রেল কমিটি ভাঙার দিনে মমতাকে তোপ অধীরের
তৃণমূল ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার পরে কেন্দ্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে গড়া রেল কমিটি রাখবে না, এটা স্বাভাবিকই ছিল। মঙ্গলবার সরকারি ভাবে নোটিস দিয়ে রেল মন্ত্রক জানিয়ে দিল, মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেলের যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য ও পরিষেবা নিয়ে গড়া তিনটি কমিটি ভেঙে দেওয়া হল। রাজনীতির কারবারিরা এই পদক্ষেপকে কংগ্রেস-তৃণমূল বিচ্ছেদের প্রতীক হিসেবেই দেখছেন। তবে ভাঙার দিনে তিনটি কমিটিকেই সরাসরি এবং পরোক্ষে খোদ মমতাকেও একহাত নিয়েছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। মমতার আমলে কমিটি গড়ার প্রক্রিয়া এবং কমিটিগুলির কাজকর্মের খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন তিনি।
রেল সূত্রের খবর, রেলমন্ত্রী পাল্টে যাওয়ার পরে সাধারণত রেলের বিভিন্ন কমিটিরও পরিবর্তন হয়। এটা অনিবার্যই। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবু বলেন, “রেল যে-নীতি নিয়ে চলছে, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কমিটি গড়া দরকার। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে সে-কথা মাথায় রেখে কমিটি গঠন করা হয়নি।” তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে কিছু ব্যক্তিকে রেল কমিটির সদস্য করে তাঁদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিশেষত এমন সব ব্যক্তিকে কমিটির সদস্য করা হয়েছিল, রেল সম্পর্কে যাঁদের সম্যক ধারণা নেই। ফলে ওই তিন কমিটি আখেরে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য ও পরিষেবা বাড়াতে ইতিবাচক কোনও ভূমিকাই নিতে পারেনি বলে তোপ দেগেছেন অধীরবাবু।
রেল প্রতিমন্ত্রী এখানেই থামেননি। তিনি জানান, মমতা যাঁদের রেল কমিটির সদস্য করেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই তৃণমূল পরিবারের সদস্য। তৃণমূল এখন কেন্দ্র-বিরোধী অবস্থান নিয়ে চলছে। তাই ওই সদস্যেরা সামগ্রিক ভাবে কেন্দ্র সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চলবেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অধীরবাবু। তবে কমিটি ভাঙা নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “প্রতিমন্ত্রীর কমিটি ভাঙার ক্ষমতাই নেই। পূর্ণমন্ত্রী যদি ভাঙতেন, তা হলেও বা কথা ছিল। ওই সব কমিটি তো রেলের ভাল করার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। সেই সব কমিটি ভেঙে দিলে কী আর করা যাবে! আসলে ওঁরা রেলের ভাল চান না।”
মমতা রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে রেল মন্ত্রকের অধীনে তিনটি কমিটি গঠন করেছিলেন। যাত্রী পরিষেবা কমিটি, যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য কমিটি আর সাংস্কৃতিক কমিটি। তিনটির মধ্যে রেলের সাংস্কৃতিক কমিটির মেয়াদ ৫ ডিসেম্বরই শেষ হয়ে গিয়েছিল। যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য কমিটি ও যাত্রী পরিষেবা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী ৩১ ডিসেম্বর।
তৃণমূল কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পরে রেলের ওই তিন কমিটির অধিকাংশ সদস্যই দাবি করেছিলেন যে, তাঁরাও পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু রেলপ্রতিমন্ত্রী এ দিন বলেন, ওঁদের কেউই পদত্যাগ করেননি। বরং কমিটির সদস্য হিসেবে ওঁরা সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন।
কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কমিটিগুলি ভেঙে দেওয়া হল কেন?
রেল প্রতিমন্ত্রীর জবাব, ওঁরা যদি আগেই পদত্যাগ করতেন, কমিটি ভাঙার প্রয়োজন দেখা দিত না। রেল নতুন যাত্রী পরিষেবা কমিটি গড়ছে। রেল মন্ত্রক তাতে এমন বিশিষ্টজনদের নিয়োগ করতে চায়, রেল সম্পর্কে যাঁদের সম্যক জ্ঞান আছে।
ভেঙে দেওয়া বিভিন্ন কমিটির সদস্যেরা কী বলছেন?
মমতার তৈরি রেল যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য কমিটির সদস্য শুভাপ্রসন্ন বলেন, “এটা (ভেঙে দেওয়াটা) কোনও নতুন ব্যাপার নয়। মন্ত্রী বদল হলেই কমিটিও বদলে যাবে। এ দিন সেটারই প্রয়োগ হল মাত্র। এই নিয়ে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই।”
শুভাপ্রসন্ন জানিয়ে দেন, ইউপিএ সরকার থেকে মমতা যে-দিন বেরিয়ে আসেন, তার পরের দিন তাঁরাও সাংবাদিক বৈঠক করে রেলের ওই সব কমিটি থেকে সকলেরই সরে আসার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন।
মমতার আমলে গড়া রেলের একটি কমিটির অন্যতম সদস্য সমীর আইচ বলেন, “আমি তো আগেই ওই কমিটির সদস্য-পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছিলাম। আসলে এক দল গড়ে, অন্য এক দল ভাঙে। এটাই নিয়ম। এখানে সেটাই হয়েছে।”
আগেকার রেল সাংস্কৃতিক কমিটির অন্যতম সদস্যা ছিলেন অর্পিতা ঘোষ। এ দিন কমিটি ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানারও চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু যোগাযোগ করা যায়নি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.