বিনোদন রাইসিনায় টলিউডের ছবি
দেখে উচ্ছ্বসিত রাষ্ট্রপতি

ত বার এমন হয় যে, কোনও সিনেমা দেখার পর দর্শকাসনে উপস্থিত স্বয়ং রাষ্ট্রপতি বারবার বলছেন “অসাধারণ”?
কত বার এমন হয় যে, মোবাইল, ক্যামেরা জমা দিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের দফায় দফায় চিরুনি তল্লাশির পর সিনেমা হলে ঢোকার ছাড়পত্র মেলে? এবং যেখানে আগে থেকে পাঠানো নামের তালিকার বাইরে আর কোনও ব্যক্তির প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশাধিকার থাকে না?
এক বার ভাবুন, বিরতিতে যে কাপ-প্লেটে আপনি চা খাচ্ছেন, তাতে অশোক স্তম্ভের ছাপ মারা! অথবা কারও সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন আর পাশ থেকে রক্ষীরা অনবরত বলে যাচ্ছেন, “হাত মিলিয়ে আর দাঁড়াবেন না।” কাজেই আপনাকে তৎক্ষণাৎ সরে যেতে হচ্ছে অন্তত তিন ফুট দূরত্বে।
এমনই সব অভিজ্ঞতা হল রাষ্ট্রপতি ভবনে এক সন্ধ্যায়। রাইসিনা হিলে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনীত ‘মুক্তধারা’র বিশেষ প্রদর্শনে।
রাষ্ট্রপতিকে ফুল ঋতুপর্ণার। ছবি রাষ্ট্রপতি ভবনের সৌজন্যে।
যেখানে উপস্থিত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়-সহ পরিবারের অনেকে। ছিলেন রাষ্ট্রপতির দিদিও। আর উপস্থিত একমাত্র আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধি।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এটাই সম্ভবত প্রণববাবুর দেখা প্রথম বাংলা ছবি।
“আমি ভীষণ ভাবে চাইতাম রাষ্ট্রপতি আর ফার্স্ট লেডিকে ‘মুক্তধারা’ দেখাতে। নভেম্বরের ৭ তারিখ দিল্লি এসে এটা নিয়ে বৌদিকে অনুরোধ করি। সেই সৌভাগ্যও হয়ে গেল। জানেন, আমি যখন রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানাতে যাই, উল্টে উনিই আমাকে ধন্যবাদ জানান। আই অ্যাম সো সো টাচড,” স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
প্রোটোকলের বেড়া যতই থাকুক, ছবি শুরুর ঠিক আগে কিন্তু ঋতুপর্ণা-সহ ‘মুক্তধারা’র গোটা টিম পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন রাষ্ট্রপতি ও তাঁর স্ত্রীকে। রাষ্ট্রপতির হাতে উত্তরীয়ও তুলে দেন ঋতুপর্ণা। বিরতিতে ফার্স্ট লেডিকে দেখা গেল ঋতুপর্ণার গয়না নিয়ে খুঁটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন করতে। “বৌদি আমাকে ভীষণ স্নেহ করেন। ওঁর কাছে আমি সব সময় কৃতজ্ঞ,” বলছিলেন ঋতুপর্ণা।
রাষ্ট্রপতি ভবনে শো। গর্বের পাশাপাশি কিছুটা ভয়ে-ভয়েই ছিলেন ছবির পরিচালক শিবপ্রসাদ ও নন্দিতা রায়, প্রযোজক বাচ্চু বিশ্বাস থেকে উপস্থাপক অতনু রায়চৌধুরী, ঋতুপর্ণার স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তী। শিবপ্রসাদ পরে বললেন, “ভয় তো একটু লাগবেই। রাষ্ট্রপতিকে সিনেমা দেখানো বলে কথা! সব কিছুই একেবারে নিখুঁত হওয়া চাই। তবে সিনেমা শেষের পর রাষ্ট্রপতি যখন বার পাঁচেক ‘অসাধারণ’ বললেন, তখন বুঝলাম আমাদের পরিশ্রম সার্থক।”
শো শুরু হওয়ার কথা ছিল সাড়ে ছ’টায়। হয়েওছিল তাই। কিন্তু প্রোটোকল বলে, রাষ্ট্রপতি দর্শকাশনে থাকলে শো শুরুর আগে একটা বক্তব্য রাখতে হবে। সেই গুরুদায়িত্ব বর্তেছিল ঋতুপর্ণার ওপর। লাল বেনারসি পরে বেশ ভালই সামলালেন দায়িত্বটা। পরে বললেন, “আমি কিন্তু স্পিচটা নিজেই লিখেছি। তবে কত বার যে কাটাকুটি করতে হয়েছে তার ঠিক নেই। এমন ঘটনা তো জীবনে বারবার আসে না।”
ছবি শেষের পর ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকরা আলোচনা করছিলেন, প্রণববাবু যত বেশি বই পড়েন, ততটা সিনেমার ভক্ত নন তিনি। লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো তো ননই। ছবি দেখাটা আডবাণীর প্রায় রুটিনের মধ্যে পড়ে। প্রণববাবু অবশ্য কিছু দিন আগেই দেখেছেন স্পিলবার্গের ‘লিঙ্কন’। সেটাও এই থিয়েটারেই, যেখানে ‘মুক্তধারা’র প্রদর্শন হল। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা যাক, আমির খানের ‘রঙ দে বসন্তী’ প্রণববাবু দেখেছিলেন, তবে কাজের সূত্রে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নিয়ে কিছু বিতর্ক উস্কে দিয়েছিল ওই ছবি। ঘটনাচক্রে সেই সময় প্রণববাবুই প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ফলে ছবিটা তাঁকে দেখতেই হয়েছিল।
রং দে বসন্তীর সময়ে সেন্সর বোর্ডের প্রধান ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। সম্প্রতি প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর। শর্মিলা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁর অভিনীত কোনও ছবি প্রণববাবু দেখেছেন কি না। রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, শুধু ‘অপুর সংসার’টাই দেখেছেন। শুনে চমকে গিয়েছিলেন শর্মিলা।
তবে এ বার হয়তো রুটিন বদলাচ্ছেন ‘চাণক্য’। হয়তো ‘মুক্তধারা’র প্রদর্শন তারই ইঙ্গিত।

চতুর্দশ বর্ধমান চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হল সংস্কৃতি লোকমঞ্চে। চলবে
২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। রবিবার ছবিটি তুলেছেন উদিত সিংহ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.