কৃষ্ণচন্দ্র দে-র স্মরণ-অনুষ্ঠান
গায়ক কবি
বৌবাজার স্কুলে তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। পড়তে পড়তে বোধ করতে লাগলুম, চোখ দুটোয় কেমন যেন সব ঝাপসা ঝাপসা দেখছি। আর মাঝে মাঝে হচ্ছে দু’চোখে ভীষণ যন্ত্রণা...। দু’মাসের ভেতর আমার চোখ দু’টি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেল আমি অন্ধ হলুম।’ এর পর সঙ্গীতকেই অবলম্বন করলেন কৃষ্ণচন্দ্র দে (১৮৯৩-১৯৬২)। আসলে দৃষ্টি কেড়ে নিলেও নিয়তি তাঁর সুকণ্ঠটি কাড়তে পারেনি। আঠেরোতেই প্রথম রেকর্ড। কলকাতা বেতার কেন্দ্রের উদ্বোধনের পর দ্বিতীয় গানটি গেয়েছিলেন তিনি। হেমেন্দ্রকুমার রায় বলতেন ‘গায়ক কবি’। লিখেছিলেন, ‘মানে না বুঝে সুরে কেবল কথা আওড়ানো নিয়েই তিনি তুষ্ট হয়ে থাকতে পারলেন না, কথার অর্থ অনুসারে সুরের ভিতরে দিতে লাগলেন চমৎকার ভাবব্যঞ্জনা...’। গোড়ায় কৃষ্ণচন্দ্র বলতেন ‘থিয়েটারে গান গাইলে গায়কসমাজে আমার জাত যাবে’। শেষমেশ শিশির ভাদুড়ীর ‘বসন্তলীলা’য় সুর দেন। খ্যাতি কমল না, হয়ে উঠলেন লোকপ্রিয়। বহু ছায়াছবিতে গান গেয়েছেন, সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। তাঁর ছাত্রদের অন্যতম শচীন দেববর্মন, ভ্রাতুষ্পুত্র মান্না দে।
গানের সূত্রেই অভিনয়। ‘বসন্তলীলা’য় বসন্তদূতের ভূমিকায় প্রথম অভিনয়। কানন দেবী লিখেছিলেন, ‘অনেক চক্ষুওয়ালারাও তাঁর কাছে হার মেনে যেত।’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন একটি রঙ্গালয়ের, পরে নাম হয় ‘রংমহল’। প্রযোজনা করেছিলেন ‘পূরবী’ ছবিটি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি মেরে জীবৎকালেই হয়ে ওঠেন একটি প্রতিষ্ঠান। মন্দ্র কণ্ঠের জাদুতে বাঙালিকে মুগ্ধ করে রেখেছেন শতবর্ষ পরেও। ২৮ নভেম্বর তাঁর প্রয়াণের অর্ধশতাব্দী পূর্তির দিন ‘সূত্রধর’-এর উদ্যোগে ও পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র ও খেলাৎ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সহযোগিতায় ৪৭ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ‘খেলাৎ ভবন’-এ স্মরণ অনুষ্ঠান। প্রকাশিত হবে কৃষ্ণচন্দ্র (সংকলন ও সম্পা. দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়) সংকলনগ্রন্থ, আলোচনায় অম্লান দাশগুপ্ত ও সুকুমার সমাজপতি। সম্মানিত করা হবে নবতিপর কণ্ঠশিল্পী যূথিকা রায়কে। আছে কৃষ্ণচন্দ্রের মঞ্চগীতি ও কীর্তনও।

