তারাবাজি
বাঘের সঙ্গে লড়াই করে

আলিপুর চিড়িয়াখানায় কোনও দিন গেছেন?

কেন? রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দেখেছি কি না জিজ্ঞাসা করছেন? আলিপুরে অন্তত চার বার গিয়েছি।

শেষ পর্যন্ত একটা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আপনাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি দিল?
(হাসি) তাই মনে হয়। আমি তখন দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। ব্রিটিশ চিত্র পরিচালক মাইকেল অ্যাপটেডকে সেখানে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়াডর্’ দেওয়া হয়েছিল। ‘লাইফ অফ পাই’ দেখে উনি আমার সঙ্গে আলাপ করলেন। আমাকে একটা ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন করেছিলেন। ‘তুমি কোন রোলটা করেছিলে?’ বললাম, পাইয়ের বাবা। শুনেই সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আমি চিনতেই পারিনি।’ উনি হয়তো বলতে চেয়েছিলেন, আমি চরিত্রের মধ্যে এতটাই ঢুকে গিয়েছিলাম যে, উনি আমাকে চিনতেই পারেননি। এটা ঠিক যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের জন্যই আমার এতটা পরিচিতি এল। জেমস ক্যামারুনের মতো ডিরেক্টরও ছবিটা দেখেছেন। কখনও আমার সঙ্গে আলাপ হলে হয়তো উনি আমাকে চিনতে পারবেন। এই তো সে দিন দুবাইয়ে কেট ব্ল্যানচেটের সঙ্গে দেখা হল। আমি ওঁর ‘ইংলিশ পেশেন্ট’ ছবি দেখা থেকেই ভীষণ মুগ্ধ। পরিচয় হওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘লাইফ অব পাই’ দেখতে আগ্রহী।

বাঘের সঙ্গে অভিনয় করতে ভয় পাননি?
সত্যিকারের বাঘের সঙ্গে আমাদের কারও একটাও সিন ছিল না। সেই বাঘটা ছিল তার ট্রেনারের সঙ্গে। তবে হ্যাঁ, অ্যাং লি আমাকে একটা অদ্ভুত কাজ দিয়েছিলেন শ্যুটিংয়ের আগে। সূরয (পাইয়ের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন)-কে কী করে চার পায়ে একটা বাঘের মতো হাঁটতে হয়, সেটা আমি ওঁকে শেখাই।

আপনি কি বাঘ-বাঘ খেলেন নাকি?
(হাসি) আরে না, না। থিয়েটার করার সময় ফিজিক্যাল অ্যাক্টিংটা শিখেছিলাম। সেটা আমি আমার ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-র ছাত্রছাত্রীদেরও শিখিয়েছি। ওদের এটা শিখতে অন্তত তিন মাস লাগে। আর সেটাই সূরয রপ্ত করে নেয় মাত্র দেড় ঘণ্টায়। যে দিন শেখাচ্ছিলাম, হঠাৎ ক্লাসের মধ্যে একটা বাঘের গর্জন শুনতে পাই। পেছনে তাকিয়ে দেখি সূরয। হুবহু বাঘের গলাটা নকল করেছে। তার সঙ্গে চলাফেরাটাও। তখনই বুঝেছিলাম যে অ্যাং তাঁর পাই-কে পেয়ে গিয়েছেন। যনি গাইড করেন, সূরয তাঁর কাছে ও নিজেকে সমর্পণ করে। তাঁকে খুব শ্রদ্ধাও করে।


হঠাৎ করে বাংলায় পরিচালকেরা নাকি আপনার পিছু ধাওয়া করছেন বলে শোনা যাচ্ছে?

(হাসি) তাই মনে হচ্ছে। আমি এক দিনে পাঁচটা বাংলা ছবি করার অফার পেয়েছিলাম! এর ফলে যেটা হয়েছে কোন কোন ডিরেক্টর যে ফোন করেছিলেন, আমি তাঁদের নাম মনে রাখতে পারিনি। ওঁদের বেশির ভাগই চেয়েছিলেন যাতে আমি জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু করি। আমার তখন কোনও সময়ই নেই। আমার মে মাস অবধি ডেট ফুল। পরপর ছ’টা ছবির কাজ করছি। এই মুহূর্তে দ্বাদশ শতকের একজন সাধুর জীবন নিয়ে একটা ছবির কাজ শেষ করলাম। জয়া শীল ঘোষের সঙ্গে একটা অসমিয়া ছবির কাজ করলাম। এই অসমিয়া ছবিটা করলাম বাইশ বছর বাদে। নাম ‘শৃঙ্খল’। আমি অসমের গোয়ালপাড়ায় মানুষ। এক সময় প্রচুর অসমিয়া ছবিও করেছি। তার পর দিল্লিতে চলে যাই। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে পড়ি। তার পর ওখানেই শিক্ষকতা করি। মঙ্গলবার থেকে আমি টেক্সাসের ডিরেক্টর রাজ অমিত কুমারের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। ছবির নাম ‘ব্লেমিশ্ড লাইট’। এছাড়াও ‘ফিস্ট অব বারাণসী’ নামে আমার আরেকটা ছবি করছি। ডিরেকটর রাজেন পটেল। এর পর আমি প্যারিসবাসী বাঙালি ডিরেক্টর পার্থ সেনগুপ্তর ‘সানরাইজ’ নামে একটা ছবি করব। পার্থ ওঁর প্রথম ছবি ‘হাওয়া আনে দে’ বানিয়ে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল মাত করে দিয়েছিলেন। পরের বছর আর একটা অসমিয়া ছবি। নাম ‘রাগ’।

