জয়ের সৌরভেও ধোনির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন
দুপুর-দুপুর মোতেরায় যা চলছিল। তাতে শিবাজি পার্কের কাছে রোববার বিকেলে বাল ঠাকরের অন্ত্যেষ্টিতে অনায়াসে যোগ দিতে পারার কথা সচিন তেন্ডুলকরের।
ভারত বিদেশ সফরে গেলে প্রেসবক্সে যে ছবিটা তৈরি হয়, হুবহু সেই দৃশ্য মোতেরায় পাঁচ তলার মিডিয়া এনক্লোজারে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন সিম আর বাউন্সের সামনে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অবধারিত বিপর্যয় ঘটে। প্রেসবক্সে নেমে আসে হতাশা। তখন প্রাক্তন কোনও ক্রিকেটার বক্সে বেড়াতে এলে তাঁকে ঘিরে ধরে সবাই। সবাই উত্তর চায় তখনবিদেশে ফাস্ট বোলিংয়ের বিরুদ্ধে এই বিপর্যয় কি আমাদের ঐতিহাসিক ভাবে চলতেই থাকবে?
অবিকল সেই ভিড় মাইক আথারটনকে ঘিরে। ইংরেজ সাংবাদিকেরা জানতে চাইছেন, আমরা কি আর স্পিন খেলা শিখব না? বোঝা গেল সকাল-সকাল যে ভাবে সাত উইকেট চলে গেল ইংল্যান্ডের, তাতে ভেঙে পড়েছে ব্রিটিশ প্রেস। আথারটন তাঁদের কোনও জরিবুটি দিতে অসমর্থ। বরঞ্চ বললেন, কিছু করার নেই। স্টেপ-আউট করে স্পিন খেলা শিখতে হয় ৯/১০ বছর থেকে। হঠাৎ করে ভারত সফরে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে স্পিন খেলা শিখে নেবএ ভাবে স্টেজে মারা যায় না।
ওঝার কেরামতি। মন্ত্রমুগ্ধ সচিনও। শনিবার।
ভিড় থেকে এমন কথাও শুনলাম, স্পিন বোলিং মেশিন বার হয়ে গিয়েছে ইংল্যান্ডে। ইয়র্কশায়ারে সেই মেশিনে খেলা শিখছে অনূর্ধ্ব তেরো ক্রিকেটাররা। নামী ব্রিটিশ লিখিয়ে বললেন, “হায়, এরা বড় হতে হতে তো আরও দশ বছর। তত দিন উপমহাদেশে এই হত্যালীলা মেনে নিতে হবে।” প্রজ্ঞান ওঝা তখন ইংরেজ হতাশার স্নায়ুকেন্দ্রে। নিয়ন্ত্রিত বাঁ-হাতি স্পিনে ছারখার করে দিয়েছেন পিটারসেন-সহ ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইন-আপ। টিম মিডিয়া ম্যানেজারকে ততক্ষণে জড়িয়ে নিয়েছেন বিলেতের লিখিয়েরা। ক্ষোভওঝার মতো কোনও স্পিনার সফরে এসে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচগুলোয় তাদের খেলতে দেওয়া হয়নি। এমনকী দেওয়া হয়নি মোতেরার মতো ঘূর্ণি পিচও।
গ্রাহাম গুচকে তখন ক্যামেরা ধরেছে ইংল্যান্ড ড্রেসিংরুমের সামনে গোঁজ হয়ে বসে থাকতে। গুচ সেই বিরল ইংরেজ ক্রিকেটারদের একজন যাঁর উপমহাদেশ আর বাইরের পারফরম্যান্সে কোনও তফাত নেই। সব মিলে গড় ৪২.৫৮। উপমহাদেশ গড় ৪২। সেখানে কেভিন পিটারসেন সব মিলে ৫০। উপমহাদেশে ২৭।
ছ’ফুট তিন ইঞ্চির পিটারসেন এ দিন কত চেষ্টা করলেন লম্বা স্ট্রাইড দিয়ে ভারতীয় স্পিনারদের ম্যানেজ করার। তাঁর সামনে লম্বা বাঁ পা বাড়িয়ে দেওয়া বহু পুরনো ভারত-ইংল্যান্ড ডুয়েল মনে করিয়ে দিচ্ছিল। তিনিও লম্বা। তিনিও পিটারসেনের মতো দক্ষিণ আফ্রিকান!