দিকচিহ্ন
‘বঙ্কিমচন্দ্রের সেই ঐতিহাসিক বসতবাড়িটি সত্যিকারের সাকার রূপে আমাদের সামনে প্রতিভাত হল একমাত্র সত্যজিৎ চৌধুরীর কঠিন শ্রম আর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে।’ নৈহাটির বঙ্কিম-ভবনের ভগ্নদশা থেকে বঙ্কিম-তীর্থে পুনরুত্থান প্রসঙ্গে লিখেছেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘পূর্ণ করো প্রণতিগৌরবে’/ সত্যজিৎ চৌধুরী: বর্ধাপন (সম্পা. বিজলি সরকার, একুশ শতক) গ্রন্থে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ সম্পাদনা, অবনীন্দ্র-নন্দলাল চর্চা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডি সেন্টার, এবং সবশেষে বঙ্কিম-ভবন পুনর্গঠন ও ‘বঙ্গদর্শন’ প্রকাশ আশি পেরনো মানুষটির ছয় দশকেরও বেশি দিনের কর্মজীবনে কয়েকটি দিকচিহ্ন। বইটিতে সযত্নে সংকলিত হয়েছে সত্যজিৎ চৌধুরীকে লেখা চিঠি, তাঁর মনীষার উপর বিভিন্ন জনের আলোকপাত, জীবনপঞ্জি, গ্রন্থ-রচনাপঞ্জি ও আলোকচিত্র। ২৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটেয় নৈহাটি নরেন্দ্রনাথ বিদ্যানিকেতনে ৫টি ছোট পত্রিকার উদ্যোগে তাঁর সংবর্ধনা।

সংবর্ধনা
ছবি: সুদীপ দত্ত
১৯৬২। সবে বি এ পাশ করেছেন। ‘কথাসাহিত্য’ পত্রিকার সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সংবর্ধনা সংখ্যায় বিখ্যাত লেখকদের মাঝে ছাপা হল কুড়ি বছরের এক ছাত্রের লেখা। বিজনবিহারী ভট্টাচার্যের কনিষ্ঠ পুত্র অমিত্রসূদন ছাত্রাবস্থাতেই প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেন ‘দেশ’ ও ‘অমৃত’ পত্রিকায়। অর্ধশতক ধরে তাঁর চর্চা বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই। ১৯৬৬-তে বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনা শুরু করেন। অন্যোন্য দর্শন: বঙ্কিমচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথ বইটির জন্য প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ স্কলার হন। তাঁর অন্যান্য বই বঙ্কিমচন্দ্র ও বঙ্গদর্শন, প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্রজীবনী, বঙ্কিমসৃষ্টিসমীক্ষা। নৈহাটির ‘বঙ্কিম গবেষণা কেন্দ্র’-র বর্তমান অধ্যক্ষ অমিত্রসূদনকে ৮ নভেম্বর সত্তরতম জন্মদিনে অনুরাগীরা সংবর্ধনা জানালেন রোটারি সদন-এ।

সুখবর
বাঙালির জন্যে সুখবর। কার্লোভি ভ্যারি ফিল্মোৎসবে পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহ দর্শক পেলেন সুব্রত আচার্য। তাঁর প্রথম ছবিতেই দর্শক মাত, তাও আবার আন্তর্জাতিক দর্শক! সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন নিয়েই তাঁর ছবির নাম: ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত’ । কলকাতার অলিগলি, পাড়ায় বখাটে ছেলেদের আড্ডা, কোনও বাড়ির জানালায় দেখা মেয়েটিকে নিয়ে স্বপ্নকল্পনা সাদাকালোয় তোলা বাস্তব-অবাস্তবে মেশা নিরীক্ষাময় ছবি সুব্রতর, চিত্রকরও তিনি। এর আগে ছোট ছবি বা তথ্যচিত্র করেছেন, বড় মাপের কাজ এই প্রথম। এ বারে দেখবেন কলকাতার মানুষজনও, ২১ নভেম্বর সন্ধে ৬টায় গোর্কি সদনে, আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাবের উদ্যোগে। ওখানেই এ রকম আরও একগুচ্ছ ছবি নিয়ে ১৯-২৬ এই উৎসব: সিনেমা স্পিকস অ্যাবাউট স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইয়ুথ।

