ভিন্ন পথ
বিচ্ছেদে অধিকার
ডিভোর্স। বিবাদ বিচ্ছেদ। কিন্তু তা অধিকারহীন নয়। দেশের আইন-বলে সামাজিক ও আর্থিক অধিকারে সবল আপনি। বুঝে নিন সেই অধিকারের সাত সতেরো।

দাবি অনুযায়ী ভিন্ন হয় নারীর অধিকার
আদালতের চোখে সব মহিলার অধিকার কিন্তু এক রকমের না-ও হতে পারে। কারণ ঘটনা ও জীবন বিশেষে সকলের দাবি এক হয় না। এক জন মহিলা স্বামীর বিরুদ্ধে কোন গ্রাউন্ডে (অভিযোগের ভিত্তিতে) ডিভোর্স চাইছেন ও তাঁর সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান কী, অধিকারের প্রশ্নে সেটা আদালতের কাছে অন্যতম বিচার্য বিষয়।
ওই আর্থ-সামাজিক অবস্থানের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন,
১) কোনও মহিলা চাকরি করেন না, স্বামীর উপর নির্ভরশীল,
২) কেউ চাকরি করেন না, নির্ভরশীল এবং সন্তান আছে,
৩) কেউ অতি সাধারণ চাকরি করেন,
৪) কেউ অতি সাধারণ চাকরি করেন এবং সন্তান আছে,
৫) কেউ উঁচু পদে আসীন, বেতন খুব ভাল,
৬) কোনও মহিলার সন্তান রয়েছে, কিন্তু বাড়িতে তাকে দেখার কেউ নেই,
৭) কেউ বিয়ের কারণে কেরিয়ারের বড় সুযোগ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন,
৮) কেউ নির্যাতিত হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন,
৯) কাউকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে,
১০) কেউ আবার স্বেচ্ছায় বেরিয়ে এসেছেন,
১১) কোনও মহিলার সন্তান খুব ছোট,
১২) কোনও ক্ষেত্রে আবার সন্তান থাকলেও ফের বিবাহিত সম্পর্কে ঢোকার সম্ভাবনা আছে। এমনই বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী মহিলাদের দাবির ভিত্তিতে তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত করে আদালত। এক একটি ডিভোর্স মামলা বিশেষে যা এক এক রকমের হতে পারে।

সাধারণ ভাবে যা পেতে পারেন স্ত্রী
১) ফৌজদারি কার্যবিধির (ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোড) ১২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী খোরপোষ পাওয়ার অধিকারী স্ত্রী ও সন্তান। আগে এর পরিমাণ ছিল ১,৫০০ টাকা। এখন ওই ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়া হয়েছে।
২) মামলা দায়ের করে ডিভোর্স কিংবা বিবাহিত জীবনে ফিরে যাওয়ার আবেদন জানানো যায় হিন্দু বিবাহ আইনের ৯ নম্বর ধারায়। সেই অনুযায়ী ওই আইনের ২৪ নম্বর ধারায় অ্যালিমনি কিংবা মামলা চালানোর খরচ পেতে পারেন।
৩) হিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারায় পার্মানেন্ট অ্যালিমনি পেতে পারেন।
৪) হিন্দু অ্যাডপশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স আইন অনুযায়ী স্বামীর থেকে ভরনপোষণ দাবি করতে পারেন।
৫) একই ভাবে বিশেষ বিবাহ আইন অনুযায়ী অ্যালিমনি ও পার্মানেন্ট অ্যালিমনি দাবি করতে পারেন।
৬) যত দিন না স্ত্রী আবার বিয়ে করছেন, তত দিন স্বামীর রোজগারের এক পঞ্চমাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশ খোরপোষ পেতে পারেন।
৭) জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আর্থিক ভাবে স্বামীর যে অবস্থান, সেই একই অবস্থান দাবি করে আবেদন জানাতে পারেন।
৮) স্ত্রীধন সম্পত্তি অর্থাৎ বাপেরবাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি থেকে একজন মহিলা যা যা পেয়েছিলেন, সব ফেরত পেতে পারেন।
৯) যদি স্বামীর বাড়ি থেকে সম্পত্তি আটকে দেওয়া হয়, তবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬ নম্বর ধারায় মামলা করে তা ফেরত চাইতে পারেন। কিংবা পুলিশের দ্বারস্থ হতে পারেন।
১০) মিউচুয়াল কনসেন্ট বা সমঝোতার মাধ্যমে হওয়া ডিভোর্সেও এককালীন/থোক খোরপোষ চাওয়া যায়। ভরনপোষণ দাবি করা যায়। এবং সমস্ত স্ত্রীধন সম্পত্তি ফেরত পাওয়া যায়।
১১) হিন্দু বিবাহ আইনের ২৬ নম্বর ধারায় সন্তানের হেফাজতের অধিকার চাইতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতই নির্ধারণ করে, বাচ্চা কোথায় থাকলে তার সঠিক পরিচর্যা হবে ও সে সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
১২) মা সন্তানের অধিকার পেতে পারেন, যদি বাচ্চা খুব ছোট হয় এবং মায়ের সাহচর্য জরুরি হয়। দেখভালের খরচ দিতে হতে পারে বাবাকে। এ ক্ষেত্রেও অবশ্য বাচ্চার ভাল থাকাটাই আদালতের কাছে সর্বশেষ বিচার্য বিষয়। কাজেই ঘটনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আলাদা হতে পারে।
মেয়েদের সুরক্ষায় আসছে নয়া বিল
বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ডিভোর্সের মামলা দায়ের করার জন্য সঠিক গ্রাউন্ড না-পাওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে নিপীড়িত হচ্ছেন বহু মহিলা। না-পারছেন সেখানে থাকতে, না-পারছেন বেরিয়ে আসতে। এই অসহায়তার কারণে যে সামাজিক শোষণের শিকার হন তাঁরা, সেটা আটকাতে আসছে বিবাহ আইন সংশোধনী বিল, ২০১০।

