বাবা জ্ঞান দিয়ো না
পাওলি, লক্ষ্মী, অশোক আর আমি
সাতসকালেই পাওলি দামের ফোন। গলায় আশঙ্কার সুর! “চিন্ময়দা, সকাল থেকে কোমরটা একটু বিট্রে করছে। বিকেলে জমজমাট নাচের সিকোয়েন্সের শ্যুটিং। কোমরের ঝটকাটাই যদি না থাকে, সব মাটি।” শুনে বুঝলাম, পাওলির কোমরের পেশি-সঞ্চালনটা ঠিক করে দিতে হবে। ফোনেই ওকে দু’-একটা পরামর্শ দিলাম। পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম সেলফোনে জ্বলজ্বল করছে পাওলির টেক্সট। ‘শ্যুটিং বিন্দাস। একদম ওকে।’
পাঠক, এই অবধি পড়ে নির্ঘাত ভাবছেন কোন ম্যাজিকে পাওলির হঠাৎ বিগড়ানো কোমর এক তুড়িতে আগের ছন্দে? উত্তর একটাই শব্দ ‘স্ট্রেচিং’।
শীত পড়ছে। এই সময়ে লেপ বা চাদরের তলায় ঢুকে পড়া আরামের হলেও এটাই ডেকে আনে সমস্যাকে। কারণ, এতে আমাদের শরীরের পেশি সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে ঘাড়, কোমর বা হাঁটু হঠাৎ বিদ্রোহ করে বসে। বেড়ে যায় ব্যথা। চাগাড় দেয় আর্থ্রারাইটিস।
কী ভাবে সামাল দেবেন এই সমস্যা? তেমন কিছু না। সকালবেলা একটু হাঁটা বা জগিং। সঙ্গে কয়েকটা প্রয়োজনীয় স্ট্রেচিং। এইটুকু করলেই দেখবেন শরীর একদম ঝরঝরে।
পাওলির শরীরের পেশির নমনীয়তা দুর্দান্ত। তবুও সকালে ‘ওয়ার্ম আপ’-এর পরে পাঁচ মিনিটের একটা ছোট স্ট্রেচিং সেশন ও রাখবেই। প্রথমে করবে ভুজঙ্গাসন। যাকে বলা হয় ‘কোবরা স্ট্রেচ’। এতে পেটের পেশি দীর্ঘায়িত হয়। এর পর শুয়ে থাকা অবস্থাতেই শরীরটাকে একটু পিছিয়ে নিয়ে করে ‘ক্যাট স্ট্রেচ’। তার পর গোড়ালি মাটিতে রেখে কোমরটাকে ওপরে তোলার চেষ্টা। একে বলে ‘ডগ স্ট্রেচ’। এর ফলে হ্যামস্ট্রিং এবং কাফ মাসলের পেশি দীর্ঘায়িত হয়। এগুলো পাঁচ বার করে ও করবেই। পাওলির প্রিয় স্ট্রেচিং ‘স্ট্রেট লেগ রেইজ (এসএলআর)। এ ক্ষেত্রে ও একটা পা দড়ি দিয়ে বেঁধে পিঠ মাটিতে রেখে শুয়ে পড়ে। তার পর দড়িতে বাঁধা পা নিজের দিকে নিয়ে আসে ধীরে ধীরে। এতেও হ্যামস্ট্রিংয়ের পেশি দীর্ঘায়িত হয়। এতেই শীতের দিনগুলোয় ওর এনার্জি লেভেল পৌঁছে যায় অন্য উচ্চতায়।
টলিউডের আর এক ব্যস্ত অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী। শীতের দিনে টোটা নিজের সংকুচিত পেশিকে দীর্ঘায়িত করে নিজস্ব টোন দিতে দিন শুরু করে সহজ হ্যামস্ট্রিংয়ের স্ট্রেচ দিয়ে। এর পরে ধনুরাসন, ত্রিকোণাসন-সহ বেশ কয়েকটি যোগাসনকে স্ট্রেচিংয়ের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। শীতের সকালে ব্যস্ত অভিনয় শিডিউলে ঢোকার আগে টোটার পারফেক্ট ‘রিংটোন’ স্ট্রেচিং অনুশীলন।