এর মধ্যে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘কাচের দেওয়াল’ করছেন তো?
ছোটখাটো কিছু ব্যাপার আটকে আছে সই করার আগে। সব যদি ঠিকঠাক মিটে যায়, এ মাসেই আমি শ্যুট করতে কলকাতায় আসছি। অরিন্দম সরকারের ছবি ‘কাচের দেওয়াল’। সুচিত্রাদির মূল গল্পটা আমি পড়িনি। রূপা আমার সহ অভিনেত্রী। ‘মহাভারত’ সিরিয়ালে দ্রৌপদীর চরিত্রে ওঁর অভিনয় আমার আজও মনে আছে। যদিও ওঁর সাম্প্রতিক কোনও কাজ দেখিনি। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে আমি উৎসাহী। ছবিতে আমাকে আঠেরো বছর বয়েসের একটা ছেলের বাবার রোল করতে বলা হয়েছে।

আপনার প্রথম বাংলা ছবি ‘ইতি শ্রীকান্ত’তে তো আপনার গলা ডাব করা হয়েছিল...
তা ঠিক। গলাটা ‘ডাব’ করা হয়েছিল। ডাবিং আর্টিস্টের গলাটা আমার সঙ্গে মেলেনি। তাই সাউন্ড অফ করে ছবিটা দেখলে আজও মন্দ লাগে না। সম্প্রতি আমি একটা ঘড়ির বিজ্ঞাপন শ্যুট করেছিলাম। সময় ছিল না বলে নিজে ডাব করতে পারিনি। কিন্তু ডাবিং আর্টিস্ট এত ভাল কাজ করেছেন যে, অনেকেই বুঝতে পারেননি যে গলাটা আমার নয়। অবশ্য এখন আমার কনট্র্যাক্ট-এ লেখাই থাকে যে কোনও ছবিতে আমার গলা অন্য কেউ ‘ডাব’ করতে পারবেন না।

‘বেদেনী’-তে আপনাকে বাদ দিয়ে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে নেওয়ার অভিমানটা ভুলতে পেরেছেন?
আমাকে বলা হয়েছিল প্রযোজক চেনা মুখ খুঁজছেন। অবশ্য আমি ওঁর দৃষ্টিভঙ্গিটাও বুঝতে পারি। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে বেশির ভাগ প্রযোজক টুথপেস্ট আর সিনেমাতে টাকা ঢালার মধ্যে কোনও ফারাক খুঁজে পান না। শুধু ছবিতে টাকা ঢাললে উপরি পাওনা হল সেলেব্রিটিদের সঙ্গে গা-ঘষাঘষি। অনেক ক্ষেত্রেই প্রডিউসারদের সিনেমার নান্দনিক দিক সম্পর্কে কোনও ধারণা থাকে না। আমার এক বন্ধু বারবার বলে যে ও আমাকে কাস্ট করতে চায়। ওর একটাই অনুরোধ“ব্যস, তু ফেমাস হো যা।” আর আমি ওকে বলি তুই আমায় ছবিতে না নিলে ফেমাস কী করে হব? গৌরী শিন্ডে (‘ইংলিশ ভিংলিশ’), অভিষেক চৌবে (‘ইশকিয়া’) আর শ্রীরাম রাঘবনের (‘এজেন্ট ভিনোদ’) মতো পরিচালকরা প্রযোজকদের বোঝাতে পেরেছিলেন যে আমাকেই ছবিতে নেওয়া উচিত। সবাই সিনেমার জন্য এই লড়াইটা করতে পারেন না।

বলিউডের কাস্টিং করার পদ্ধতিটা কি ইদানীং পালটেছে?

