তোলা-তরজা তুঙ্গে
মমতা কি পিকাসো, ছবি নিয়ে কটাক্ষ গৌতমের
তিনি রাজনীতি করেন, আবার ছবিও আঁকেন। এবং সেই ছবি বেচে দল চালানোর কথাও বলেন। তোলাবাজি সামলাতে এই যদি হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাওয়াই, তা হলে তাকেই এ বার আক্রমণ করলেন বিরোধীরা। প্রশ্ন তুললেন, উনি কি দা ভিঞ্চি না পিকাসো, যে ছবি বেচে কোটি কোটি টাকা তুলবেন! এটা তোলাবাজিরই নামান্তর।
শাসক দলের বিরুদ্ধে শিল্পমহলের তোলাবাজির অভিযোগ বেশ কিছু দিনের। গত শনিবার মিলনমেলায় হস্ত শিল্প মেলা উদ্বোধনে গিয়ে তারই জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন মমতা। বলেন, তোলা দেবেন না। একই সঙ্গে ছবি বেচে টাকা তুলে দল চালানোর কথাও বলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, সে জন্য কোনও কাট মানি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না তাঁদের। কিন্তু তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দলের কর্মীদের একাংশ তোলাবাজিতে যুক্ত বলে প্রকাশ্যেই সরব হন সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তাঁর সেই মন্তব্যকে অস্ত্র করে তৃণমূলের তোলাবাজির বিরুদ্ধে দিনভর তোপ দাগল সিপিএম থেকে কংগ্রেস গোটা বিরোধী শিবির। এবং সেখানে আক্রমণের অস্ত্র হয়ে উঠে এল স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীর ছবি এঁকে টাকা তোলার ঘোষণাও!
আক্রমণের পুরোভাগে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব। বরাহনগরে দলীয় সমাবেশে এ দিন গৌতমবাবুর বক্তব্য, “রাজ্য জুড়ে তোলাবাজি চলছে। উনি কী করে তোলাবাজি বন্ধ করবেন? উনি বলছেন, ছবি বিক্রি করে দল চলছে! উনি কি দা ভিঞ্চি না পিকাসো, যে ছবি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা তোলেন?” কারা এত টাকায় মমতার ছবি কিনছেন, তা জানানোর দাবি করে গৌতমবাবুর অভিযোগ, “আসলে ছবি বিক্রির নামে তোলাবাজি চলছে। এক এক জনকে ছবি বিক্রি করে বলছেন, এত টাকা দিতে হবে!” সঙ্গে গৌতমবাবুর নিজস্ব কায়দায় সংযোজন, “আমরা যদি বুদ্ধদা’র কবিতার বই বিক্রি করে বলি, সেই টাকায় পার্টি চলছে, কোটি কোটি লোক বুদ্ধদা’র কবিতার বই কিনছে, সেটা কি ঠিক হবে? এ ভাবে পার্টি চলে না!” ওই সমাবেশ-মঞ্চ থেকেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “গুন্ডামি, তোলাবাজি, মহিলাদের বিরুদ্ধে
যা হচ্ছে, দিনের পর দিন চলছে কী ভাবে? আমাদের সময় বানতলা হয়েছিল। সবাইকে গ্রেফতার করে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছিল। এখন কী গ্রেফতার হচ্ছে?”

উনি (মমতা) বলছেন, ছবি বিক্রি করে দল চলছে!
উনি কি দা ভিঞ্চি না পিকাসো, যে ছবি বিক্রি করে
কোটি কোটি টাকা তোলেন? আসলে ছবি
বিক্রির নামে তোলাবাজি চলছে।
গৌতম দেব

পিকাসোর সঙ্গে মমতার ছবি অবশ্যই তুলনীয়
নয়। কিন্তু আত্মবিশ্বাস, সাহস এবং মনের ইচ্ছে-
এই তিনের সমন্বয় না-হলে ছবি আঁকা যায় না,
এটা গৌতম দেবরা বুঝতে পারবেন না!
শুভাপ্রসন্ন
গৌতমবাবুদের মতোই তৃণমূল নেত্রীর ছবি বেচে খরচ তোলার দাবিকে কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও। তাঁর কথায়, “মমতা লড়াকু নেত্রী জানি। কিন্তু তিনি আবার শিল্পী হলেন কবে? তাঁর পাশে অবশ্য অনেক শিল্পী থাকেন।” অধীরবাবুর আরও মন্তব্য, “একটা নির্বাচন করতে কত খরচ হয়, আমরা জানি না? ছবি এঁকে কত টাকা তুলেছেন, জানতে চাই। ছবি এঁকে তিনি দল চালান, এ রকম হাস্যকর কথা বিশ্বের কোথাও কেউ শোনেনি!”
