পুজোর উদ্যোক্তারা ব্যস্ত থিম রূপায়ণে। জনতা কেনাকাটায়। অ-বামপন্থী নেতারা পুজো আয়োজনের তদারকিতে। এই উৎসবের আবহে সম্পূর্ণ নতুন কাজে মন দিচ্ছেন সিপিআই নেতারা। তাঁদের হাতে এখন নোটবুক রেডি করার দায়িত্ব!
শীঘ্রই ক্লাসে ঢুকতে হবে। এক-আধ দিন নয়! দু’দফায় আট দিন। তাই তৈরি করে রাখতে হচ্ছে নোটবুক।
পুজোর মরসুম এলে চিরাচরিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভাঁটা পড়ে। আন্দোলন, সভা-সমাবেশ করতে চাইলেও লোকের সাড়া থাকে না। কংগ্রেস বা তৃণমূলের নেতারা নিজেরাই জড়িয়ে থাকেন পুজোর উদ্যোগে। বামপন্থী নেতাদের সে সব বালাই নেই। পুজো কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ সাপেক্ষে পুজো-প্রাঙ্গনে মার্ক্সীয় সাহিত্যের স্টল দেওয়া ছাড়া এই সময়ে তাঁদের বিশেষ করণীয় থাকে না। এই ফাঁকা সময়কেই এ বার অন্য ভাবে কাজে লাগাতে চাইছেন সিপিআই নেতৃত্ব।
দুর্গা থেকে কালী পুজোর মধ্যবর্তী সময়টা এ বার আবাসিক শিক্ষণ শিবির করবেন বলে ঠিক করেছেন এই বাম শরিক দলের নেতারা। নিউ সেক্রেটারিয়েটের সামনে এই সপ্তাহে এআইটিইউসি-র জমায়েত করেই রাস্তায় নামা আপাতত বন্ধ। মহালয়ার পর থেকে একেবারে সেই ভাইফোঁটা মিটিয়ে প্রায় জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত প্রখর রাজনীতিতে একটু বিরাম। সেই অবসরেই পার্টি ক্লাস সেরে ফেলা হবে। তা-ও একটু ভিন্ন ধাঁচে। একসঙ্গে চার দিন করে থেকে দলের নেতা-কর্মীদের ক্লাস করতে হবে। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আলোচনায় ঠিক হয়েছে, এ ভাবে আবাসিক ক্লাস করলে দলের নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানো যাবে। আবার বেশ যূথবদ্ধ থাকার মনোভাব চাঙ্গা করা যাবে। পার্টি ক্লাস কমিউনিস্ট পার্টিতে অভিনব কিছু নয়। সেই চেনা ছককেই একটু উল্টে-পাল্টে বিস্তার করে নিতে চাইছে সিপিআই। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ৩ থেকে ৬ নভেম্বর কলকাতায় দলের রাজ্য সদর দফতর ভূপেশ গুপ্ত ভবনে আবাসিক ক্লাসের ব্যবস্থা হবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির জন্য। আর শিলিগুড়িতে ৯ থেকে ১২ নভেম্বর ক্লাস বসবে উত্তরবঙ্গের জন্য। মাঝে ৭ নভেম্বর দলীয় মুখপত্রের অর্ধ-শতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতায় বসবে আলোচনা-চক্রের আসর। সিপিআই সূত্রের খবর, এই ক্লাসে জেলা স্তরের নেতা-কর্মীদেরই ছাত্র হিসাবে রাখা হবে। যাতে তাঁরা ফিরে গিয়ে প্রয়োজনীয় পাঠ আবার দিতে পারেন নিচু তলার কর্মীদের।
দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বকে হাজির করে বা বিভিন্ন বিষয়ের নামী-দামি ব্যক্তিত্বদের এনে চমক দেওয়ার চেষ্টা তাঁরা করতে চান না, বলছেন সিপিআই নেতারা। পুরনো কমিউনিস্ট পার্টি হিসাবে সিপিআইয়ের সঙ্গে এ রাজ্যে শিক্ষা ও সংশ্লিষ্ট জগতের যাঁদের যোগাযোগ রয়েছে, তাঁদেরই শিক্ষক হিসাবে দেখা যাবে। কলকাতায় যাঁরা পড়াবেন, তাঁরা সকলে শিলিগুড়ি যাবেন না। সেখানে আবার অন্য ব্যাচ। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদারের কথায়, “পুজোর মরসুম মিটে গেলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আবার জোরদার আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে। মাঝের এই সময়টা আমরা এ বার কাজে লাগাতে চাইছি। রাজনীতি, অর্থনীতির হাল, সাম্প্রতিক বিশ্ব ও দেশের অবস্থা এবং অবশ্যই সংগঠন চালানোর খুঁটিনাটি আবাসিক ক্লাসে বোঝানো হবে।”
আর নোটবুক? সেটা তৈরি হচ্ছে সিলেবাস গুছিয়ে রাখার জন্য। মঞ্জুবাবু বলছেন, “দু’টো জায়গাতেই কী ভাবে কী চর্চা করা হবে, সে সব এই নোটবুকে দেওয়া থাকবে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টপকে রাতারাতি পঞ্চায়েতের ভোটবাক্স ভরিয়ে তোলার ‘সাজেশন্স’ সে নোটবুকে থাকবে না, বলাই বাহুল্য!
|
দ্বিতীয় বারের জন্য বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি হলেন রাহুল সিংহ। আগামী পঞ্চায়েত ভোটে দলকে এ রাজ্যে উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসাবে তুলে ধরাই এখন রাহুলবাবুর প্রধান লক্ষ্য। দলের সাংসদ চন্দন মিত্রের উপস্থিতিতে রবিবার কলকাতায় বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রিটার্নিং অফিসার হরেন্দ্রপ্রতাপ পাণ্ডে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাহুলবাবুকে সভাপতি ঘোষণা করেছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই ফের রাজ্য সভাপতি হলেন রাহুলবাবু। বিজেপি-তে আগে দ্বিতীয় বার সভাপতি হওয়ার নিয়ম ছিল না। সম্প্রতি সেই ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। ফের সভাপতি হওয়ার পরে রাহুলবাবুর বক্তব্য, “কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল তিনটি দলকেই মানুষ পরীক্ষা করে দেখেছেন। এখন রাজ্যে একটা রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় মানুষ বিজেপি-র দিকে আসছেন।” যে কারণে রাজ্যে বিজেপি-র সাংগঠনিক শক্তিও বাড়ছে দাবি করে তিনি বলেন, “এখন আমাদের পাখির চোখ পঞ্চায়েত ভোট।” পঞ্চায়েত-প্রস্তুতিতে দলকে উজ্জীবিত করতে ৩০ নভেম্বর সুষমা স্বরাজকে এনে কলকাতায় এনে জনসভা করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। |