শুধু কি টলিউড! পিছিয়ে নেই সৌরভ-দিন্দা-সহ বাংলার ক্রিকেটমহলও। সকালে হাঁটা কিংবা জগিংয়ের পরে আপনিও সৌরভের মতো সামান্য স্ট্রেচিং করুন। দেখবেন কেমন ফুরফুরে লাগছে। সেদিন সকালেও ধারাভাষ্যকার সৌরভ ইডেনে এসে জগিং-এর পরে ‘সাইডবেঞ্চ’, ‘কোবরা (ভুজঙ্গাসন), ‘ক্যাটস্ট্রেচ’ সেরে বললেন, ‘‘স্ট্রেচগুলো করে শরীরটা টানটান লাগছে। মনে হচ্ছে খেলার দিনে ফিরে এসেছি।’’
মনোজ-ঋদ্ধিমানের নমনীয়তাও দুর্দান্ত। তবুও ওরা সকালে ইডেনের ঘাসে কোমর, পেট, পায়ের স্ট্রেচিংয়ে মাতে। ওদের ভাষায়, ‘‘এতে শরীরটা খুলে যায়।’’ আর আমার ভাষায় পেশিসন্ধির ‘রেঞ্জ অফ মোশন’ বাড়ে। হ্যামস্ট্রিং এবং কোমরের পেশির জন্য মনোজ করে ‘স্ট্র্যাডল পোজ’। এ জন্য মাটিতে বসে দুই পা দু’পাশে টানটান করে ছড়িয়ে দিয়ে শরীরটাকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়ে ১০ বার ওঠানামা করে। এর পরেই মাটিতে বসে দুই পা ভাঁজ করে পিঠ টানটান করা অবস্থায় প্রজাপতির ভঙ্গিতে হাঁটুকে ওঠায় ও নামায় ১০ বার। একে বলে ‘বাটারফ্লাই স্ট্রেচ’। কুঁচকির চোট এড়াতে এই স্ট্রেচটা মনোজের খুব পছন্দের।
ঋদ্ধিমান হ্যামস্ট্রিং, কোমর ও অবলিক পেশি দীর্ঘায়িত করতে জোর দেয় ‘ক্রুসিফিক্স স্ট্রেচিং’য়ে। এ জন্য মাটিতে শুয়ে একটা পা ফুটবল কিক করার ভঙ্গিতে অন্য হাত ছোঁয়ার চেষ্টা করে। আরও একটা স্ট্রেচের উপরে জোর দেয় ঋদ্ধি ‘রিভার্স ওয়াইপার স্ট্রেচ’। মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে একবার এ পাশে একবার তার উল্টো দিকে নেয় ১০ বার। এতে কোমর ও অবলিক পেশি দীর্ঘায়িত হয়।
অশোক দিন্দার নমনীয়তা একটু কম। তাই স্ট্রেচিং ওর জন্য বাধ্যতামূলক। ওয়ার্ম আপ কিংবা বোলিং শুরুর আগে দিন্দা মনপ্রাণ দিয়ে স্ট্রেচিং করতে ভোলে না। নৈছনপুর এক্সপ্রেস ওয়ার্ম-আপের সময়ে মাটিতে শুয়ে প্রথমে কোমরের পেশিগুলো দীর্ঘায়িত করে। একে বলে ‘হাফ পিজিয়ন স্ট্রেচ’। এ ভাবে ১০ বার ওঠানামা করার পর ‘কোবরা স্ট্রেচ’ করে ১০ বার। তবে হ্যামস্ট্রিংয়ের পেশি টানটান রাখতে অশোকের পছন্দের স্ট্রেচিং ‘সিজার্স কিক’। এ জন্য মাটিতে শুয়ে পা দু’টোকে উপরে তুলে সর্বাঙ্গাসনের ভঙ্গিতে পা দু’টো দু’দিকে কাঁচির মতো বারবার প্রসারিত করে।
মাথায় রাখুন...
