ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার তিন দিনের মধ্যেই পাল্টা তোপ দাগলেন জাতীয় স্তরের অ্যাথলিট পিঙ্কি প্রামাণিক। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, “পুলিশের মানসিক নির্যাতন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, আমাকে আত্মহত্যা করতে না-হয়! দিনকে রাত করে দিচ্ছে ওরা।”
দোহা এশিয়াডের সোনাজয়ী অ্যাথলিটের আরও অভিযোগ, ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত না-করে তিনি পুরুষ না মহিলা, তা-ই নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছে পুলিশ।
অনামিকা আচার্য নামে বাগুইআটির এক মহিলা গত জুনে ওই অ্যাথলিটের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগ আনেন। গ্রেফতার হওয়ার পরেও বারবার পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন পিঙ্কি।
সোমবার তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া চার্জশিটে তাঁকে পুরুষ বলে উল্লেখ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে ধর্ষণের অভিযোগও।
দীর্ঘদিন দমদম সেন্ট্রাল জেলে থাকার পরে জামিন পান তিনি। পুলিশের চার্জশিটের পরে লিঙ্গ-বিতর্কে আবার তাঁকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হওয়ায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন পিঙ্কি। এতটাই যে, এ দিন ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গ্রামের বাড়িতেও যেতে পারেননি। সারা দিন শিয়ালদহ স্টেশনে নিজের অফিসেই কাজ করেন। শিয়ালদহ থেকে বাড়ি ফেরার সময় বলেন, “মনটা খুব খারাপ। দাদা-ভাইদের ফোঁটা দিতে পারলাম না।” |
প্রার্থনা। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকের আগে পিঙ্কি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক |
শুধু পুলিশের মানসিক নির্যাতনের অভিযোগই নয়। পিঙ্কি জানান, কয়েক মাস ধরে পুলিশ তাঁর সঙ্গে যে-আচরণ করছে, তাতে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তবে তাঁর প্রতিবেশীরা যথেষ্ট সহানুভূতিশীল বলে মন্তব্য করেন ওই অ্যাথলিট। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ তেঘরিয়ায় তাঁর আইনজীবীর বাড়ির কাছে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েই পুলিশি চার্জশিটের গোপনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পিঙ্কি। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ আদালতে যে-চার্জশিট পেশ করেছে, তার গোপনতা রক্ষা করা হয়নি। ফলে ওই চার্জশিটের প্রতিলিপি তাঁদের হাতে পৌঁছনোর আগেই তিনি পুরুষ না মহিলা, এই নিয়ে জল ঘোলা হতে শুরু করেছে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান নীলু শেরপা চক্রবর্তী অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা নিয়ম মেনে গোপনতা রক্ষা করেই আদালতে চার্জশিট পেশ করেছি। পুলিশ পুলিশের কাজ করছে। মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে কিছু বলার নেই।”
এর পরে কী করবেন পিঙ্কি?
ওই অ্যাথলিটের আইনজীবী মাধব সান্যাল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “আমরা চার্জশিট ও মেডিক্যাল রিপোর্টের প্রতিলিপি হাতে পাব ২৬ নভেম্বর। সেই মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ করব।” চার্জশিট ও ডাক্তারি রিপোর্ট পাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে ঠিক করেছেন পিঙ্কি। নিজের বক্তব্য সরাসরি জানাতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তিনি বলেন, “আমার এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাব। অনেক সময়েই দিদির (মমতার) কাছে ঠিক কথা ঠিক ভাবে পৌঁছয় না। তাই আমি নিজে দেখা করে পুরো বিষয়টি খুলে বলতে চাই।”
পুলিশের বিরুদ্ধে পিঙ্কির তোপের দিনেই তাঁর হয়ে নতুন করে জোট বাঁধার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে ময়দানে। উঠেছে নতুন দাবি, ‘থার্ড সেক্স’ বা উভলিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। পিঙ্কির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার প্রথম পর্বেই তাঁর পক্ষে জোট তৈরি করতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার কুন্তলা ঘোষদস্তিদার। এ দিন তিনি বলেন, “কী হয়েছে, জানি না। রিপোর্টে কী আছে, তা-ও জানি না। কিন্তু আমার প্রশ্ন, থার্ড সেক্স বা উভলিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না কেন? পিঙ্কির অপরাধ কী? তাঁর এ ভাবে জন্মানোটাই কি অপরাধ? আমাদের দেখতে হবে, ওঁর অবস্থা যেন বন্দনা পালের মতো না-হয়।”
বনি বা বন্দনা পাল বাংলার মহিলা ফুটবল দলকে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। কিন্তু তাঁকেও পড়তে হয়েছিল লিঙ্গ-বিতর্কের আবর্তে। দীর্ঘদিনের ঝড়ঝাপটা সামলে এখন তিনি বিবাহিত জীবন যাপন করছেন শিলিগুড়িতে। পিঙ্কিকে যাতে বন্দনার মতো দুর্দশায় পড়তে না-হয়, সেই জন্য কোমর বাঁধছেন কুন্তলাদেবীরা। তিনি বলেন, “শুক্রবার সকলের সঙ্গে কথা বলে কিছু একটা করতে হবে।” পিঙ্কির পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সর্বভারতীয় অ্যাথলেটিক্স সংস্থার কর্তারাও। |