|
|
|
|
ধৃত টিএমসিপি নেতার জামিন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
শিক্ষক সম্মেলনে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা সৌমেন চক্রবর্তীর ধরা পড়া ও জামিন নিয়ে নাটক চলল দিনভর।
গত শুক্রবার রাতে বামবিরোধী মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির রাজ্য সম্মেলনে হামলা চালিয়ে মারধর ও ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে তমলুক শহরের মালিজঙ্গলপাড়া এলাকায় বাড়ি থেকে মূল অভিযুক্ত সৌমেনকে গ্রেফতার করে তমলুক থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক অন্তবর্তীকালীন জামিনের নির্দেশ দেন।
এ দিকে সৌমেনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তমলুক থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক-সহ স্থানীয় তৃণমূলের নেতারা। তমলুকের উপপুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ন রায়, কাউন্সিলর সুব্রত রায়, তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন মাইতি, শহর সভাপতি দিব্যেন্দু রায় প্রমুখেরাও ওই বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টা নাগাদ সৌমেনকে আদালতে তোলার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করছিল পুলিশ। সেই সময় থানার সামনেই সৌমেনকে ঘিরে ধরেন টিএমসিপি সমর্থকরা। তখন পুলিশের উপস্থিতিতেই থানার সামনে একটি উঁচু বেদিতে উঠে বিক্ষুব্ধদের শান্ত করতে একপ্রস্থ ভাষণ দেন সৌমেন। এরপর থানা থেকে মিছিল করে তমলুক আদালতের দিকে যান তৃণমূল সমর্থকরা। আদালতের কাছেই তমলুক পুরসভার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভসভা করে তৃণমূল। |
 |
তমলুক থানায় ভাষণ ধৃত টিএমসিপি নেতার |
অধিকাংশ অভিযোগই জামিনযোগ্য হওয়ায় অন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়ে যান সৌমেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ ভট্টাচার্য সপ্তাহে দু’দিন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের কাছে হাজিরা দেওয়ার শর্তে ও এক হাজার টাকার বন্ডে জামিনের নির্দেশ দেন সৌমেনকে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, একমাত্র চুরি ছাড়া সমস্ত অভিযোগই জামিনযোগ্য ছিল। চুরির পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুলিশ দিতে না পারায় জামিন পেতে অসুবিধা হয়নি এই ছাত্রনেতার।
কিন্তু আচমকা বামবিরোধী সম্মেলনে তৃণমূলের ছেলেরা হামলা চালালই বা কেন? যেখানে সেই দিনই তমলুক রাজ ময়দানে সম্মেলনের উদ্বোধন করে প্রকাশ্য সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন খোদ তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী!
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গণ্ডগোলটা আসলে তমলুকের কলেজ ভোট নিয়ে। তমলুকে ১৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল এসইউসি প্রভাবিত ডিএসও। কিন্তু জেলার অন্য কলেজগুলির মতো এই কলেজেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জিততে চেয়েছিল বলে ডিএসও-র দাবি। ভয় দেখাতে ডিএসও-র পাঁচ প্রার্থীকে তৃণমূলের লোকেরা তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ। পাল্টা টিএমসিপি-র এক কর্মীকে ডিএসও-র সদস্যরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। ডিএসও-র ওই সদস্যরা শিক্ষক সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাই বদলা নিতেই সম্মেলনে তৃণমূলের ছেলেরা হামলা চালান বলে অভিযোগ। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা সৌমেন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন সমর্থক সম্মেলন-স্থলে হামলা, ভাঙচুর চালান ও কয়েকটি সাইকেল নিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ। শিক্ষক সমিতির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তপন জানা, বীরভূমের শিক্ষক সমরজিৎ বর্মন-সহ মোট ৭ জন আহত হন। ৬ জন তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এই ঘটনায় সৌমেন চক্রবর্তী-সহ পাঁচ টিএমসিপি নেতার বিরুদ্ধে তমলুক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সমিতির রাজ্য সম্পাদক শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকেও নালিশ জানান শুভঙ্করবাবু। এরপরই বুধবার রাতে তমলুক থানার পুলিশ মূল অভিযুক্ত সৌমেনকে গ্রেফতার করে। |
|
|
 |
|
|