• লেপের তলায় ঢুকে পড়া যেমন আরাম, তেমনই সমস্যাও।
কোমর বা হাঁটু হঠাৎ বিদ্রোহ করে।

• সকালবেলা একটু হেঁটে বা জগিং করে ঠিকঠাক
স্ট্রেচিং করলেই শরীর ঝরঝরে।

• কয়েকটি যোগাসনকে স্ট্রেচিংয়ের সঙ্গে মিশিয়ে দিন।
• স্ট্রেচিং করার সময়ে একটু অসুবিধা হচ্ছে এমন জায়গায় শরীরকে
নিয়ে যান। কিন্তু ব্যথা হলে এগোবেন না।

• ঠান্ডা পেশিকে একদম স্ট্রেচিং করাবেন না।
দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে স্ট্রেচিং লক্ষ্মীরতন শুক্লর নিত্যসঙ্গী। আমি মাঠে যাওয়ার সময়ে বাসের মধ্যেও ওকে প্রায়ই স্ট্রেচিং করতে দেখি। ঘাড় এবং কাঁধের পেশি টানটান রাখতে ও কাউকে ডেকে হাতদুটো পিছনে নিয়ে মিলিয়ে দিতে বলে। মাঠে বোলিং শুরু করার আগে দেখবেন লক্ষ্মী কাঁধের উচ্চতায় হাত তুলে কনুই ভেঙে পাখির ডানা ঝাপটানোর মতো হাত এক বার ভিতরে ও এক বার বাইরে নেয়। এটি ‘এক্সটারনাল রোটেশন স্ট্রেচিং’। এতে ওর রোটেটর কাফ মাসল বিদ্রোহ করে না খেলার সময়ে।
টেবল টেনিস খেলোয়াড় পৌলমী ঘটকও ঠান্ডার সময়ে খেলায় মনোনিবেশ করে হাঁটু আর কোমরের স্ট্রেচিং করতে করতে।
শীতে শরীরকে সারা দিন ঝরঝরে রাখতে সব থেকে কার্যকর টনিক স্ট্রেচিং। স্ট্রেচ করে এই সব দিনগুলোয় পেশিকে দীর্ঘায়িত করুন। দীর্ঘায়িত হবে আপনার কাজের পরিধিও।
কমবয়সিরা যাঁরা ওয়ার্ম আপ করে শুরু করতে যাচ্ছেন তাঁরা ‘ডায়ানামিক স্ট্রেচিং’ (গ্রিল বা ফেন্সিং ধরে যে সব স্ট্রেচিং করা হয়) দিয়ে শুরু করতে পারেন। আর যাঁদের বয়স বেশি বা বাতের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন তাঁরা ‘স্ট্যাটিক স্ট্রেচ’ করুন বা কোনও একটা স্ট্রেচকে ১০-৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখুন। স্ট্রেচিংয়ের সময়ে একটু অসুবিধা হচ্ছে এমন জায়গায় শরীরকে নিয়ে যান। কিন্তু মাথায় রাখবেন, ব্যথা হলে আর এগোবেন না। আর ঠান্ডা পেশিকে একদম স্ট্রেচিং করাবেন না। আগে শরীরকে গরম করে নেবেন। স্ট্রেচিং-এর সময়ও কোনও ভাবেই যেন পাঁচ-দশ মিনিটের বেশি না হয়।
যাঁরা অফিসে ব্যস্ত, শরীরচর্চার সময় পান না, তাঁদের ঘাড় এবং কোমরের পেশি বেশি সঙ্কুচিত হয়। সে ক্ষেত্রে অফিসের চেয়ারে বসেই ঘাড় ও কোমরের স্ট্রেচিং সেরে নিতে পারেন।
কোমর এবং হাঁটু এই সময়ে একটু বেগড়বাই করে আর কোমরের জন্য মেঝেতে উপুড় হয়ে শুয়ে দু’হাত দু’পাশে রেখে হাতে ভর দিয়ে বুকটাকে উপরের দিকে তুলুন। শীতে পেশি বিদ্রোহ করে বসবে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.