আয় গেল না লক্ষ্যের ধারেকাছে
টুজি নিলামে হতাশাই রইল কেন্দ্রের
বাতিল হওয়া টুজি স্পেকট্রামের নিলাম শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত ভাবেই হতাশ করল কেন্দ্রীয় সরকারকে। দু’দিন নিলাম পর্ব চালিয়েও ন্যূনতম লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশও আয় করতে পারল না তারা। সব মিলিয়ে সাড়ে ন’হাজার কোটি টাকারও কম আয় হল কেন্দ্রের। শুধু তাই নয়, বিক্রি হল না নিলামে বরাদ্দ স্পেকট্রামের অনেকটাই।
২০০৮-এ প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজার আমলে বরাদ্দ এই স্পেকট্রামের জন্য কেন্দ্রের ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছিল বলে জানিয়েছিল সিএজি। এরপর ওই ২২টি সার্কেলে বিভিন্ন সংস্থার ১২২টি লাইসেন্স বাতিল করে ওই স্পেকট্রাম পুনরায় নিলামের জন্য নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রের আশা ছিল, কমপক্ষে ২৮ হাজার কোটি থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় হবে এই নিলামে। কিন্তু এ দিন নিলাম পর্ব শেষ হওয়ার পরে টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিব্বল জানান, ১৪৪টি ব্লকের মধ্যে ১০১টি ব্লকে স্পেকট্রামের নিলাম করে তাঁদের আয় হয়েছে মাত্র ৯৪০৭ কোটি টাকা। ফলে আর্থিক ঘাটতি ৫.৩%-এ বেঁধে রাখার যে আশা কেন্দ্র করেছিল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। কারণ স্পেকট্রামের নিলাম থেকে বেশি আয়ের অঙ্ক ধরেই ওই হিসেব কষা হয়েছিল। এবং এর আগে থ্রিজি স্পেকট্রামের নিলামে পাঁচ দিনে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা আয় করেছিল কেন্দ্র।
কিন্তু কেন এ ভাবে কেন্দ্রের আশায় জল ঢেলে দিল নিলামপর্ব? টেলিকম শিল্পের দাবি, এ জন্য দায়ী কেন্দ্রের ভুল নীতি। সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিওএআই) ডিরেক্টর জেনারেল রাজন এস ম্যাথুজ বলেন, “এ রকম যে হতে পারে তা আমরা গোড়া থেকেই বলে আসছিলাম।’’ এ জন্য মূলত তিনটি কারণকে দায়ী করেছেন তিনি। প্রথমত, বাজারের চাহিদা না বুঝে কেন্দ্র স্পেকট্রামের যে ন্যূনতম দর স্থির করেছিল তা অত্যন্ত চড়া। তাতে ব্যবসা চালানো কোনও সংস্থার পক্ষেই সম্ভব নয়। ফলে অর্থের সমস্যায় কোনও সংস্থাই দেশ জুড়ে সবক’টি সার্কেলের জন্য দরপত্র দেয়নি। আবার মুম্বই, দিল্লি, কর্নাটক ও রাজস্থানের স্পেকট্রামের জন্য দর দেয়নি কোনও সংস্থাই। কারণ সেই একই, স্পেকট্রামের চড়া দর। অন্য সংস্থাগুলি বিক্ষিপ্ত ভাবে, কিছু সার্কেলের জন্য দরপত্র দেয়। ফলে অনেক সার্কেলের স্পেকট্রামই বিক্রি না-হওয়ায় কেন্দ্রের আয় সীমিত হয়ে গিয়েছে।
তাঁর মতে দ্বিতীয় কারণ হল, বেশিরভাগ সংস্থারই লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে এই নিলামে অংশ নেয়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, বর্তমানে চালু সার্কেলের ব্যবসা, লগ্নি ও গ্রাহক টিকিয়ে রাখা। ফলে চড়া দর দিয়ে অন্য সার্কেলের স্পেকট্রাম কেনার জন্য তাদের বাড়তি উদ্যম ছিল না। উল্লেখ্য, পাঁচটি সংস্থার মধ্যে ভারতী এয়ারটেল ও ভোডাফোন ছাড়া তিনটি সংস্থারই লাইসেন্স আগে বাতিল হয়েছিল।
সবশেষে তাঁদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলেও বাতিল স্পেকট্রামের পুরোটা নিলাম করেনি কেন্দ্র। এর ফলে বাজারে যে কৃত্রিম অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাতে লগ্নি করতে ভরসা পায়নি সংস্থাগুলি। বস্তুত, তাঁদের হিসেবে মাত্র ৩৫% স্পেকট্রাম বরাদ্দ করা হয়েছিল নিলামে।
বাজারের চাহিদার কথা কার্যত ধরা পড়েছে সিব্বলের মন্তব্যেও। তাঁর বক্তব্য, বাজার যে ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, সে ভাবেই আয় হয়েছে কেন্দ্রের। তবে রাজস্ব ক্ষতি প্রসঙ্গে সিএজি-র বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
এ দিকে, অনেক সংস্থাই যেমন তাদের পুরনো সার্কেলের স্পেকট্রাম ফের জিতেছে, তেমনই অনেকেই ব্যর্থ হয়েছে। সেই সব সংস্থাকে আগামী জানুয়ারির পরে সংশ্লিষ্ট সাকের্লের পরিষেবা গুটিয়ে দিতে হবে, জানান ম্যাথুজ। তাঁর বক্তব্য, সেই সব সংস্থার গ্রাহকদের তারপর ‘মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি’-র মাধ্যমে অন্য সংস্থায় পরিষেবা নিতে হবে।
যেমন নরওয়ের টেলিনর ইউনিটেকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এত দিন পরিষেবা দিত। এখন তারা নতুন যৌথ সংস্থা টেলিইউঙ্গস গড়ে এই নিলামে অংশ নিলেও কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ ও মুম্বইয়ে স্পেকট্রাম জিততে পারেনি। সংস্থাটি এ দিন জানিয়েছে, এ দেশের আইন মেনে যথাসময়ে সেখানকার পরিষেবা বন্ধ হবে। সেখানকার গ্রাহকদের কী হবে?
এ প্রশ্নের কোনও জবাব সংস্থাটি এ দিন দেয়নি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.