রাসোৎসবে উৎসব-নগরী নবদ্বীপ
পুমুখো রাখা রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ। দক্ষিণমুখী শক্তি প্রতিমা। শাক্ত ও বৈষ্ণবদের এই মিলনের রাসোৎসবে পূর্ণিমার রাতে নবদ্বীপে কিন্তু প্রাধান্য বেশি শাক্তদেরই। শহরের কোনও কোনও মঠ বা মন্দিরে রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি ঘিরে অষ্ট সখীর খোঁজ মেলে, শোনা যায় মৃদঙ্গের বোল, কীর্তনের সুর--‘বলয়া নূপুরমণি বাজয়ে কিঙ্কিনী, রাস রসে রতিরণে কি মধুর শুনি’। কিন্তু তার বাইরে সারা শহরই ভরে থাকে বিশালকায় দেব-দেবীর মূর্তি, শাক্ত আচারে। শতাধিক পুজো হয়। প্রায় আড়াইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই প্রথা চলে আসছে এই শহরে। অনুমান নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজকীয় পৃষ্ঠপোশকতায় ১৭৫২-৫৬ সালের মধ্যে এই রাসের বর্তমান বীজ রোপণ করা হয়েছিল। সেই সময়েরই কয়েকটি পুজো এখনও সমান উৎসাহের সঙ্গেই পালন করা হয়।
রাস উৎসব
বড় শ্যামা। নবদ্বীপের দক্ষিণ দিকে তেঘড়ি পাড়ায় পূজিত হন বড় শ্যামা। তন্ত্রাচার্য ভৃগুরাম প্রবর্তিত এই প্রতিমার পুজো ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। এখনকার উদ্যোক্তারা দাবি করেন ১১২৫ বঙ্গাব্দ। তবে ভৃগুরামের বংশধরেরা জানাচ্ছেন, ১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে জলপথে সপরিবারে ভৃগুরাম নবদ্বীপে আসছিলেন। নৌকাডুবি হয় নবদ্বীপের কাছেই। তিনি তখন নবদ্বীপে গঙ্গার তীরে একটি কুটীর তৈরি করে সেখানেই থাকতেন। তন্ত্রাচার্য সেখানে রয়েছেন শুনে নদিয়ারাজ তাঁর গুণাগ্রাহী হয়ে ওঠেন। শোনা যায়, তিনি উপকৃতও হয়েছিলেন। তাঁর পঞ্চমুণ্ডির আসন যেখানে ছিল, সেখানেই রাসে এই পুজো হয়।
অলোকনাথ কালী। নবদ্বীপের দক্ষিণেই প্রাচীন এই সুবিশাল প্রতিমা নবদ্বীপের রাসের প্রথম মাটির মূর্তি বলে মনে করা হয়। সুবিখ্যাত নৈয়ায়িক তর্কবাগীশ এই পুজোর প্রবর্তক। নদিয়ারাজের সভাপণ্ডিত শঙ্করনাথই প্রথম রাজার ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে পূর্ণিমায় কালী পুজো করতে শুরু করেন।
নদিয়ার শান্তিপুরের পাগলা গোস্বামী বাড়িতে। ছবি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য
বিন্ধ্যবাসিনী। এই পুজোর সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। নবদ্বীপের উত্তর প্রান্তে বাস করতেন গাঁড়াল সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁরা চাষবাসের সঙ্গে সঙ্গে গবাদি পশুর শিং দিয়ে চিরুনি, চুড়ি তৈরি করে জীবিকা অর্জন করতেন। তাঁরাই এই দেবীর পুজোর প্রচলন করেন। এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত শুভেন্দুশেখর সিদ্ধান্ত বলেন, “প্রথমে ঘটেপটে যে দেবীর পুজো হত, তাই পরে মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে অর্চনা করা শুরু হয়েছে। এ বছর বিন্ধ্যবাসিনীর ২৮৩ তম বর্ষ।” এই দেবী কৃষ্ণবর্ণা, সিংহবাহিনী ও অষ্টভুজা।
গৌরাঙ্গীমাতা। অজিতনাথ ন্যায়রত্ন এই পুজোর প্রবর্তক। বিন্ধ্যবাসিনীর সঙ্গে এই প্রতিমার মিল রয়েছে। তবে দেবীর গাত্রবর্ণ কাঁচা হলুদের মতো। এই দেবীর ধ্যানমন্ত্র রচনা করেছিলেন গোলকনাথ ন্যায়রত্ন। দেবীর পদতলে দু’টি সিংহ থাকে। তন্ত্রমতে এই দেবীর পুজো হয়। এই প্রতিমার শোভাযাত্রা না হলে, অন্য কোনও শোভাযাত্রা শুরু হয় না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.