আগাম ঘোষণা নয় প্রধানমন্ত্রীর পদ নিয়ে
মুখ রাহুল, ভোট-প্রস্তুতিতে টক্কর বিজেপিকে
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে রাহুল গাঁধীকেই দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরছে কংগ্রেস। তবে এখনই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে না আনুষ্ঠানিক ভাবে। বরং ভোটযুদ্ধের আগাম প্রস্তুতিতে রাহুলকে সামনে রেখে বিজেপি-র সঙ্গে দলের ফারাকটা তুলে ধরতেই তৎপর এখন কংগ্রেস। কারণ, প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী ঠিক করা তো দূর, লোকসভা ভোটের সময় কে হবেন দলের কাণ্ডারী, তা নিয়েই কোন্দলে জেরবার এখন বিজেপি। এরই মধ্যে রাহুলের নেতৃত্বে দল ও সরকারের সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে কংগ্রেস তারুণ্য, শৃঙ্খলা ও আগাম প্রস্তুতির প্রশ্নে দুই শিবিরের বৈপরীত্যটা তুলে ধরতে চায়।
সে কারণেই সরকার টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ‘নৈশভোজের রাজনীতি’ চালিয়ে গেলেও (বালাসাহেব ঠাকরের প্রয়াণে এ দিন অবশ্য তা স্থগিত রাখতে হয়েছে।) পুরো দমে ভোটের প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন সনিয়া গাঁধী। আগাম ভোট-প্রস্তুতির প্রশ্নে প্রতি বার এগিয়ে থাকে বিজেপি। তাদেরই অস্ত্রে এ বার বিজেপিকে টক্কর দিতে চায় কংগ্রেস। রাহুলকে কার্যত নেতা করেই গত বৃহস্পতিবার দলের লোকসভা নির্বাচনী সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করেছেন সনিয়া।
কংগ্রেস সূত্র অবশ্য বলছে, ঘরোয়া ভাবে সমন্বয় কমিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে এক মাস আগেই। এর পর থেকে গুরুদ্বারা রেকাবগঞ্জ রোডে কংগ্রেসের ওয়াররুমে দফায় দফায় রাহুলের নেতৃত্বে বৈঠকও করেছেন আহমেদ পটেল, এ কে অ্যান্টনি, জয়রাম রমেশ, দিগ্বিজয় সিংহ ও মধুসূদন মিস্ত্রীরা। ওই কমিটির কথা ঘোষণা করার জন্য জুতসই সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। নিতিন গডকড়ীকে নিয়ে বিজোপিতে যখন ডামাডোল, ঘোষণার জন্য সেটাকেই উপযুক্ত সময় মনে করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
আগামী লোকসভা নির্বাচনের পর কংগ্রেসের নেতৃত্বে ফের সরকার গঠন হলে রাহুলই যে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেই অলিখিত ঘোষণাও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে রাজি নয় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। রাহুলকে বড় দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে যিনি সব থেকে বেশি সওয়াল করেন, সেই দিগ্বিজয় সিংহই বলছেন, “আমরা কাউকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরছি না।” বিজেপি বরাবরই অনেক আগে থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেয়। এ বার নির্ধারিত সময়ে লোকসভা হচ্ছে ধরলেও হাতে আর মাত্র দেড় বছর। এখন বিজেপি শীর্ষপদে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে উঠতে পারেনি। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়ে লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার কথা ভাবতে পারত কংগ্রেস। কিন্তু সেই পথে দল হাঁটছে না।
কেন এই সিদ্ধান্ত? সরকারি ভাবে দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতারা যুক্তি দিচ্ছেন, কোনও নির্বাচনেই কংগ্রেস আগে থেকে কাউকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেনি। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও এমন কোনও ঘোষণা ছিল না যে ক্ষমতায় এলে মনমোহন সিংহই ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন। এমনকী রাজ্যে-রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগেও আগাম মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম না ঘোষণা করাটাই কংগ্রেসের প্রথা। যদিও কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি না পৌঁছলে রাহুলের নাম ঘোষণা করার যৌক্তিকতা নেই। বর্তমানে যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে গোটা দেশেই কংগ্রেস-বিরোধিতার একটা আবহ তৈরি হয়েছে। এই হাওয়া না ঘুরলে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের আসন কমারই সম্ভাবনা বেশি। সেই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার হলেও তার স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় থাকবে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কংগ্রেসের মধ্যেই অন্য কারও নাম ভাবা হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে রাহুলকে কী ভাবে তুলে ধরবে কংগ্রেস? কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের মতে, রাহুলই যে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নেতা তা হয়তো ঘোষণার প্রয়োজন নেই, তবে দল ও সরকারের সন্মিলিত মুখ হিসেবে রাহুলকে তুলে ধরে তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও লোকসভা ভোটের আগে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা চালানোও জরুরি। রাহুলকে সমন্বয় কমিটির নেতৃত্বে আনাটা সেই প্রয়াসের অঙ্গ।
রাহুলকে দলের মুখ করে আর এক ক্ষেত্রেও এগিয়ে থাকতে চায় কংগ্রেস। শেষ পর্যন্ত লালকৃষ্ণ আডবাণী বা নরেন্দ্র মোদী, যাকেই বিজেপি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করুক, দেশের সামনে সেটাই হয়ে দাঁড়াবে তারুণ্যের বিরুদ্ধে প্রবীণের লড়াই। সংস্কার বনাম তার বিরোধীদের লড়াই।
বিজেপি-র সঙ্গে এই বৈপরীত্য তুলে ধরার পাশাপাশি ভোটের জন্য কী ভাবে তৈরি হচ্ছেন সনিয়া-রাহুল?
গত এক মাসে রাহুলের নেতৃত্বে সমন্বয় বৈঠকে স্থির হয়েছে, একলা চলো নীতি আপাতত সরিয়ে রেখে লোকসভা ভোটের আগে নতুন জোটসঙ্গী খুঁজতে নামবে কংগ্রেস। সে দায়িত্ব সামলাবেন কাজের মানুষ এ কে অ্যান্টনি। রাজ্যওয়াড়ি দলীয় পর্যবেক্ষকও বাছা হয়ে গিয়েছে। যত বেশি সম্ভব সংখ্যা নিয়ে জিতে আসার লক্ষ্যে ঝাঁপাতে ভোটের প্রার্থী বাছাইও শুরু করে দিতে চলেছে কংগ্রেস। রাহুল নিজেই এক সময় একলা চলো নীতির দাওয়াই দিয়েছিলেন। বিহার, উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে সেই পথেই চলেছে দল। কিন্তু লোকসভা ভোটে সেই নীতি থেকে সরে আসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন দলের প্রবীণ নেতারা। যে দিগ্বিজয় সিংহ এত দিন রাহুলের সুরে একলা চলো-র কথা বলতেন, তিনিও এখন নতুন নির্বাচনী সমঝোতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার কথা বলছেন, “অন্তত এই নির্বাচনে একলা চলো নয়।” বস্তুত জোট রাজনীতির বাস্তবতা মেনেই একলা চলো নীতির পথে যাচ্ছে না কংগ্রেস। সেই বাধ্যবাধকতা থাকবে জেনেই রাহুল গাঁধীর নামও প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে কংগ্রেসের পক্ষে ঘোষণা করা মুশকিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.