রবি ঘোষ
নিষ্প্রদীপ নন্দন! অথচ গত সপ্তাহেই প্রতি দিন চাঁদের হাট বসত সেখানে। পিঠে নরম রোদ নিয়ে কফিতে চুমুক আর আন্তর্জাতিক ছবি নিয়ে আড্ডা। তাঁবু খাটিয়ে সিনেমা দেখানোর সঙ্গে আন্তোনিয়োনি থেকে অ্যাঞ্জেলোপউলসকে নিয়ে গম্ভীর সেমিনার। দিলীপ পাদগাঁওকর জগন্নাথ গুহ শেখর দাশ অশোক বিশ্বনাথনের মতো প্রাজ্ঞ বক্তা আর তত্ত্বাবধানে চলচ্চিত্রবেত্তা সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। ছিল ওপেন ফোরাম, রঙিন ক্যাটালগ, বাংলা-ইংরেজি বুলেটিন। তবে চলচ্চিত্রোৎসব শেষ হতে-না-হতেই আবার আছে রবি ঘোষকে নিয়ে প্রদর্শনী, ২৪-২৬ নভেম্বর, উপলক্ষ রবি ঘোষের জন্মদিন (২৪ নভেম্বর ১৯৩১)। উদ্বোধনে থাকবেন তাঁর স্ত্রী বৈশাখী ঘোষ। দেখানো হবে তাঁর একগুচ্ছ ছবিও। উদ্যোগে নন্দন ও শতাব্দী ব্যালে ট্রুপ।

বই নির্মাণ
থিয়োরির কচকচি বা গুরুগম্ভীর লেকচার একেবারেই নয়, পুরোটাই হাতে-কলমে। যাতে মাত্র তিনটি মাসেই শিক্ষার্থীরা সড়গড় হয়ে যেতে পারেন বিষয়সূচি বা গ্রন্থপঞ্জি সাজানো থেকে প্রুফ রিডিং, বাইন্ডিং-এর যাবতীয় কাজে। এক কথায় প্রাক-প্রকাশনার প্রতিটি পর্যায়। প্রকাশনা সংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি রপ্ত করানোর জন্যই প্রকাশনা সংস্থা ‘সিগাল ফাউন্ডেশন ফর আর্টস’ শুরু করেছিল ‘দ্য সিগাল স্কুল অফ পাবলিশিং’। সম্পাদনা এবং আর্ট ডিজাইনিং মূলত এই দুটি বিষয় শেখানো হয়। শেখাতে আসেন দেশ-বিদেশের প্রথম সারির প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিত্বরা। তবে শুধু ক্লাসরুমেই সীমাবদ্ধ নয় এই অভিনব পাঠ্যক্রম। শিক্ষার্থীরা কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া ঘুরে আয়ত্ত করে নেন প্রকাশনার প্রাথমিক পাঠ। জানুয়ারি সেশনের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্বে।

উৎস মানুষ
বিজ্ঞানবোধের গলায় কলসি ঝুলিয়ে জলে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। মঙ্গলে কিউরিয়োসিটির অবতরণ, নাকি মঙ্গলকে সন্তুষ্ট রাখার জন্যই রত্নধারণ, কোনটা বড়? না কি দুটোই চলতে পারে এক সঙ্গে? বিজ্ঞানের যথাযথ বিকাশ না ঘটলে মেয়েরা কি তার সবচেয়ে বড় শিকার? এমন অনেক প্রশ্ন। তর্ক হলেও কাজের কাজ কই? অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব ও সম্পাদনায় সেই কাজই করেছিল ‘উৎস মানুষ’। মানুষটি আর নেই। উৎস মানুষ রয়েছে। এ বছরও বাংলা আকাদেমি সভাঘরে ২৪ নভেম্বর বিকেল পাঁচটায় উৎস মানুষ ‘অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা’ আয়োজন করেছে। বিষয়: ‘এ উপমহাদেশে মেয়েরা কেমন আছে?’

বিদেশ থেকে
মানুষ মানুষকে ভালবাসছে। আবার সেই মানুষকেই প্রতারণা করছে। এই বাস্তব সত্যই উঠে এল স্কটিশ ডান্স থিয়েটারের নৃত্যনাট্যে। সে যেন এক স্বপ্নের জগৎ। ব্রিটিশ কাউন্সিল ২০১২-’১৩-য় আয়োজন করেছে ইমপালস ডান্স সিজন। তারই অঙ্গ হিসেবে স্কটল্যান্ডের ডান্ডি শহর থেকে এসেছিল ১৫ জনের নাচের দল। এ দেশে তাঁদের প্রথম নাচ। অন্য সব শহর ঘুরে শেষ উপস্থাপন ছিল কলকাতার কলামন্দিরে। মোট তিনটি নৃত্যনাট্য। লাক্সুরিয়া, ড্রিফ্ট, এবং ডগ। নৃত্যনাট্য ছাড়াও তাঁরা স্কুল পড়ুয়া ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আয়োজন করেছিলেন প্রশিক্ষণ শিবির।

