শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টু পাল কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় শিলিগুড়ি পুরবোর্ডে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। শনিবার পুরসভার মাসিক অধিবেশনে নান্টুবাবু প্রবেশ করা মাত্র কংগ্রেস ও বাম কাউন্সিলরদের বিক্ষোভ, কটূক্তি, টেবিল চাপড়ানো, বোতল বাজানোর জেরে অধিবেশন কার্যত পণ্ড হওয়ায় সেই শঙ্কা সত্যি হল।
পুজোর মুখে অধিবেশন বাতিল হওয়ায় রাস্তা মেরামতি থেকে নিকাশি ব্যবস্থা সংক্রান্ত বহু জরুরি কাজ সুষ্ঠুভাবে হবে কি না তা নিয়েও এ বার প্রশ্ন উঠে গেল। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত এ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা অবশ্য দাবি করেন, মুলতুবি হওয়া অধিবেশন যে কোনও দিন ডাকা যেতে পারে।
কংগ্রেস ও বাম কাউন্সিলররা অবশ্য পুর চেয়ারম্যানের সভা পরিচালনার ‘নৈতিক অধিকার’ নেই বলে দাবি করেছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “উনি (নান্টু পাল) নিজে মুখে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। সভা চালানোর নৈতিক অধিকারই ওঁর নেই।” |
কংগ্রেসের মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠক, সীমা সাহার অভিযোগ, “কখনও সিপিএম, কখনও কংগ্রেস, কখনও তৃণমূল করেন নান্টু। উনি চিরকাল সুবিধাবাদী মানুষ।”
নান্টুবাবু অবশ্য পাল্টা বলেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের বন্ধুত্ব যে কতটা গভীর তা ফের স্পষ্ট হল। আমি নির্বাচিত চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান নিরপেক্ষ ভাবে সভা পরিচালনা করেন। হেনস্থা করে আমাকে সরানো যাবে না। কংগ্রেসের চিঠি পাইনি। পেলে আমি দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”
বর্তমানে পুরসভায় কংগ্রেসের ১৪ ও বামেদের ১৭ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। নান্টুবাবুকে নিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলদের সংখ্যা ১৫। কাজেই কংগ্রেস ও বামেরা একই অভিযোগে নান্টুবাবুর বিরোধিতা করলে মাসিক অধিবেশন হওয়া বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। তা হলে শিলিগুড়ি পুরসভার ভবিষ্যৎ কী?
পুরসভায় জটিলতা, পরিষেবা নিয়ে আশঙ্কার বিষয়ে ওয়াকিবহাল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “কংগ্রেস পুরসভার অন্যতম শাসক দল। তাঁরাই সিপিএমের হাত ধরে পুজোর মুখে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পাশ করতে দিল না। চেয়ারম্যানকে নিয়ে কোনও বক্তব্য থাকলে কংগ্রেস তাঁকে অপসারণের জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারত। তা না করে সভা বানচাল করল।” এ ব্যাপারে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “নান্টুবাবু যা করেছেন, তা পুরসভার ইতিহাসে আগে কোনদিন ঘটেনি।” |