কিংফিশারের বিমান আদৌ আর কোনও দিন নীল আকাশে পাড়ি দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠল বৃহস্পতিবার। যখন বিজয় মাল্যের সংস্থাটি জানিয়ে দিল, জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে তাদের পাহাড় প্রমাণ নিট লোকসানের কথা। সেই লোকসানও হিসাবে কারচুপি করে কমিয়ে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছেন সংস্থার অডিটর-রা।
চলতি ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে সংস্থার নিট লোকসান ছুঁয়েছে ৭৫৪ কোটি টাকা। আগের বছরের ৪৬৯ কোটির তুলনায় ৬১% বেশি। যা তাদের জমা লোকসানকে টেনে নিয়ে গিয়েছে প্রায় ৯,০০০ কোটি টাকায়। সংস্থার আয় আগের বছরের একই সময়ের ১,৫৫৩ কোটির তুলনায় প্রায় ৮৭% কমে পৌঁছেছে ২০০ কোটিতে। সংস্থা পুনর্গঠন, কর মেটানো, ৮,০০০ কোটি টাকার ঋণ বাবদ খরচ ও সেই সঙ্গে উড়ান বন্ধ থাকার দরুন লোকসান মিলিয়ে সম্মিলিত ক্ষতির অঙ্ক ৯,০০০ কোটি ছুঁয়েছে তাদের। |
এর মধ্যেই সংস্থার অডিটর-রা এক রিপোর্ট-এ দেখান, তৃতীয় ত্রৈমাসিকের লোকসান প্রকৃতপক্ষে হত প্রায় ১,০৩২ কোটি টাকা। তাঁদের অভিযোগ, ‘সাধারণ ভাবে অনুমোদিত হিসাব পদ্ধতি’ মেনে ওই ফল প্রকাশ করেনি সংস্থা। এ ছাড়া, তাঁদের রিপোর্টে এটাও ধরা পড়েছে, ক্রমাগত ক্ষয় হতে থাকা নিট সম্পদ (সংরক্ষিত তহবিল ও উদ্বৃত্ত) খাতে অর্থ বেশি দেখিয়েছে কিংফিশার। ২০১২-র ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে এই সম্পদ ক্ষয় খাতে বাদ দিতে হত ১২,১৫৫ কোটি টাকা। সে জায়গায় সংস্থা বাদ দিয়েছে মাত্র ৭,৩৩৯ কোটি। পাশাপাশি, নিট সম্পদ কমা সত্ত্বেও চালু সংস্থা হিসাবেই ফলাফল প্রকাশ করেছে তারা।
কিংফিশার অবশ্য এরই মধ্যে জানিয়েছে, ফের উড়ান চালু করার জন্য সার্বিক পরিকল্পনা তৈরি করছে তারা। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, সংস্থাটিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এই মুহূর্তে ৩,০০০-৪,০০০ কোটি টাকা জোগাতে হবে। আর সেখানেই প্রশ্ন উঠছে, ইতিমধ্যেই ঋণ ও লোকসানের ভারে মৃতপ্রায় এই সংস্থাকে জীবন দিতে কে এগিয়ে আসতে রাজি হবে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে। কখন এবং কী ভাবে পুনরুজ্জীবনের জন্য অর্থ তারা হাতে পাবে, বা প্রকল্প সম্বন্ধে বিশদে কিছু জানায়নি সংস্থা। ঋণদাতা ব্যাঙ্কগুলি ইতিমধ্যেই নতুন মূলধন জোগানো বা লগ্নিকারী সংস্থা জোগাড়ের জন্য সংস্থাকে ৩০ নভেম্বরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। পাশাপাশি, কিংফিশারের লাইসেন্স নতুন করে নবীকরণের জন্যও ডিসেম্বরের মধ্যে পুনরুজ্জীবন প্রকল্প পেশের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। অন্যথায় লাইসেন্স নবীকরণ হবে না বলে সাফ জানান এক শীর্ষস্থানীয় সরকারি অফিসার। প্রসঙ্গত, মাসের পর মাস উড়ান বাতিল, কর্মী বিক্ষোভ, বেতন বাকি পড়া, ঋণদাতাদের ক্ষোভ ইত্যাদির জেরে সাময়িক ভাবে বাতিল করা হয় কিংফিশারের লাইসেন্স।
বস্তুত, গত ৮ বছর ধরেই টানা লোকসান গুনে চলেছে কিংফিশার। শেষ বার মুনাফার মুখ দেখেছিল ২০০৬-এর অক্টোবর-ডিসেম্বরে। লোকসানের দিক থেকে চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকেরটি দ্বিতীয় বৃহত্তম। এর আগে ৩১ মার্চে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে সব থেকে বেশি লোকসান হয়, ১,১৫২ কোটি টাকা। এ দিকে কিংফাশার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, এই খবরে বৃহস্পতিবার সংস্থার শেয়ার দর দুপুরের দিকে প্রায় ৩.৪% বেড়ে পৌঁছয় ১৩.২৬ টাকায়। দিনের শেষে তা দাঁড়ায় ১২.৮৯ টাকা, আগের দিনের থেকে একটু বেশি।
এ দিকে, বিশ্বের বৃহত্তম মদ প্রস্তুতকারক ব্রিটেনের সংস্থা দিয়াজিও, বিজয় মাল্যর ইউবি গোষ্ঠীর ইউনাইটেড স্পিরিট্স-এর শেয়ার কিনছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সূত্রের ইঙ্গিত শুক্রবারই চুক্তির কথা ঘোষণা করা হতে পারে। ইউবি গোষ্ঠীর মুখপাত্র অবশ্য মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে একটি সূত্রের খবর, বিজয় মাল্যর সংস্থাটির ৫১% পর্যন্ত শেয়ার ১০০-২০০ কোটি ডলারে নিতে পারে তারা। |