলবেন।’ শিক্ষাবিদেরা বিতর্কের গন্ধ পাচ্ছেন এই জবাবেও।
শুধু তা-ই নয় বাংলায় একটি কবিতার অংশ তুলে ‘কোন গাছের উল্লেখ নেই?’ প্রশ্নে কমিশনের উত্তর, ‘বকুল গাছ’। যদিও গাছটির উল্লেখ রয়েছে কবিতার উদ্ধৃত অংশে। ইংরেজির ক্ষেত্রেও ‘দ্য জয়াস ম্যালিঙ্গেরার’ কবিতাটি উদ্ধৃত করে তিনটি প্রশ্নের উত্তর ভুল দেওয়া হয়েছে। কমিশনের এক প্রাক্তন চেয়ারম্যান বলেন, “অনেকেই আমাকে এই নিয়ে ফোন করেছেন। এই উত্তরগুলি যে ভুল দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।”
পয়লা ডিসেম্বর টেট পরীক্ষার ‘ঠিক উত্তর’ প্রকাশ করে কমিশন জানায়, নির্ধারিত পাশ নম্বর পেয়ে মোট ৬.৩০ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১.৭২ লক্ষ পাশ করেছেন। রেশমা খাতুন, মহম্মদ জামাল, তুলিকা দাস, আব্দুস সাত্তার মতো পরীক্ষার্থীরা কেউ এক নম্বর, কেউ পাঁচ নম্বরের জন্য কৃতকার্য হতে পারেননি। তাঁদের অভিযোগ, ঠিক উত্তর লিখেও তাঁরা বাদ পড়েছেন। “বিষয়টি নিয়ে এ ক’দিন বারাসতে কমিশনের দক্ষিণ-পূর্ব আঞ্চলিক দফতরে বারবার গিয়েছি। লিখিত আবেদনও দিয়েছি। কিন্তু কেউ গা করছেন না,” ক্ষোভ একাধিক অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর।
উত্তর-বিভ্রাটের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “বিশেষজ্ঞরাই প্রশ্নের উত্তর বেছে দিয়েছেন।” তাই সেখানে ভুল থাকার সম্ভাবনা নেই, এমনই মনে করছেন চিত্তরঞ্জনবাবু। তবে প্রশ্ন-উত্তরগুলি খতিয়ে দেখে মাধ্যমিক বোর্ড ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন সম্পাদক স্বপন সরকার বলেন, “অনেকগুলো উত্তরই কমিশন ভুল দিয়েছে। ভুল হতেই পারে। কমিশনের উচিত সেটা মেনে নিয়ে ভুল সংশোধন করে মূল্যায়ন করা। ভুল চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে মুশকিল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.