তিনিটনি গ্রেগ সফল হয়েছিলেন চন্দ্রশেখরকে সামলাতে।
তিনিকেভিন পিটারসেন সামলাতে পারলেন না ওঝার আর্মার।
পরের বলেই ইয়ান বেল আউট। দুঃসাহসিক লিফট করতে গিয়ে। তখন ইংল্যান্ড ড্রেসিংরুমের পরিবেশ এতই শোকার্ত যে, মনে হচ্ছে গত বারের গ্রীষ্মে ইংল্যান্ড গিয়ে ভারত এত ভেঙে পড়েনি। রাহুল দ্রাবিড় তো একাই যথেষ্ট লড়াই করতেন!
আজকাল আধুনিক ক্রিকেটে ইনিংসে হার কমে গিয়েছে। চট করে কোনও দল কাউকে ফলো-অন করায় না। কেউ আসলে শখ করে চতুর্থ ইনিংস খেলতে চায় না। এখানে যেহেতু এক্সট্রা-এক্সট্রা লার্জ সাইজের টিশার্টের মতো বিশাল ৩৩০ রানের ব্যবধান, ধোনি ফলো-অন করালেন। কারও তা নিয়ে কোনও প্রশ্নও নেই। বরং প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, আজকেই কি শেষ?
দিনের শেষে নতুন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, ইংল্যান্ড কোনও চমক দেবে না তো অনেক মন্থর হয়ে আসা উইকেটে? এখনও ২১৯ লাগবে তাদের। মোতেরা টেস্টের চতুর্থ ইনিংস স্কোরবোর্ডে তোলাতে। কাজটা সহজ নয়। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের পায়ের ব্যবহার। ক্রিজ ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে আসা খেলার মেজাজ অনেকটাই বদলেছে। বিনা উইকেটে ১১১-র টেম্পো রোববার দ্রুতই গুঁড়িয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ভারত করবে।
কিন্তু ভারত অধিনায়কের বোলিং পরিবর্তন ঠিকঠাক হবে তো? ধোনির টেস্ট অধিনায়কত্বের মান পড়ে গেছে হঠাৎ করে এমন কথা নানান মহলে হচ্ছে। যদি প্রচারটা বাড়াবাড়িও হয়, অন্তত শনিবারের জন্য ঠিক ছিল। যে ইনস্টিংকটিভ অধিনায়কত্ব তাঁকে টি-টোয়েন্টি বা ওয়ান ডে-র মুহুর্মুহু বদলে যাওয়া প্রেক্ষাপটে এমন জবরদস্ত নেতা বানিয়েছে, সেটাই টেস্টে সময় সময় বিরক্তির কারণ হয়।
পিটারসেনও আটকে গেলেন স্পিনের ফাঁদে।
টেস্ট অনেক গভীর ভাবনা এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব তার অধিনায়কের কাছে দাবি করে। উমেশ যাদবকে এ দিন তিনি প্রথম আনলেন ৪৮তম ওভারে। ততক্ষণ অবধি বোঝা যাচ্ছে না দলে উমেশের ভূমিকাটা ঠিক কী! ভারতীয় দলে তাঁকে গুজরাত ট্যুরিজম স্পনসর করছে কি না?
