নতুন জিভ লাগিয়ে কালীপুজোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন কৃষ্ণকুমার
দুর্গার পুজো করতে পারেননি। কালীপুজো কিন্তু বাদ যাবে না কৃষ্ণকুমারের।
তিনটি মণ্ডপে দুর্গাপুজোর পুরোহিতের দায়িত্ব পেয়েছিলেন কৃষ্ণকুমার। কিন্তু পুজোর আগেই ধরা পড়ল জিভের ক্যানসার। অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হল জিভ। জিভ না থাকলে মন্ত্র উচ্চারণ করবেন কী করে! হাতছাড়া হল দুর্গাপুজোও। তবে পুরোহিত কৃষ্ণকুমার ঝা নতুন জিভ লাগিয়ে তৈরি হচ্ছেন দু’টি মণ্ডপে কালীপুজো করতে। জিভ বার করা দেবীর আরাধনা দিয়েই শুরু হবে তাঁর নতুন জীবন।
কৃষ্ণকুমারের বয়স ৩২ বছর। পারিবারিক পেশা যজমানি। থাকেন বাগুইআটিতে। স্ত্রী ও পাঁচ বছরের একটি সন্তান রয়েছে। বছর চোদ্দো আগে খৈনির নেশা শুরু। চলতি বছরের গোড়ায় জিভে ঘা হতে শুরু করে। মাসখানেক আগে সেই ঘা জিভের অনেকটা জায়গায় ছড়িয়ে যায়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, তাঁর জিভে ক্যানসার হয়েছে। এবং তা রয়েছে স্টেজ-থ্রি স্তরে। বাঁ দিকের কিছু অংশ ছাড়া বাকি জিভ অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়। এই ঘটনা দুর্গাপুজোর এক সপ্তাহ আগের।
বাড়িতে বসে কৃষ্ণকুমার বলছিলেন, “মনে হয়েছিল, মরে যেতে পারি। জিভ ছাড়া সংসার চালাব কী করে? মন্ত্র পড়েই তো আমার রোজগার।”
পুজোয় মগ্ন কৃষ্ণকুমার। —নিজস্ব চিত্র
সল্টলেকের এক বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে জিভ পুনর্গঠনের পরে পরিস্থিতি বদলেছে। চিকিৎসকেরা ‘মাইক্রোভাসকুলার রিকনস্ট্রাকশন’ পদ্ধতিতে কৃষ্ণকুমারের বাঁ দিকের পাঁজরের পাশ থেকে শিরা, ধমনী-সহ মাংসখণ্ড তুলে পুনরায় জিভ তৈরি করে দিয়েছেন। কৃষ্ণকুমার এখন নতুন জিভ নাড়াতে পারছেন। অনেকটা শুদ্ধ মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারছেন। জীবনের সঙ্গে তাঁর পেশাও রক্ষা পেয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মানুষের জিভ কাটা যায় বা বাদ দিতে হয় ক্যানসার হলে এবং দুর্ঘটনার কবলে পড়লে। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ’-এর প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর যত লোকের মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তাঁদের ৮৬ শতাংশই ভারতীয়। ভারতের মধ্যে পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দারাই মুখের ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত। কিন্তু কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলোয় জিভ পুনর্গঠনের হার অত্যন্ত কম।
কেন? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া আর কোনও সরকারি হাসপাতালে ‘সার্জিক্যাল অঙ্কোলজি’ বিভাগ না থাকাই এর প্রধান কারণ বলে মনে করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তারা। এসএসকেএমের কয়েক জন চিকিৎসকের যুক্তি, সরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের দিন ঠিক হওয়ার আগেই রোগ অনেক ছড়িয়ে যায়। জিভ আর পুনর্গঠনের পর্যায়ে থাকে না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক প্লাস্টিক সার্জন মনে করেন, অনেক শল্য চিকিৎসক (অঙ্কোলজিস্ট) রোগীর জিভের ক্যানসার আক্রান্ত অংশ কেটে বাদ দিয়ে রেখে দেন। জিভ পুনর্গঠনের জন্য আর প্লাস্টিক সার্জনের কাছে পাঠানো হয় না। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর বা তাঁর পরিবারের সচেতনতাও থাকে না।
কৃষ্ণকুমারের প্লাস্টিক সার্জন মণীশমুকুল ঘোষের কথায়, “জিভ বাদ গেলে গেলে তা পুনর্গঠন জরুরি। কেমোথেরাপির জন্য রোগীকে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হয়। জিভ না থাকলে ঠিক মতো খাওয়া সম্ভব নয়।” অন্য এক চিকিৎসক সুকৃৎ বসুর বক্তব্য, “দ্রুত চিকিৎসা শুরু এবং জিভ পুনর্গঠনের সময় শিরা ও ধমনী পুনর্গঠন খুব জরুরি। তা না-হলে জিভ তৈরি হলেও তা নাড়ানো যাবে না।”
কৃষ্ণকুমার জিভ পুনর্গঠনের সাত দিনের মধ্যে কথা বলছেন, খাচ্ছেনও। একটাই আফশোস, খাবারের স্বাদটা পাচ্ছেন না। কারণ নতুন জিভে স্বাদকোরক তৈরি করা যায়নি।

মুখ সামলে
আক্রান্তের মধ্যে জিভে ক্যানসারের হার
শহর ছেলেদের মধ্যে মেয়েদের মধ্যে
কলকাতা ৪.৭% ২%
মুম্বই ৬.৯% ২.৪%
চেন্নাই ৬.৯% ১.৬%
তথ্য: ন্যাশনাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রাম ২০১১
প্রতিরোধ কী ভাবে



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.