সম্পাদকীয় ২...
সুখের সময় নহে
উরোপ বিপর্যস্ত। গ্রিস, স্পেন, ইতালি, পর্তুগালে তীব্র বিক্ষোভ চলিতেছে। বুধবারের ধর্মঘটে বিভিন্ন শহর কার্যত অচল হইয়া পড়িল। বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ব্রিটেনেও বিপুল বিক্ষোভ এমনকী ইউরোপের সমৃদ্ধতম দেশ জার্মানিও বিক্ষোভের মানচিত্রের বাহিরে নাই। বিক্ষোভের কারণ কঠোর আর্থিক নীতি। ডুবিতে বসা অর্থনীতিগুলিকে বাঁচাইতে আর কোনও বিকল্প নাই। কিন্তু দফায় দফায় বেতন কমিয়া যাওয়া, পেনশন তহবিলে টান পড়াও সহ্য করা কঠিন। গ্রিসে সাম্প্রতিক কালে মোট পাঁচ বার বেতন কমিল। আথেন্সের রাস্তায় যে বিপন্ন মানুষের ঢল নামিবে, এবং সেই বিপন্নতা ক্রমে সরকার বিরোধী ক্ষোভের আগুনে রূপান্তরিত হইবে, তাহা অবশ্যম্ভাবীই ছিল। তাহাই হইয়াছে। বহু কর্মক্ষম মানুষ চাকুরি করিতে চাহিয়াও বেকার বসিয়া আছেন। স্পেনে প্রতি চার জন কর্মক্ষম এবং ইচ্ছুক মানুষের মধ্যে এক জনের চাকুরি নাই। গ্রিস, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইতালি, সর্বত্রই কর্মসংস্থানহীনতার হার দশ শতাংশের বহু ঊর্ধ্বে। একটি তুলনা প্রাসঙ্গিক হইবে সদ্য-সমাপ্ত মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ওবামার পুনর্নির্বাচনের পথে সর্বাপেক্ষা বড় প্রশ্নচিহ্নটি ছিল বেকারত্বের। সেই দেশে এই হার আট শতাংশের ধারে-কাছে। ইউরোপের সমস্যাক্রান্ত দেশগুলিতে গড়ে এই হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ। ক্ষোভের পরিমাণ অনুমান করা সম্ভব। অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি শুধরাইবে, তেমন আশা কম। গ্রিসেই যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার আর্থিক সাহায্যের বকেয়া দফাটি মঞ্জুর করিবার পূর্বে কঠোরতর আর্থিক নীতি প্রয়োগের শর্ত রাখিয়াছে। এই শর্তই ইউরোপের বাস্তব। অতএব, এই ক্ষোভও।
ইউরোপে যাহা চলিতেছে, তাহা দীর্ঘমেয়াদে চলিতে পারে না। আর্থিক নীতির এই কঠোরতাও সুস্থায়ী নহে, আর বিক্ষুব্ধ জনতা যে শিথিল নীতি দাবি করিতেছে, তাহা তো নহেই। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থানগত পার্থক্য বুঝাইয়া দেয়, আর্থিক নীতির কঠোরতা সম্বন্ধে সেই মহলেও প্রশ্ন রহিয়াছে। আবার, গ্রিস বা স্পেনের সরকার যে ভাবে জনমতের বিরুদ্ধে যাইবার ঝুঁকি লইয়াও কঠোর আর্থিক নীতির পথে হাঁটিতেছে, তাহাতে বোঝা যায়, অন্তত অদূর ভবিষ্যতে রাস্তার বিক্ষোভের নিকট নতিস্বীকারের সম্ভাবনা নাই। ইউরোপ আসলে এক চৌকাঠে দাঁড়াইয়া আছে আর্থিক অব্যবস্থা হইতে শৃঙ্খলায় পৌঁছাইবার চৌকাঠ। আজ অথবা কাল, ইউরোপকে এই চৌকাঠ ডিঙাইতেই হইবে। তাহার জন্য সম্পদের কিছুটা পুনর্বণ্টন অপরিহার্য। উচ্চশ্রেণি হইতে দরিদ্রশ্রেণিতে মার্কিন আন্দোলনের ভাষায় এক শতাংশ হইতে নিরানব্বই শতাংশে পুনর্বণ্টন। আর্থিক বৈষম্যের বিপরীত পথে হাঁটিবার প্রস্তাবটি ধনতন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্যই জরুরি। মার্কিন নির্বাচনে বারাক ওবামার সাফল্যে তাহারই অনুজ্ঞা নিহিত। ইউরোপকেও অতলান্তিকের অন্য পার হইতে এই সঙ্কেত পড়িতে হইবে। কোনও বিপ্লবের স্বার্থে নয়, বরং শান্তি ও স্থিতির স্বার্থেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.