এক দিকে, পর্যটন শিল্পে অগ্রগতি না হওয়ায় কার্যত ভর্ৎসনা করা, অন্য দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে কঠোর হওয়াদক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশ-প্রশাসনকে নানা সমালোচনায় বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে বেরিয়ে প্রকাশ্যে জেলা প্রশাসনের প্রশংসা করলেও ভিতরের খবর, জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের কড়া সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ডায়মন্ড হারবারের একটি হোটেলে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে এ দিন প্রায় দু’ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে রাজ্য পুলিশের ডিজি, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিভিন্ন দফতরের সচিব ছিলেন। জেলার উন্নয়ন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত এক আধিকারিকের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়েছেন পর্যটন, আয়লা দুর্গত এলাকার কাজ এবং কিছু এলাকার আইনশৃঙ্খলার প্রসঙ্গে। রাজ্য পর্যটন দফতরের এক শীর্ষ কর্তাকে উনি ধমকে বলেছেন, আমি পরিকল্পনা করে দিচ্ছি। টাকা দিচ্ছি। অথচ এখানে কিছুই হচ্ছে না। আমার সাথে ইয়ার্কি হচ্ছে? সেচ দফতরের কাজকর্ম নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।’’ |
রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে জেলাশাসকের নেতৃত্বে পর্যটন শিল্পে উন্নয়নের লক্ষে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পর্যটন শিল্পে এই জেলায় আশানুরূপ কোনও অগ্রগতিই হয়নি।” জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগমকে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সাংবাদিকদের বলেন, “জেলায় উন্নয়নের কাজ গতি পেয়েছে। একশো দিনের কাজ গত তিন বছরের থেকে এ বছর সব থেকে বেশি হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সামগ্রিক ভাবে উন্নয়নের কাজ আশাপ্রদ। আমি খুশি। জেলাশাসককে ধন্যবাদ জানাই।”
বছর খানেক এই জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি যে-সব নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে সব নিয়েও এ দিন খোঁজখবর করেছেন মমতা। ভাঙর-১, ফলতা, ক্যানিং ও ডায়মন্ড হারবারের বিডিওদের ১০০ দিনের কাজে মহিলাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির নির্দেশ দেন। মগরাহাট ও কুলপি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দ্রুত সংস্কার করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিভিন্ন থানার ওসিদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভাঙরের ওসিকে বলেন, “কৃষকদের জমির মাটি কেটে নিচ্ছে মাফিয়াদের একাংশ। সে দিকে নজর দিন। গরিব কৃষকেরা যাতে চাষ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।” গত এক বছরে জীবনতলা থানা এলাকার মৌখালি ভেড়ির দখল নিয়ে কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন ওই বিষয়টি নিয়ে জীবনতলার ওসিকে ‘সতর্ক’ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “আপনার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গুরুত্ব দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করুন।” সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে কুলপি, মন্দিরবাজার, বজবজ থানার ওসিদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কঠোর পদক্ষেপ করবেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।”
|
মমতার ঘোষণা |
• ডায়মন্ডহারবারে মেয়েদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়
• জেলার প্রতিটি ব্লকে আইটিআই
• ডায়মন্ডহারবারে ইলিশ রিসার্চ সেন্টার
• ভাঙড়ে সংখ্যালঘু মেডিক্যাল কলেজ
• পৃথক স্বাস্থ্য উন্নয়ন মহকুমা হল ডায়মন্ডহারবার
• এমআর বাঙুর, বারুইপুর, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ডহারবার ও গার্ডেনরিচ হাসপাতাল
হবে ‘মাল্টি পারপাস স্পেশালিটি হাসপাতাল’
• সাগরদ্বীপ, সজনেখালি ও গঙ্গাসাগরে বিশেষ পর্যটনকেন্দ্র
• ‘আফ্রিকান সাফারি’র ধাঁচে সুন্দরবন সাফারি |
|
বৈঠক শেষে সরিষার জনসভায় বক্তৃতা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বৃষ্টির জন্য সভা সংক্ষিপ্ত করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী একগুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা করেন সেখানে। গত বছর ডিসেম্বরে বিষমদ খেয়ে সংগ্রামপুরে মারা গিয়েছিলেন ১৭২ জন। মৃতদের পরিবার-পিছু ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিপূরণের টাকা নগদে মেটানো যাবে না। সেই মতো ডাকঘরে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলির নামে ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ খোলার কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলির মধ্যে সাত জনের হাতে এ দিন আমানতের কাগজপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর সভা উপলক্ষে ডায়মন্ড হারবারের চারটি স্কুলে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছিল। বুধবার দুপুরের পরে তিনটি স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার চারটি স্কুলেই পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ‘পুষিয়ে দেওয়া’ হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। |