হ্যাঁ, ধীরে ধীরে পালটাচ্ছে যদিও আজও বলিউডে কাস্টিং করার প্রথম শর্ত হল, এমন একজনকে খুঁজে বার করা যার শরীর ও মুখ চরিত্রের সঙ্গে মিলবে। তার পরে খোঁজা হয় সে অভিনয়টাও জানে কি না। হলিউড কিন্তু ঠিক এর উল্টো পদ্ধতিতে কাজ করে। ওখানকার নব্বই শতাংশ অভিনেতাই প্রশিক্ষিত। তবে এটা দেখে ভাল লাগছে যে ভারতীয় ছবিতে অনেক নতুন পরিচালক আছে যাঁরা নাম না জানা ভাল অভিনেতাদের সুযোগ দিচ্ছেন। অডিশন নিয়ে কাস্টিং করছেন। আর লোকে ভাল স্ক্রিপ্টের দাম দিচ্ছে। এর জন্য ‘লাইফ অব পাই’ অনেকটাই দায়ী। এটা ভারতকে শিখিয়েছে কী ভাবে ভাল ছবি করেও বাণিজ্যিক সাফল্য পাওয়া যায়। ইরফান খানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল। উনি এন এস ডি’তে আমার সিনিয়র ছিলেন। ‘লাইফ অব পাই’তে আমার সহ অভিনেতা। জিজ্ঞেস করেছিলেন, বলিউড কীভাবে আমাকে আপন করে নিচ্ছে। আমি বলেছিলাম, অনেক যত্ন আর শ্রদ্ধা নিয়ে।


শ্রীদেবীর সঙ্গে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ আর অ্যাং লি-র ছবি করে লাইফ অব আদিল হুসেন কতটা পাল্টেছে?

খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ছেলের সঙ্গে একমাস দেখা হয়নি। এরকম হলে ও তো প্রায় আমাকে ভুলতে বসবে। তবে আমার কোনও অভিযোগ নেই। শুধু ইচ্ছে করে যদি সব কিছু আর একটু ধীরে ধীরে হত। আমার স্ত্রী অবশ্য আগেই এ বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছিল। ‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর পরেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল এত অটোগ্রাফ, এত ছবি তোলা এ সব কি আমার পোষাবে? আমি একটা উপায় বের করেছি এই পরিস্থিতিটা মোকাবিলা করার জন্য। প্রথমত কখনও স্টারেদের মতো সাজ পোশাক পরি না। আর কেউ অটোগ্রাফ চাইতে এলে, আমি উল্টে তার জীবন নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করি। তাতে সেলেবকে ঘিরে রোমাঞ্চটা চলে যায়।

ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে এসে এত পরিচিতি! একটু দেরি হয়ে গেল কি?
আমি সেই ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করছি। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত, এখনকার ছবিগুলো ভীষণ বিখ্যাত হয়েছে। তবে আমি আগেও যেমন অভিনয় করে আনন্দ পেতাম আজও পাই। এমন দিনও গেছে যখন আমার পকেটে মাত্র দু’ টাকা ছিল। এই দু’ টাকা দিয়ে আমাকে হয় রাতের খাবার কিনতে হবে বা বাসের টিকিট কাটতে হবে। কিন্তু এই সব স্ট্রাগলের গল্প করে কী লাভ? অভিনেতাদের আর্থিক স্ট্রাগল নিয়ে বড় বাড়াবাড়ি করা হয়। আমার জীবনে এই সব ঘটনা না থাকলে হয়ত এই জায়গায় পৌছতাম না। আর্থিক স্ট্রাগেল একজনকে সহমর্মী করে দেয়। তার বেশি কিছু নেই। সামনে আমার পাঁচটা ভাল ছবির রিলিজ। ইটালো স্পিনেলির ‘গাঙ্গোর’। মহাশ্বেতা দেবীর গল্প অবলম্বনে। মীরা নায়ারের ‘দ্য রিল্যাকট্যান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট’। ছোট রোল, তবে মীরার সঙ্গে কাজ করাটা বড় প্রাপ্তি। তার পর আছে আদিত্য ভট্টাচার্যের ‘বোম্বেস মোস্ট ওয়ান্টেড’। আদিত্য পরিচালক বাসু ভট্টাচার্যের ছেলে। তার পর আছে বিক্রমাদিত্য মোতোয়ানের ‘লুটেরা’। আর আছে অনিতা দেশাইয়ের গল্প অবলম্বনে ‘লেসেনস্ ইন ফরগেটিং’। এত কাজ যখন সামনে, সেখানে বয়েসটা তো কোনও ফ্যাক্টরই না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.