আলোড়ন
সবাই মনে করতে পারবেন এক-একটা গল্প পাঠকমানসে সে-সময়ে কী আলোড়নই না তুলেছিল। মিহির মুখোপাধ্যায়ের সৃষ্টি সম্পর্কে মন্তব্য বিভাব-এর (সম্পা: রাহুল সেন) সম্পাদকীয়তে, এ বারে ক্রোড়পত্র তাঁকে নিয়েই, ‘আমরা একটা ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। পাঠকের যদি ঘুম ভাঙে, ঘুমিয়ে পড়া স্মৃতি যদি গল্পগুলোর পুনর্পাঠে জেগে ওঠে।’ ক্রোড়পত্রে মিহিরের একগুচ্ছ গল্প, রচনাপঞ্জি, আর তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ। সঙ্গে মিহিরের আত্মস্মৃতিও: ‘দীর্ঘ সময় নিয়ে লিখি... এক-একটি গল্প অন্তত দু’-বার, তিনবারও লিখি, লিখতে হয়। তৃপ্তি নেই, স্বস্তি নেই। এ এক অবর্ণনীয় যন্ত্রণা।’ এ ছাড়াও আছে সমরেন্দ্র সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত রচনা। আনন্দ ভট্টাচার্যের সংগ্রহ ও টীকায় ‘সীয়র-উল-মুতাক্ষারীণ’।

সে দিনের ছবি
যে দিন গিয়েছে চলে তারই একটি ছবি পাওয়া গেল জটাধারী দাঁ অ্যান্ড সন্স পেট্রোল পাম্পে। শতবর্ষেরও বেশি পুরনো এই পাম্পে আজও সযত্নে রাখা আছে পাম্পের ইতিহাস। পাশাপাশি, পাম্পের বর্তমান কর্ণধার কাঞ্চনকুমার দাঁ জানালেন, বাহির সিমলা অঞ্চলে তাঁদের বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোটির বয়স এ বার হল ১৫৪। পাম্পের ইতিহাস ও বিখ্যাত মানুষদের গাড়ি নিয়ে একটি অ্যালবামও প্রকাশ করতে চলেছেন তাঁরা, জানালেন তিনি। সঙ্গে এই পাম্পের সেই আদি যুগের একটি ছবি।

দেশের টানে
ফেরার টানটা ছিল অনেক দিন। কিন্তু সম্ভব হল এই প্রথম। ও পার বাংলা থেকে সেই কবে এ পারে চলে আসা বাবা-মায়ের হাত ধরে। তার পরে আর ফেরা হয়নি একটি বারের জন্যও। এ বার জন্মভূমি বাংলাদেশ ঘুরে এলেন অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। ও পারের ‘বহ্নিশিখা’ আর এ পারের ‘সমলয়’ দুই সংস্থার আয়োজনে সাবিত্রী ও অভিনেতা হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হল ঢাকায়। ১৬-১৮ নভেম্বর, তিন দিনের অনুষ্ঠানে ছিল নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনও। এ দিকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সার্ধশতজন্মবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে জাতীয় কমিটি। তাদের আমন্ত্রণে ঢাকায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায় স্মরণে অনুষ্ঠানে ভারত থেকে ডাইমেনশন ফোর-এর উদ্যোগে যাচ্ছেন দ্বিজেন্দ্রগীতির বিশিষ্ট শিল্পী নূপুরছন্দা ঘোষ।