এমন আক্রমণের কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে মমতা-শিবির থেকেও। গৌতম দেবের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মমতা-পন্থী চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নের প্রতিক্রিয়া, “একেবারে উন্মাদের প্রলাপ! তাঁর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতেও রুচিতে বাধে।” শিল্পীর আরও বক্তব্য, “মমতার ছবি কারা কেনেন, সবাই জানেন। পিকাসোর সঙ্গে মমতার ছবি অবশ্যই তুলনীয় নয়। কিন্তু আত্মবিশ্বাস, সাহস এবং মনের ভিতরের ইচ্ছে এই তিনের সমন্বয় না-করলে ছবি সৃষ্টি করা যায় না, এটা গৌতম দেবরা বুঝতে পারবেন না!” তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বক্তব্য, “মানুষের দ্বারা পরিত্যক্ত, নিজের কেন্দ্রে ৩৩ হাজার ভোটে হেরে গৌতম দেবের মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে! ওঁর চিকিৎসা করানো দরকার। ক্ষমতা থেকে সরে গিয়েছেন, পার্টিতেও কোনও গুরুত্ব নেই। সেই লোকের মন্তব্যের কী জবাব দেব!”
তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথবাবুর তোলাবাজির অভিযোগকে রাজনৈতিক ভাবে হাতিয়ার করতে প্রধান বিরোধী দল অবশ্য এক সুরেই সরব হয়েছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন বলেছেন, “তোলাবাজির কথা আমরা তো আগেই বলেছি। সরকারের নানা রকম ঘোষণা হচ্ছে। কিন্তু কাজে তা হচ্ছে না। এখন প্রকল্প হয় না জমি পাওয়া যায় না বলে। জমি পাওয়া যায় তো টাকা বরাদ্দ হয় না। আবার টাকা পাওয়া যায় তো তোলা দিতে হয়! প্রকল্প যাঁরা করবেন, তোলা দিতে হলে কাজ করবেন কী ভাবে? রাজ্যে অরাজক অবস্থা চলছে!”
তেমনই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সরাসরি ‘তোলাবাজির সরকার’ বলে কটাক্ষ করেছেন। ধর্মতলায় এ দিন এঙ্গেলসের মূর্তিতে মাল্যদান অনুষ্ঠানের অবসরে বিমানবাবুর মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তোলা দেবেন না। তোলাবাজি বন্ধ করতে হয় পুলিশ-প্রশাসনকে দিয়ে। তা তো হচ্ছে না! আবার কৃষিমন্ত্রী বলছেন, তোলা আদায় চলছে। দু’জনের বক্তব্যে তো এমনিতে মিল নেই। মিল একটাই যে, তোলাবাজি চলছে!” তোলাবাজি, দুর্নীতি, গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূলের হাতে রাজ্য নিরাপদ নয় বলেও বিমানবাবুর অভিযোগ।
এর পাশাপাশি, বীজ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের আড়াল করতেই রবীন্দ্রনাথবাবুকে কৃষি দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা। বিধানসভায় এর আগে ওই বীজ কেলেঙ্কারি নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধী বামফ্রন্ট। সেই সূত্র টেনেই সূর্যবাবু এ দিন বলেছেন, “বামফ্রন্টের প্রতিনিধিদল কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে দেখা করেছিল। তিনি বলেছিলেন, বিষয়টি দেখবেন। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, দু-তিন বার তিনি ওই সংক্রান্ত ফাইল মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে পাঠিয়েছিলেন। বীজ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তেরা মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকেই প্রশ্রয় পাচ্ছে! আর সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কৃষিমন্ত্রীকে!”
এই প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেছেন, “কেন আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে এখনও নীরব থাকব। কেন সরিয়েছে, তা নিয়ে খুলে বলতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরের অপেক্ষা করছি। ওঁর বক্তব্য কী, জানতে চাইছি। তার পরে প্রতিক্রিয়া জানাব।” তবে প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর কার্যকালে কৃষি দফতরে দুুর্নীতি হয়েছিল এবং তিনি তা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। বীজ সংস্থা নিম্নমানের বীজ দিয়েছিল। পরীক্ষার পরে তার প্রমাণ পেয়ে সেই সংস্থার পাওনা বন্ধ করা হয়েছে। তারা অবশ্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.