‘চোরাই’ মাছ হাসি ফোটাল দৃষ্টিহীন শিশুদের
রোজের মতোই বৃহস্পতিবার রবীন্দ্র সরোবরে প্রাতর্ভ্রমণে গিয়েছিলেন টালিগঞ্জের নানুবাজারের বাসিন্দা সন্দীপ সাহা। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখে পড়ে ঘটনাটি। মোটরযান দফতরের ওই অফিসার দেখেন, কিলো পঁচিশেক ওজনের একটি মাছ তুলে নিয়ে পালাচ্ছে তিন জন।
দেখেই সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে গিয়ে তাদের ধরেন সন্দীপবাবু। ওদের বলেন, “ভাই মাছটি নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? ছেড়ে দাও।” সহজে মানতে চায়নি ওই তিন জন। দু’পক্ষে ধস্তাধ্বস্তি শুরু হয়। সন্দীপবাবু বলেন, “ওদের দু’জনের বয়স বছর তিরিশের আশপাশে। ১৪-১৫ বছরের একটি ছেলে মাছটি কোনও মতে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল।”
সন্দীপবাবু জানান, ভিড় জমতে থাকলে বাচ্চাটিকে ফেলে বাকি দু’জন পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, “যন্ত্রণায় ছটফট করছিল আমেরিকান রুই প্রজাতির ফুট তিনেক লম্বা মাছটি। ছেলেটির হাত থেকে সেটিকে নিয়ে জলে ছাড়লাম। পেটে ডিমও ছিল। দেখলাম মাছটির কানকো দু’টিই ভেঙে গিয়েছে। জলে কিছুক্ষণ নড়াচড়া করল। তার পরে মরে গেল।”
অলঙ্করণ: সুমিত্র বসাক
কাছেই পুলিশের কিয়স্কে গিয়ে ঘটনাটি জানান সন্দীপবাবু। খবর পেয়ে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশকর্মীরা সেখানে যান। ছেলেটিকে ধরে রেখেছিলেন সন্দীপবাবু। পরে মাছ-সহ তাঁদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ওই ‘জাতীয় সরোবর’ থেকে মাছ চুরির বিষয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেননি তিনি। পরে তাঁরই অনুরোধে বেহালার নৃসিংহ দত্ত রোডে দৃষ্টিহীনদের জন্য কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আশ্রয়ে মাছটিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন লেক থানার অফিসার-ইন-চার্জ ও অন্য পুলিশকর্মীরা।
সন্দীপবাবুর বক্তব্য, রবীন্দ্র সরোবরে প্রাতভ্রর্মণে যাওয়া অনেকের চোখের সামনে প্রায় প্রতিদিন এ ভাবেই মাছ চুরি হয়। ছিপ বা জাল, কিছুই লাগে না। তিনি বলেন, “জলের কিনারায় খাবার ফেললেই ঢাউস-ঢাউস মাছ জড়ো হয়। জলে দু’পা ফাঁক করে দাঁড়ায় মাছ চোরেরা। পায়ের ফাঁকে মাছ ঢুকলেই দ্রুত দু’হাতে সেটির কানকো ধরে নেয়। ছটফট করলেও, সেই ফাঁস থেকে বেরোতে পারে না মাছগুলি।” তিনি জানান, এ দিন ঘটনার সময়ে সেখানে অনেকে থাকলেও কেউ সাহায্য করতে যাননি। তাঁর কথায়, “ওঁদের কেউ কেউ মোবাইলে ছবিও তুলছেন দেখলাম।”
সেই মাছটির সঙ্গে সন্দীপ। —নিজস্ব চিত্র
সবুজ বাঁচাতে আগেও রুখে দাঁড়িয়েছেন সন্দীপ। বললেন, “লেকের ছোট্ট দ্বীপে গিয়ে পানকৌড়ি, ডাহুক, বসন্তবৌরি, কোকিলের বাচ্চা ও ডিম চুরি করে আনে আশপাশের অনেকেই। কয়েক বার হাতেনাতে কয়েক জনকে ধরেছি। কিন্ত সবাই রুখে না দাঁড়ালে এ সব বন্ধ হবে কী করে?”
এ দিকে, পুলিশকাকুদের পাঠানো পেল্লায় রুইমাছ নিয়ে উৎসবের মেজাজ ছড়াল দৃষ্টিহীন, অনাথ শিশুদের আশ্রয়ে। অনেক দিন পরে ভাতের সঙ্গে মিলবে ডিমভরা মাছভাছা, মাছের ঝোলও! কচিকাচাদের হাসি দেখে খুশি সরকারি চাকুরে সন্দীপ সাহাও। মাছটিকে বাঁচাতে না পারার দুঃখ খানিকটা তাতেই কমলো।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.