পরিচালক
কলকাতায় এলে মনে হয় যেন নিজের দেশেই এসেছি। বাংলায় ছবি করি, শুধু বাংলাদেশের দর্শক কেন, কলকাতার দর্শকের মতামতও তো জানতে চাই। বলছিলেন মোরশেদুল ইসলাম, তাঁর নতুন ছবি ‘আমার বন্ধু রাশেদ’-এর শো সদ্য শেষ হয়েছে তখন মেট্রো-য়, সিনে সেন্ট্রালের উৎসব ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অফ নিউ সিনেমা-য়। আশির দশকে বাংলাদেশে সামরিক শাসনের নিগড় ভাঙার জন্যে যাঁরা ছবি করা শুরু করেন, গড়ে তোলেন বিকল্প চলচ্চিত্র আন্দোলন, তাঁদেরই অন্যতম মোরশেদুল। ‘বেঁচে থাকার সংকট নিয়েই শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়েও ছবি করি, কারণ মুক্তির সে লড়াইকে ভুলিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা চলে।’ তা নিয়েই তাঁর প্রথম ছবি ‘আগামী’ ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রৌপ্যময়ূর পায়, তার পর একের পর এক ‘চাকা’, ‘দুখাই’ থেকে হালের ‘প্রিয়তমাসু’ অবধি। তাঁর ছোটদের ছবিও খুব জনপ্রিয়, যেমন ‘দীপু নাম্বার টু’। বাংলাদেশের চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটিরও তিনি অন্যতম পুরোধা, স্ত্রী বিশিষ্ট আলোকচিত্রী মুনিরা মোরশেদ মুন্নি সক্রিয় সঙ্গী তাঁর এ-কাজে। তাঁর মতোই কলকাতা চলচ্চিত্রোৎসবে এসেছিলেন বাংলাদেশের সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড ও শাহনেওয়াজ কাকলি, যথাক্রমে তাঁদের ‘অন্তর্ধান’ ও ‘উত্তরের সুর’ দেখানো হল নন্দনে।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

নাট্যশিল্পী
ঠিক কী ভাবে নাটকের বীজ প্রোথিত হয়েছিল মনে, নিজেও বুঝতে পারেন না। ছোটবেলায় প্রচুর বাণিজ্যিক সিনেমা দেখতেন। স্কুল পালিয়ে। তার মধ্যে দেব আনন্দের ছবি অন্যতম। হাওড়ার যে অঞ্চলে থাকতেন সেটি ছিল সংস্কৃতি-চর্চার আখড়া। যৌথপরিবারে পুজোর সময় নাটমন্দিরে মঞ্চ বানিয়ে হত অভিনয়। সেখানে নিয়মিত অভিনেতা ছিলেন নাট্যশিল্পী অরুণ মুখোপাধ্যায়। তবে নাট্যপ্রেমের জন্য তিনি দায়ী করেন ‘রাজ্য সমন্বয় কমিটি’কে। ‘রীতিমত চাপ দিয়ে নাটক লিখিয়ে নিত’। তারই ফল ‘গোর্কির মা’, ‘স্পার্টাকাস’। বাড়িতে ধর্মীয় পরিবেশ, কিন্তু তিনি বামপন্থী চেতনায় উদ্বুদ্ধ। গড়ে তুললেন নাট্যদল ‘চেতনা’। প্রথম মঞ্চস্থ হয় ‘মারীচ সংবাদ’, তাতেই দারুণ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। ছেলে সুমন অভিনয় করেন সোনার হরিণ চরিত্রে। রাজনৈতিক অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার করেছিলেন নাটককে। বারবার তাঁর নাটকে এসেছে ব্যক্তি-মানুষের সংকট, সাধারণ মানুষের বিপন্নতার কথা। পরে ‘জগন্নাথ’ নাটকে অ্যান্টি-হিরোর চরিত্রে অভিনয়। ‘জগন্নাথ’ শুধু একটি চরিত্রই নয়, একটা বোধ, একটা জীবনদর্শন। সর্বজনীন। সর্বকালের। নাটকটি দেখে মৃণাল সেন তাঁকে ডেকে নেন ‘পরশুরাম’-এ অভিনয়ের জন্য, এই অভিনয়ই তাঁকে এনে দেয় সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার। একে একে তাঁর হাত ধরে নানা নাটক মঞ্চস্থ করেছে ‘চেতনা’, হালে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘এলা বিমলা’ প্রভৃতি। ১৯৭২ থেকে ২০১২ ‘চেতনা’র বয়স হল চল্লিশ। এই উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে নাট্যোৎসবের। ‘মারীচ সংবাদ’ ও ‘জগন্নাথ’-সহ অরুণ মুখোপাধ্যায় নির্দেশিত চেতনার পাঁচটি প্রযোজনা এবং আরও চারটি মঞ্চসফল নাটক দেখা যাবে ২২-২৫ নভেম্বর অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.