|
|
|
|
|
|
|
দেড়শো পূর্ণ শিয়ালদহের |
প্রথম রেল |
বহু প্রতীক্ষার পর ১৫ আগস্ট ১৮৫৪ হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হল। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। প্রথম ট্রেনটিতে একটু স্থান পাবার জন্য হাজার তিনেক মানুষ আবেদন করেন। এর মধ্যে মাত্র কয়েকশো-কে এই সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়।’ বাংলায় রেল চলাচলের প্রথম দিনের সংবাদ। সে দিন বাঙালির জীবনে দারুণ উন্মাদনা। কলের গাড়ি নিয়ে হাজার জল্পনা। নির্ঘাত দেবতার হাত আছে! নাম হল ‘পুষ্পক রথ’। এক দিনের পথ এক ঘণ্টায় যাবে, অবিশ্বাস্য! ব্যবসায়ী রূপচাঁদ ঘোষ হুগলি যাচ্ছিলেন। ঘণ্টাখানেক পর শুনলেন হুগলি এসেছে, ভাবলেন দোকানে উনি যেমন খদ্দেরকে ঠকান, এখানেও লোকেরা তাঁকে ঠকাচ্ছে! ছিল আজগুবি ধারণাও। কানে তুলো দিতে হয়, বুকে শক্ত করে কাপড় না বাঁধলে বাতাসের ধাক্কায় বুক ফেটে যায়। ‘জীবনস্মৃতি’তে আছে, রেলে প্রথম ওঠার সময় সত্যপ্রসাদ বলেছিলেন, ‘বিশেষ দক্ষতা না থাকিলে রেলগাড়িতে চড়া এক ভয়ঙ্কর সঙ্কট, ... তারপর গাড়ি যখন চলিতে আরম্ভ করে, তখন শরীরের সমস্ত শক্তিকে আশ্রয় করিয়া খুবই জোর করিয়া বসা চাই, নহিলে এমন ভয়ানক ধাক্কা দেয় যে মানুষ যে কোথায় ছিটকাইয়া পড়ে তাহার ঠিকানা পাওয়া যায় না’। |
|
প্রথম রেলকে ঘিরে অনেক না-জানা তথ্য ও মজার কাহিনি রমেনকুমার সর-এর রেল / উনিশ শতকের বাঙালি জীবন ও সাহিত্যে (কমলিনী/দে’জ) বইটিতে। হাওড়ার পর শিয়ালদহ। প্রথমে কলকাতা থেকে চম্পাহাটি, পরে ক্যানিং। শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট যাত্রা শুরু ১৮৬২-এর ২৯ সেপ্টেম্বর। শুরুতে কাঁচা ছাউনির প্ল্যাটফর্ম ছিল চারটি। অজস্র খানাখন্দ আর জলাভূমি ভরা শিয়ালদহে রেলপথ পাতার জন্য প্রায় ছয় মাইল লম্বা ‘অ্যাপ্রোচ’ তৈরি করতে হয়েছিল। ১৮৬৯-এ ওয়াল্টার গ্র্যানভিলের নকশায় গড়ে ওঠে স্টেশনের পাকা ইমারত, মেন স্টেশন। পাশে সাউথ স্টেশন। অনেক পরে হাওড়ার সঙ্গে এই লাইনের সংযোগ করা হয়। শিয়ালদহ দেশের অন্যতম ব্যস্ত রেল স্টেশন। এই বছর তার দেড়শো বছর পূর্ণ হল। তা নিয়ে কারও অবশ্য বিশেষ মাথাব্যথা নেই। দেশ ভাগের পর উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিয়েছিল শিয়ালদহ (সঙ্গে বাঁ দিকে তারই ছবি)।
|
ব্রাত্যজন |
‘ক্যালকাটা স্কুল অফ অ্যাকটিং আই নেভার লাইক। অভিনয় সম্পর্কে আমার যে বোধ, সেটা কলকাতার সঙ্গে কোনোদিন মেলেনি, আজও মেলে না।’ জানিয়েছেন বালুরঘাট ত্রিতীর্থ-এর হরিমাধব মুখোপাধ্যায়। মলয় রক্ষিতের নেওয়া ‘মফস্সলী থিয়েটারওয়ালার’ এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি উস্কে দেবে দর্শকের ভাবনা ও তর্ক। ব্রাত্যজন নাট্যপত্র-এর (প্রধান সম্পাদক: ব্রাত্য বসু) সম্পাদকীয়তে স্পষ্টতই বলা হয়েছে: ‘চিন্তার উন্মার্গগামিতা যে অক্ষমতা তথা দৈন্যকেই প্রকাশ করে এ কথাটি যে মাঝেমাঝেই বেশ করে ঝালাই করে নেওয়া দরকার, সমসাময়িক টিপ্পনি কাটার ঝোঁকে অনেকেই আমরা আজ ভুলতে বসেছি।’ ক্রোড়পত্রে ব্রাত্যর সঙ্গে আলাপচারিতায় অরুণ মুখোপাধ্যায়, সঙ্গে সংকলিত তাঁর জীবন ও কর্মপঞ্জি। আছে অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘ছ-এ ছুটি’র চিত্রনাট্য। প্রভাতকুমার দাসের ‘বাংলা নাট্যপত্রের নানা পর্যায়’, সুবোধ পট্টনায়কের ‘উড়িষ্যার আধুনিক নাট্যের গতিপ্রকৃতি’, অর্ণব সাহার ‘বাংলা নাটকে যৌনতা’, চণ্ডী মুখোপাধ্যায়ের ‘বার্গম্যানের থিয়েটার’ ইত্যাদি প্রবন্ধ। ব্রাত্যর ‘হেমলাট’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ। অর্পিতা ঘোষের ‘বিষ্ণু বসু স্মারক বক্তৃতা’। নাট্যসমালোচনা, মৌলিক নাটক, আত্মকথা, নবীন নাট্যশিল্পী পরিচিতিতে ঋদ্ধ, বর্ণাঢ্য, বৃহদাকার নাট্যপত্রিকা।
|
বিক্রম |
বাটানগরে শৈশব-কাটানো ছেলে একদা সাহিত্যদুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন গোল্ডেন গেট কবিতার বইয়ে, স্যুটেব্ল বয় উপন্যাসে। পাশাপাশি ছবি আঁকা, ভাস্কর্য, গান গাওয়া, ক্যালিগ্রাফি... বিক্রম শেঠের বহুমুখী প্রতিভার কথা জানা ছিল। কিন্তু ‘অ্যাবসলিউট’ ভদকার বোতলের জন্য ছবি? তিনটি ছবি এঁকেছেন বিক্রম। লাল বোতলে কালো চিনা হরফ। চিনা ভাষায় ‘জিউ’ মানে বীররস। নীল বোতলে সোনালি রঙে উর্দুতে শায়রি, ‘না ম্যায়, ন মই।’ উর্দুতে মই মানে, মদ। আমি ছিলাম না, মদও ছিল না (সঙ্গের ছবি)। আর একটিতে সবুজ প্রেক্ষিতে, দেবনাগরী হরফে ‘পিয়াসা পেয়ালা’। ‘পুরনো জার্মান হরফ ব্যবহার করে আর একটা ছবি তৈরি করেছিলাম, সেটি আর দিইনি,’ জানালেন বিক্রম। বোতলে ছবি আঁকার পপ আর্টে বিক্রমই প্রথম নন। মার্কিন শিল্পী অ্যান্ডি ওয়ারহোল থেকে ভারতীয় শিল্পী সুবোধ গুপ্ত অনেকেই ওই ভদকার জন্য ছবি এঁকেছেন। কিন্তু ছবি আর বহু ভাষার ক্যালিগ্রাফিতে ‘অ্যাবসলিউট’ প্রেরণা এই প্রথম। স্টকহলম শহরের ‘মিউজিয়াম অব ওয়াইন অ্যান্ড স্পিরিটস’-এ অচিরে স্থান পেতে চলেছে বাঙালি বিক্রম শেঠের তৈরি ‘স্যুটেবল বট্ল’।
|
সে কাল এ কাল |
শুধু উনিশ শতক নিয়েই চর্চা হবে কেন, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাঙালির যে উজ্জীবন তা নিয়ে কেন কাজ হবে না? বিশেষত চল্লিশ-পঞ্চাশ দশকে চলচ্চিত্র চর্চার সূত্রে চিদানন্দ দাশগুপ্ত প্রমুখর উদ্যোগে যে ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলন, সে পরিবেশেই তো সত্যজিতের হাতে জন্ম নিল ‘পথের পাঁচালী’... এমন নানা অনুষঙ্গে পুরানো সেই দিনের কথা তুলে আনছিলেন অশোক মিত্র। ‘প্রথম চিদানন্দ দাশগুপ্ত স্মারক বক্তৃতা’ দিলেন টানটান ঋজু দাঁড়িয়ে, গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশনে। আয়োজক ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির সে দিন ৬৫ বছরের