বিপদ বেড়েছে উৎপাদন কমিয়ে
রুগণতার দোরগোড়ায় হলদিয়া পেট্রোকেম
বশেষে চরম আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে। রাজ্যের শো-পিস প্রকল্প হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস আইন মেনে রুগণ হতে আর মাত্র কয়েক মাস।
যে প্রকল্প গোটা রাজ্যে শিল্প-বন্যার উৎস হওয়ার কথা ছিল, শরিকি সংঘাত ও টাকার অভাবে সেটাই এখন শীর্ণতোয়া। ক্ষতির বোঝা বইতে গিয়ে সংস্থার সম্পদ অর্ধেক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে হারে ক্ষতি হচ্ছে, তাতে আর পাঁচ মাসেই ঘরের টাকায় সংসার চালাতে গিয়ে ভিটে বিক্রির দশা হবে সংস্থার।
লাভের চেষ্টা ছেড়ে ক্ষতি কমানোকে বাঁচার মন্ত্র করেই আঁকড়ে ধরার দড়ি ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেমের। উৎপাদন কমালে কাঁচামাল বাবদ খরচ কমবে, লোকসান কম হবে এই ছিল ভাবনা। কিন্তু প্লান্ট চালানোর খরচ একই থাকায় পুজোর সময় থেকে টন পিছু উৎপাদন খরচ গিয়েছে বেড়ে। তাতে লোকসানের বহর বেড়েছে আরও। এবং এতটাই যে সংস্থার ইতিহাসে চলতি মাসে প্রথম ঋণের মাসিক দায় শোধ করতে পারেনি হলদিয়া পেট্রোকেম।
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সমস্যার সমাধান দেখছেন সরকারের শেয়ার বিক্রি করার মধ্যেই। তবে বুধবার সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠক। তাই এই মুহূর্তে সংস্থাটিকে বাঁচাতে কী করা উচিত সে সব নিয়ে মঙ্গলবার শিল্পমন্ত্রী কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পুজোর আগেই সংস্থার ভাঁড়ে মা ভবানীর দশা হয়ে দাঁড়ায়। শরিকি সমস্যার কারণে আর্থিক সংস্থাগুলি ‘‘ঋণ দেব না’’ বলে বেঁকে বসে। ফলে ন্যাপথা কিনে প্লান্ট চালানোই সমস্যা হয়ে ওঠে। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্লান্টটিকে ৪০ শতাংশ ক্ষমতায় চালানো হবে। অঙ্ক একটাই। প্লান্টটি পুরোপুরি বন্ধ করে না দিয়ে কোনও রকমে সংস্থাকে টিকিয়ে রাখা।
কিন্তু পেট্রোকেমিক্যালস প্লান্টের অঙ্ক অন্য রকম। যে প্লান্ট ২১০-২২০ টনের বেশি ন্যাপথা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, সেই প্লান্টে ১১০ টন ন্যাপথা ব্যবহার করায় বেশি খরচে কম মাল তৈরি করতে শুরু করে সংস্থা। এত দিন হলদিয়ার মূল সমস্যা ছিল পুরনো ঋণের দায় সামলানো। এ বার যোগ হল বাড়তি ক্ষতির বোঝা। পুরনো দায় শোধ করার পরে মাসে যেখানে ৫০-৬০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছিল, সেটাই বেড়ে দাঁড়ায় ৭০-৮০ কোটি টাকা। গত তিন মাসে মোট ক্ষতি হয়েছে ২১০ কোটি টাকার বেশি। প্লান্ট বাঁচানোর কৌশলই হয়ে দাঁড়িয়েছে মৃত্যুবাণ।
সংস্থার ঘাড়ে ঋণের বোঝা এখন ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। সংস্থার এক সূত্রের দাবি, হলদিয়ার নিট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকার মতো। বিআইএফআর-এর নিয়ম বলছে, ক্ষতি যদি নিট সম্পদের ৫০ শতাংশ ছাড়ায় তা হলে সেই সংস্থাকে প্রায় রুগ্ণ হিসেবে ধরা হবে। সংস্থার দায় বা ঋণের বোঝা সংস্থার নিট সম্পদের সমান হয়ে গেলে তাকে রুগ্ণ বলা হবে। এই হিসেবে দেখলে হলদিয়া পেট্রোকেম প্রায় রুগ্ণতার তকমা পেয়েই গিয়েছে। রুগ্ণ তকমা পাওয়া আর মাত্র ৬০০ কোটি টাকা দূরে।
শিল্পমন্ত্রীই কবুল করছেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। তবে খাতাপত্র না দেখে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তবে এখনও সংস্থাকে ঘুরে দাঁড় করানো যায় বলে মনে করছেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। সংস্থা সূত্রের দাবি, এই মুহূর্তে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ পেলে অনেকটাই শ্বাস ফেলার জায়গা পাওয়া যাবে। এই ঋণ দৈনন্দিন খরচের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ১১০ টনের বদলে দিনে ২১০ টনের বেশি ন্যাপথা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে সমস্যার একটা সুরাহার পথ মিলবে। কারণ বেশি পণ্য তৈরি করলে টন পিছু উৎপাদনের খরচ কমবে। তাতে আজকের বাজার দর অনুযায়ী ঘরে আসবে মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তা থেকে ২৫ কোটি টাকার মতো ঋণ ও অন্যান্য দায় বাবদ খরচ মিটিয়েও হাতে থাকবে ৫ কোটি টাকা। এই অঙ্কে আর যা-ই হোক ক্ষতির বোঝা অন্তত বাড়বে না, যৎসামান্য হলেও তা কমানোর রাস্তায় হাঁটা যাবে। সংস্থার অন্যতম শরিক চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর প্রধান পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হলদিয়া পেট্রোকেম যাতে ১০০ শতাংশ উৎপাদন করতে পারে, সে জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।” কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যে সংস্থা পুজোর সময় ৩০০ কোটি টাকাই ধার পায়নি, সেই সংস্থা তিন মাসে বাদে আরও খারাপ অবস্থায় এই ৫০০ কোটি টাকা কোথা থেকে পাবে? জবাব দিতে চাননি কেউই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.