দুই জেলা, দুই হাসপাতাল, দুই ছবি
কাটা আঙুল হাতে, দেখা নেই ডাক্তারের
লাঙলের ফলায় আঙুল কেটে যাওয়ায় আঙুলের টুকরো নিয়ে হাসপাতালে দৌড়ে গিয়েছিলেন এক যুবক। ভেবেছিলেন চিকিৎসক হয়ত আঙুলটা জোড়া লাগিয়ে দেবে। কিন্তু আঙুল জোড়া লাগানো দূরের কথা, ওয়ার্ডে জায়গা মিললেও শল্য চিকিৎসকের দেখা পেতে আড়াই ঘণ্টা ধরে যন্ত্রণায় কাতরাতে হল তাঁকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের অভাবেই বুধবার বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে চরম হয়রান হতে হল বিষ্ণুপুর থানার দ্বারিকা-গোঁসাইপুর পঞ্চায়েতের রেওড়া গ্রামের গোলক কুণ্ডু নামের বছর চল্লিশের ওই যুবককে। এ দিন সকালে জমিতে লাঙল দিতে গিয়ে তাঁর বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুল কেটে যায়। আঙুলের সেই কাটা টুকরো প্লাস্টিকে ভরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ক্ষত ‘ড্রেসিং’ করে তাঁকে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। তাঁর কাকা করুণাময় কুণ্ডুর অভিযোগ, “সকাল দশটা নাগাদ জরুরি বিভাগে গোলককে নিয়ে আসি। হাসপাতালের শল্য চিকিৎসককে ডাকতে অনুরোধ করি। কিন্তু জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আমাদের কথায় কান না দিয়ে ভাইপোকে অপারেশন থিয়েটারে না পাঠিয়ে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয়। সেখানেই যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে সে। আর আমরা শল্য চিকিৎসকের খোঁজ হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি।”
হাসপাতালে গোলক কুণ্ডু। —নিজস্ব চিত্র।
তাঁদের খোঁজাখুঁজিতে অবশ্য শল্য চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। গোলকবাবু স্থানীয় একটি কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। সেই সুবাদে তিনি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সদস্য। খবর পেয়ে আইএনটিটিইউসি-র বিষ্ণুপুর ব্লক সভাপতি উদয় ভকত দলবল নিয়ে হাসপাতালে এসে সুপারকে বিক্ষোভ দেখান। এরপরেই সুপার কর্মীদের ডেকে শল্য চিকিৎসক সুনীল হালদারকে ডেকে পাঠান। তত ক্ষণে আড়াই ঘণ্টা পার। গোলককে নিয়ে যাওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। উদয়বাবু বলেন, “অনেক অনুরোধের পরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা দেরিতে গোলককে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যত্র পাঠালে এত দুর্ভোগ হত না।”
গোলকবাবুর এই দুর্ভোগের কারণ নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা একে অন্যের দোষারোপ করেছেন। শল্য চিকিৎসক সুনীল হালদার দাবি করেন, “আমি হাসপাতালেই ছিলাম। আমাকে সময়মতো খবর পাঠানো হয়নি।” ওই সময়ের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নিতাই মণ্ডলের পাল্টা দাবি, “সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের কর্মীদেরই ওই রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। ওরা কেন নিয়ে যাইনি জানি না।” তবে হাসপাতাল সুপার দেবাশিস রায়ের স্বীকারোক্তি, “চিকিৎসকদের সমন্বয়ের অভাবেই এই কাণ্ড। জরুরি বিভাগের ওই চিকিৎসকেরই উচিত ছিল শল্য চিকিৎসককে খবর দেওয়া। তাঁর এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকায় এই সমস্যা হল।” তিনি জানান, আঙুল জোড়া লাগাতে গেলে প্লাস্টিক সার্জারি করা দরকার। কিন্তু এখানে সে পরিকাঠামো নেই। গোলকবাবুর পরিজনদের দাবি, পরিকাঠামো নেই, সে কথাও কর্তৃপক্ষ আগে জানায়নি। তা হলে ওকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হত। বাঁকুড়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ দিন্দা বলেন, “গুরুতর ঘটনা। অথচ আমাকে কিছু জানানো হয়নি। সমন্বয়ের অভাব মানা যায় না। বিষ্ণুপুর হাসপাতালের সুপারের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চাইব। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.