এখানে আইন প্রণেতাদের যুক্তি
• বেশির ভাগ পরিবারে শুধুমাত্র পুরুষই রোজগেরে। কিন্তু পুরুষকে রোজগারের পথ করে দিতে নারীর অবদান কোনও অংশে কম নয়। তিনি নির্বিঘ্নে দৈনন্দিন জীবন চালাতে ও সকলের সব প্রয়োজন মেটাতে বিনামূল্যে শ্রম দেন, সন্তান পালন ও বয়স্কদের সেবা করেন, গৃহস্থালির কাজ করেন। তাই স্বামীর সম্পত্তিতে তাঁদের অধিকার কোনও অংশে কম নয়।
• বিয়ের পর বেশির ভাগ মহিলার কেরিয়ার তৈরির সুযোগ ব্যাহত হয়। তাঁকে সংসারের স্বার্থে আপস করতেই হয়। কারণ কর্মরতা মহিলাদের বহু ক্ষেত্রে সংসার সামলে কাজে বেরোতে হয়। সীমিত ক্ষমতার মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হওয়ায় ক্ষতি হয় কেরিয়ারের।

তাই মহিলাদের আরও কয়েকটি অধিকার দিতে চলেছে নয়া আইন
১) বৈবাহিক সম্পর্ক থাকাকালীন স্বামী বসতবাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনে থাকলে, তার ৫০ শতাংশের হকদার স্ত্রী।
২) ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থেরও অংশীদার স্ত্রী। তবে সেটার পরিমাণ গোটা ঘটনা ও মহিলাটির অবস্থান দেখে স্থির করবে আদালত।

পুরুষের অধিকার
১) ফৌজদারি কার্যবিধিতে ১২৫ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারায় বলা আছে, যদি কখনও কোনও বিবাহিত মহিলা বিনা কারণে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বা স্বেচ্ছায় স্বামীর সঙ্গে থাকতে অস্বীকার করেন কিংবা অ্যাডাল্টরিতে জড়িয়ে পড়েন, তা হলে তিনি খোরপোষ পাওয়ার অধিকারী হবেন না। তবে একজন মহিলা খোরপোষ পাবেন কি না, বা পুরুষ খোরপোষ দেবেন কি না, অথবা কী পরিস্থিতিতে দেবেন, সেটা সম্পূর্ণ আদালতের বিচার্য বিষয়।
২) হিন্দু বিবাহ আইনের ২৪ নম্বর ধারায় স্ত্রীর কাছে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে অ্যালিমনি চাইতে পারেন। বা মামলা চালানোর খরচ দাবি করতে পারেন। উপযুক্ত কারণ মানে, স্বামীর রোজগার নেই বা স্ত্রীর থেকে কম।
৩) হিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারায় উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে পার্মানেন্ট অ্যালিমনি দাবি করতে পারেন।
৪) আদালত যদি মনে করে সন্তান বাবার কাছেই বেশি ভাল থাকবে, পরিচর্যা ও লালন-পালন বেশি ভাল হবে, তা হলে সেই অধিকার দিতে পারে। আবার খুব ছোট সন্তানের জন্য মায়ের সাহচর্য জরুরি হয়। তাই সে ক্ষেত্রে মাকে বাচ্চার হেফাজতের অধিকার দেওয়া হলেও খরচ দিতে পারেন বাবা। সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাতের অধিকারও দাবি করতে পারেন তিনি।

মুসলিম মেয়েদের অধিকার
১) মুসলিম পার্সোনাল ল অনুযায়ী মুসলিম মেয়েরা ডিভোর্স দিতে পারেন না।
২) তবে মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অন রাইটস অফ ডিভোর্স ১৯৮৬) অনুযায়ী, স্ত্রীধন সম্পত্তি ফেরত পাবেন। ডিভোর্সের পর স্বামীর সম্পত্তিতে অবশ্য তাঁদের অধিকার মাত্র তিন মাস পর্যন্ত (ইদ্দত পিরিয়ড)।
৩) স্বামীর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিতে মহিলাদের কোনও অধিকার নেই। তবে পরিত্যক্ত মহিলারা ওয়াকফ বোর্ডে আর্জি জানাতে পারেন আর্থিক সাহায্যের জন্য। বোর্ড খোরপোষের ব্যবস্থা করতে পারে।
৪) মুসলিম মেয়েরাও ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ নম্বর ধারায় স্বামীর কাছে খোরপোষ দাবি করতে পারেন।
৫) মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী কখনও কখনও স্বামী-স্ত্রী আলোচনা করে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারেন। ইসলাম ধর্মে এই পদ্ধতি হল ‘খুল্লা’। এতে বিচ্ছেদ করতে গেলে স্ত্রী বিয়ের সময় যা যা যৌতুক হিসেবে পেয়েছিলেন, তার সবটা না-হলেও আংশিক ফেরত দিতে হয়। এই ফেরত দেওয়াকে বলা হয় ‘মুবরাত’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.