উমেশ এমন কিছু বল করেননি যে হঠাৎ করে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁকে দিয়ে বোলিং ওপেন করিয়ে জাহির খানকে দেওয়া হবে মাত্র এক ওভার! ওঝা যে দিক থেকে এতগুলো উইকেট নিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে হঠাৎ সেই প্রান্ত বদলে দেওয়া হল। যা দেখে কপিল দেব অস্ফুটে বলছিলেন, “ধোনি কী করছ?” সহবাগকে একটা ওভার আনা হল। তিনি ব্যাটসম্যানদের যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেললেন। পরের ওভারে আবার ব্যাটসম্যানদের স্বস্তি দিয়ে তাঁকে তুলে নেওয়া হল। নভজ্যোৎ সিংহ সিধু ভীষণ ভক্ত ধোনির ক্যাপ্টেন্সির। তিনিও বলে ফেললেন, “এমএস এটা কী হচ্ছে?” তেন্ডুলকর মাঝে হঠাৎ এলেন এক ওভারের জন্য। কেন এলেন-কেন চলে গেলেন, বোঝা গেল না। সবচেয়ে বিস্ময়কর, টিমের তৃতীয় স্পিনার যুবরাজ বল পেলেন সারা দিনে মাত্র দু’ওভার। তিনি বল করতে চাননি। ফিল্ডিং করে করে ক্লান্ত এমন কোনও খবর কিন্তু নেই। বরঞ্চ সফরকারি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এতগুলো উইকেট পেয়েছিলেন। তাঁকে তো লম্বা স্পেলে আনাই যেত। তা হলে?
আম্পায়ার আলিম দারের একটা বাজে দিন গেল শনিবার। যে অফ ফর্মের ক্ষতিপূরণ দিল দুটো দলই। ভারতের স্লিপ কর্ডন মজবুত হলে অবশ্য ম্যাচ রিপোর্টে আম্পায়ারিং কোনও ইস্যুই হত না। দুটো ক্যাচ পড়ল। একটা প্রথম স্লিপে সহবাগ। আর একটা গালিতে কোহলি। দ্রাবিড়-লক্ষ্মণের ব্যাট হাতে অনুপস্থিতি ঘরের মাঠে মিটিয়ে দিচ্ছেন কোহলি-পূজারা। কিন্তু প্রথম স্লিপ-গালিতে তাঁদের চিরপরিচিত উপস্থিতি কে ঢাকবে?
রোববার প্রথম ঘণ্টায় যদি ভারত তেড়েফুঁড়ে নাটক তৈরিতে নেমেও পড়ে। ওপরের জিজ্ঞাসাটা থেকেই যাবে।

ভারত প্রথম ইনিংস: ৫২১-৮ ডিঃ
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৪১-৩)
কুক ক সহবাগ বো অশ্বিন ৪১
পিটারসেন বো ওঝা ১৭
বেল ক সচিন বো ওঝা ০
সমিত এলবিডব্লিউ উমেশ ১০
প্রায়র বো ওঝা ৪৮
ব্রেসনান ক কোহলি বো ওঝা ১৯
ব্রড এলবিডব্লিউ জাহির ২৫
সোয়ান নঃআঃ ৩
অতিরিক্ত ১৭
মোট ১৯১
পতন: ৬৯, ৬৯, ৮০, ৯৭, ১৪৪, ১৮৭
বোলিং: অশ্বিন ২৭-৯-৮০-৩, জাহির ১৫-৭-২৩-১, ওঝা ২২.২-৮-৪৫-৫,
যুবরাজ ৩-০-১২-০, উমেশ ৭-২-১৪-১।

ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস
কুক ব্যাটিং ৭৪
কম্পটন ব্যাটিং ৩৪
অতিরিক্ত
মোট ১১১-০
বোলিং: উমেশ ৭-১-১৫-০, ওঝা ১৪-৩-৩৪-০, অশ্বিন ১৪-৩-৪৯-০,
সহবাগ ১-০-১-০, জাহির ১-০-১-০, সচিন ১-০-৮-০।

ছবি: উৎপল সরকার




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.