জন্মদিন, ’৪৭-এ জন্ম, জানালেন কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ্তশঙ্কর সেন। সে সময়ের স্মৃতি মৃণাল সেনের কথাতেও, সঙ্গে বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ অপর্ণা সেনের। আবার ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস আর নেহরু চিলড্রেন্স মিউজিয়ামের উদ্যোগে সে সন্ধ্যায় জোর তর্ক ‘আজকের বাংলা সিনেমা কতটা সামাজিক দায়বদ্ধ’ তা নিয়ে। বললেন চলচ্চিত্রকার অশোক বিশ্বনাথন ও শেখর দাশ, পরিচালনায় এস ভি রামন। আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাবের উদ্যোগে গোর্কিসদনে ৮-১১ অক্টোবর সঙ্গীত নিয়ে একগুচ্ছ আন্তর্জাতিক ছবি দেখা যাবে।
|
সাইকেল মিছিল |
স্বামীজির সার্ধশতজন্মবর্ষ উপলক্ষে এ বার দ্বিচক্র যানের মিছিল। মিছিল আসবে মুর্শিদাবাদ থেকে, গন্তব্য স্বামীজির বাড়ি। উদ্যোক্তা সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম। আশ্রমের সম্পাদক বিশ্বময়ানন্দ জানিয়েছেন, “ঠিক করেছিলাম ১৫০ জন সাইকেল আরোহী স্বামীজির বাণীসহ প্ল্যাকার্ড, ছবি নিয়ে মিছিল করে কলকাতায় আসবেন। মিছিলে এত মানুষ পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ ছিল। বিষয়টি এত উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে, ভাবতে পারিনি।” ইতিমধ্যেই ১৮০ জন আবেদন জানিয়েছেন। তাঁরা নিজেরাই তৈরি করছেন প্ল্যাকার্ড। ১৪ অক্টোবর যাত্রা শুরু সারগাছি থেকে। রানাঘাটে রাত্রিবাস। মহালয়ার ভোরে রানাঘাট ছাড়বে মিছিল। শেষ হবে স্বামীজির বাড়িতে।
|
মজলিস |
‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল জিনা ইহাঁ/ জরা হটকে জরা বাচকে ইয়ে হ্যায় বোম্বে মেরি জাঁ’। সিআইডি-র জনি ওয়াকার সাবধানে পা ফেলতে বলেছিলেন বলিউডের শহরে, নইলে পদস্খলনের সম্ভাবনা। সেই শহরকে ইতিহাসের পটে ধরতে চেয়ে কয়েক বছর ধরেই চলছিল একটি প্রকল্প ডেটস.সাইটস: প্রজেক্ট সিনেমা সিটিবোম্বে/মুম্বই। উদ্দেশ্য সে শহরের বিশ শতকের মনটি ধরে রাখা, সিনেমার ধারাবাহিকতায়। ‘মজলিশ’-এর সেই প্রকল্পের প্রথম পর্বটি বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে (তুলিকা বুকস)। কলকাতায় তার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ আজ, ম্যাক্সমুলার ভবনে, জাতীয় গ্রন্থাগারের ডিজি স্বপন চক্রবর্তীর হাতে। থাকছে একটি আলোচনাসভাও। বলবেন প্রকল্পের মূল চিন্তক মধুশ্রী দত্ত, রুচির যোশি, সদানন্দ মেনন, রোহন শিবকুমার প্রমুখ। আয়োজনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব উইমেন’স স্টাডিজ, ম্যাক্সমুলার ভবন, মজলিশ ও তুলিকা বুকস।
|
কথক |
|
সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী, রাজপুত্র-রাজকন্যা, দত্যি-দানো, সব হারিয়ে গিয়েছে। শৈশব মুখ ঢেকেছে কার্টুন, কম্পিউটার গেমস আর পড়ার ফাঁদে। ঠাকুমার গলা জড়িয়ে গল্প শোনা এখন ইতিহাস। অথচ এক সময় বড়রাও মজে যেতেন। চারণ, ভাট, কথকঠাকুররা জমিয়ে দিতেন চণ্ডীমণ্ডপ। সম্প্রতি এ শহরের ছোটদের গল্পের স্বাদ দিতে এসেছিলেন ইস্ট লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোরিটেলিং এবং ড্রামা’র শিক্ষিকা জান্তে গ্রিশম। কল্পনার সঙ্গে মুখভঙ্গি, গলার স্বরের ওঠানামার কারিকুরিতে তাঁর গল্প পায় অন্য মাত্রা। ছোটদের সঙ্গে সহজে মিশবেন, কিছু করবেন ওদের জন্য, তাই গল্প বলাকেই পেশা করেছিলেন ‘সেন্ট্রাল স্কুল অব টিচ অ্যান্ড ড্রামা’র এই প্রাক্তনী। দিল্লিতে ইন্টারন্যাশনাল স্টোরিটেলার্স ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে এসে ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে কলকাতার অক্সফোর্ড বুক স্টোরে তিনটি গল্প শোনালেন। ‘দ্য আর্ট অব স্টোরিটেলিং’ নামে প্রশিক্ষণ শিবিরেরও আয়োজন ছিল। ছোটদের সঙ্গে বড়রাও সে সব গল্প শুনে ছোটবেলায় ফিরে গেলেন।
|
বেলাদি |
সকলের কাছেই বেলাদি। সম্বোধনে মিশে আছে শ্রদ্ধা, ভালবাসা, আন্তরিকতা। এতেই তিনি সন্তুষ্ট। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স-এর এম এ বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট বা দেশি-বিদেশি বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পরিচয়টি প্রকাশ্যে আনতে চান না। প্রচারবিমুখ বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী বেলা দত্তগুপ্ত। ১৪ অক্টোবর তাঁর ৯১ তম জন্মদিনটি ঘরোয়া ভাবে পালনের প্রস্তুতি নিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। ৯১-তে পা দিয়ে চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত হলেও ক্ষুরধার প্রজ্ঞা ও স্মৃতিশক্তিতে এখনও তিনি এক বিস্ময়! ব্যস্ত রয়েছেন সমাজতত্ত্বের প্রথম বাংলা অভিধান নিয়ে। এখনও বহু গবেষক নিয়মিত আসেন পথ নির্দেশের জন্য।
|
অগ্রণী |
|
আদিম মানবের হাতে পাথরই ছিল প্রধান সম্বল। তাই দিয়েই তার যন্ত্রপাতি, তাই দিয়েই অস্ত্রশস্ত্র। পাথরের টুকরো চেঁছেছুলে তৈরি করা এই সব নমুনা ছড়িয়ে আছে আদিম মানুষের বাসভূমিতে, আজ তা প্রাগিতিহাসের প্রধান উপাদান। কী ভাবে তৈরি হত এগুলি, ব্যবহারই বা ছিল কেমন, তা নিয়ে চমৎকার এক কর্মশালার আয়োজন করল সেন্টার ফর আর্কিয়োলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিং, ইস্টার্ন ইন্ডিয়া। কলকাতায় এই প্রথম। আমেরিকার স্টোন এজ ইনস্টিটিউটের নবীন প্রাগিতিহাসবিদ পার্থ চহ্বাণ (সঙ্গের ছবি) বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব ও প্রত্নতত্ত্বের ছাত্রছাত্রীদের হাতেকলমে সব বোঝালেন, পাথরের টুকরো থেকে যন্ত্রপাতি তৈরি শেখালেন, এমনকী কাঁচা মাংস কী ভাবে কাটা হত প্রস্তরায়ুধের সাহায্যে, তা-ও করে দেখা হল। বই-পড়া পাঠ্যক্রমে এ সুযোগ মেলে না, ছাত্রছাত্রীরা তাই আপ্লুত। সেন্টার এ ধরনের