নিমতলা ঘাট প্রশস্ত করতে থাম গেঁথে বিশাল চাতাল হচ্ছে গঙ্গার বুকে। কিছু দিন বন্ধ থাকার পরে সেই কাজ ফের শুরু হয়েছে। ঘাটের প্রায় অধের্কটাই কলকাতা পুরসভার ওই নির্মাণকাজের দখলে। অথচ সেখানেই ফি বছর উত্তর কলকাতা ও উত্তর শহরতলির সব প্রতিমা বিসর্জন হয়। অর্ধেক বেদখল ঘাটে বিপুল পরিমাণ প্রতিমা বিসর্জন হবে কী করে? কপালে ভাঁজ সংগঠকদের।
গত সপ্তাহে কলকাতা পুলিশের তত্ত্বাবধানে পুজো কমিটিগুলোকে নিয়ে বৈঠকে অনেকেই নিমতলা ঘাটে বিসর্জনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই বাজে কদমতলা ঘাটের চেয়ে অনেকটা অপ্রশস্ত নিমতলা ঘাট। তা ছাড়া, শ্মশানের চাপ সেখানে দিন-রাত থাকে। সন্ধে থেকে প্রতিমা আসতে থাকলে কিছু পরে প্রতিমা নামানোরই জায়গা থাকে না। এমন একটা ঘাটের অর্ধেক দখল হয়ে থাকলে বিসর্জন হবে কী করে? এই প্রশ্নই তুলেছেন পুজোকর্তারা। হৃষিকেশ পার্ক সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক সনৎ দাশগুপ্ত বলেন, “নিমতলা ঘাটে কেবল সাতশো প্রতিমা বিসর্জন হয় না, সঙ্গে সাত হাজার লোকও যায়। ঘাট আগের অবস্থায় ফিরিয়ে না দিলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।” |

এ ভাবেই ছড়িয়ে রয়েছে লোহার রড, পাইপ। ছবি: দেবাশিস রায় |
শুক্রবার ওই ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, যেখানে প্রতিমা বিসর্জন হয়, তার অর্ধেকের বেশি অংশে নির্মাণকাজ চলছে। গঙ্গার বুকে ২০ মিটার জায়গা শালবল্লা আর বালির বস্তা ফেলে ঘেরা। পুরো জায়গাটা বালি আর মাটি ফেলে ভরাট করা। সেখানে লোহার রড, পাইপ ছড়ানো। রবীন্দ্র স্মৃতি উদ্যানের সামনে গঙ্গায় থাম তৈরির জন্য পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এই ঘাটে যে বিসর্জন করা সম্ভব নয়, সেটা জানান পুজো কমিটির কর্তারাই। জায়গাটা সাফ করে নিমতলা ঘাটকে ফের বিসজর্নের উপযোগী করে তুলতে কালীপুজো পর্যন্ত অন্তত এক মাস কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
বিভিন্ন ঘাটে বিসর্জনের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার মনে করেন, মহালয়ার পরে নির্মাণকাজ বন্ধ করে সাফাই শুরু করলে দশমীর আগেই ঘাট প্রস্তুত হয়ে যাবে। তাঁর কথায়, “পুজো কমিটিগুলোর উদ্বেগের কারণ নেই। আমরা যথাসময়ে ঘাট বিসর্জনের উপযুক্ত করে ফেলব।”
ইতিমধ্যে নিমতলা ঘাট দু’বার পরিদর্শন করেছেন পুলিশ এবং পুরকর্তারা। ডিসি (বন্দর) মেহবুব রহমান ছিলেন ওই দলে। তিনি বলেন, “পুরসভা নির্দিষ্ট সময়ে ঘাট বিসর্জনের উপযোগী করে দেবে বলেছে। তবে নিমতলা ঘাটে জায়গা কম হওয়ায় চাপ অনেকটাই বেশি।” পুলিশ অবশ্য চাইছে, উত্তর কলকাতার কিছু প্রতিমা বাজে কদমতলা ঘাটে নিয়ে যেতে। এতে নিমতলা ঘাটের চাপ কমে। কিন্তু উত্তর কলকাতা পুজো সংগঠকেরা ‘ঐতিহ্যের’ এবং ‘সুবিধার’ নিমতলা ঘাট ছাড়তে রাজি নন। |