কাজে বরাবরই সক্রিয় এবং অগ্রণী, পাশাপাশি হয়ে গেল ওদের প্রাচীন সেরামিকস নিয়ে একটি প্রশিক্ষণশিবির, চলছে মুদ্রা চর্চা বিষয়ে আর একটি। এ দিকে পূর্বভারতের ইতিহাস চর্চার দেশজ উপাদান বিচার-বিশ্লেষণে উদ্যোগী এ শহরের আর এক প্রতিষ্ঠান, ‘গ্রাম-জনপদ’। ভারতীয় ইতিহাস গবেষণা পর্ষদের সহায়তায় তাদের আলোচনাসভা বাংলা আকাদেমির জীবনানন্দ সভাঘরে, ১২-১৩ অক্টোবর সকাল ১১টা থেকে। মূল ভাষণ রজতকান্ত রায়, সমাপ্তি ভাষণ রমাকান্ত চক্রবর্তী। নবীন-প্রবীণ আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষকদের সঙ্গে থাকছেন হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর চক্রবর্তী, শুচিব্রত সেন, রাজেন শইকিয়া, রতনলাল চক্রবর্তী প্রমুখ। প্রধান অতিথি ভারতীয় সংগ্রহালয়ের অধিকর্তা অনুপ মতিলাল।
|
বৈতানিক |
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গণে মাঘোৎসবের অনুষ্ঠানে ওই বাড়িরই এক শিশু শিল্পী পরিবেশন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে ‘তুমি যত ভার দিয়েছো সে ভার করিয়া দিয়াছো সোজা’। শিশুটি বড় হয়ে সঙ্গীত জগতে খ্যাতনামা হবে, এমনটাই লিখেছিল তৎকালীন ইংরেজি পত্রিকা বেঙ্গলি। শিশুটি কবির ভ্রাতুষ্পুত্র সৌমেন্দ্রনাথ। তাঁর কাছে শোনা হিন্দুস্তানি গান ভেঙেই রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন ‘কার বাঁশি নিশিভোরে বাজিল’, ‘অশ্রুভরা বেদনা দিকে দিকে বাজে’, ইত্যাদি গান। ‘ওই মহামানব আসে’ গানটির প্রেরণা যে সৌমেন্দ্রনাথই তার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন রবীন্দ্র-জীবনীকার প্রভাতকুমার, শান্তিদেব ঘোষ, মৈত্রেয়ী দেবী। ‘বৈতানিক’ প্রতিষ্ঠা করে রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছার মর্যাদা দিয়েছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ। নিজে রচনা করেছিলেন দু’শোর বেশি গান। আজ তাঁর ১১২ তম জন্মদিন। এই উপলক্ষে বৈতানিকে তাঁর গানের অনুষ্ঠান হল গতকাল, আছে আজও। পাঠ ও গানে অমিত দাশ, সুবিদ ঠাকুর, আলপনা সেনগুপ্ত, উমা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
|
পোশাক-শিল্পী |
আজকাল পিরিয়ড ফিল্ম বানাতে গিয়ে অনেক সময়ই বক্তব্য ছাপিয়ে ফিজিক্যাল ডিটেলের খুঁটিনাটি বড় হয়ে ওঠে, ফোকাস ঠিক থাকে না, ছবির পিছনে ভাবনাটা এলোমেলো হয়ে যায়। এই ভারসাম্যের ব্যাপারটা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে বেদব্রতর সঙ্গে। ও পুরো ব্যাপারটাই ছেড়ে দিয়েছিল আমার ওপর।’ নীলাঞ্জনা ঘোষ। বেদব্রত পাইনের প্রথম ছবি ‘চিটাগঙ’-এর কস্টিউম ডিজাইনার। মা শ্রীলতা সরকার শান্তিনিকেতন কলাভবনের ছাত্রী, কলকাতায় প্রথম কাঁথাশিল্পের কাজ শুরু করেন, তাঁর স্মৃতিতেই বালিগঞ্জ প্লেসের উইভার্স সেন্টার ফর আর্টস-এ কাঁথাশিল্পের প্রদর্শনী করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের ছাত্রী নীলাঞ্জনা, ৭-৮ অগস্ট। গত তিন দশক ধরে তিনি পোশাক-পরিকল্পক, প্রধানত স্বামী গৌতম ঘোষের ছবিতে। মা ভূমি, দখল, অন্তর্জলী যাত্রা থেকে কালবেলা, যাত্রা অবধি নানা ধরনের পিরিয়ড ফিল্মে কাজ করেছেন। আর ইংরেজ অফিসার, মাস্টারদা, নির্মল সেন, অনন্ত সিংহ, গণেশ ঘোষ, প্রীতিলতা, কল্পনার পোশাক ডিজাইন করেছেন বইপত্র পড়ে, ছবির বই ঘেঁটে। ‘মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলেরা ধুতি-শার্ট পরত, মেয়েরা তাঁতের শাড়ি। আশি বছর আগেকার ফিল-টা আনার চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে ভেবেছি কসটিউম-টা যাতে এ-ছবির বিপ্লবী বক্তব্যেরও অংশীদার হয়ে উঠতে পারে,’ জানালেন নীলাঞ্জনা। |
|
|
|
|
সব্যসাচী |
যে দিন ডিরেক্টর পদে যোগ দিলেন, সে দিন কর্মীরা বয়কট করেছিলেন। আর আজ? পাঁচ বছর পরে সেই কর্মীদের নিয়েই তাঁর যৌথ পরিবার। মুম্বইয়ের সিএসএমভিএস বা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বস্তু সংগ্রহালয়ের (প্রিন্স অব ওয়েলস মিউজিয়াম) ডিরেক্টর জেনারেল সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় আদতে বোলপুরের মানুষ। এখন তাঁর ডাক আসে সারা পৃথিবী থেকে, মিউজিয়াম বিষয়ে তাঁর ভাবনার কথা জানতে চান তাঁরা। হ্যাঁ, গত পাঁচ বছরে সিএসএমভিএস-কে যে মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছেন সব্যসাচী আর তাঁর ‘পরিবার’, তা ভারতে তুলনারহিত। তাঁদের সংগ্রহশালা রাজ্য বা কেন্দ্র, কোনও সরকারের বার্ষিক অনুদানে চলে না। শুধু কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক সংগ্রহশালা উন্নয়নে সম্প্রতি এককালীন অনুদান দিয়েছে। তা হলে এত নতুন নতুন গ্যালারি, এত উন্নয়ন সম্ভব হল কী করে? এগিয়ে এসেছেন বহু মানুষ, নিঃশর্তে সহায়তা করেছেন এই উদ্যোগপর্বে। বলা ভাল, তাঁদের এ কাজে উৎসাহিত করতে পেরেছেন সব্যসাচী। শুধু অর্থ নয়, ব্যক্তিগত নানা অমূল্য সংগ্রহও এসেছে সংগ্রহশালায়। জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর একটি বালুচরি শাড়ি ছিল কলকাতায়, এ শহরের এক বিখ্যাত সংগ্রহশালায় বহু চেষ্টাতেও তার ঠাঁই হয়নি। সব্যসাচী সেটি নিয়ে গিয়ে সযত্নে রক্ষা করছেন।
স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একবার তাঁকে বলেছিল, মিউজিয়ামে এত সব মূর্তি, তারা কেউ কথা বলে না, কেন যাব সেখানে? সিএসএমভিএস এখন সতেরোটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কাজ করে, সব রকম ছেলেমেয়ের সেখানে নিয়মিত যাতায়াত। মূর্তিরা আজও কথা বলে না, কিন্তু তারা কী বলতে চায় সেটা বোঝাতে পেরেছেন ওঁরা। আজকের সংগ্রহশালাকে মানুষের সঙ্গে যতটা সম্ভব যুক্ত করতে চান সব্যসাচী। সে কথাই বলে গেলেন সম্প্রতি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল আয়োজিত এক আলোচনায়। |
|
|
|
|
|
|