মঙ্গল গ্রহে নদী ছিল, তার প্রমাণ পেয়েছে নাসা। এ বার সেই নদীর গতিপথ সন্ধানের চেষ্টা করবে মঙ্গলযান, রোভার কিউরিওসিটি।
নাসার বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ শনিবার আনন্দবাজারকে জানান, নদীখাত মিলেছে। এ বার লক্ষ্য তার চলার পথ
|
শিল্পীর চোখে |
খুঁজে বার করা। কিউরিওসিটি ওই খাতের আশপাশের এলাকা খুঁজবে। গতিপথ মিললে নদীর উৎস ও কোথায় তা শেষ হয়েছিল, সেটা জানা যাবে।
কী ভাবে? খাত ধরে চললে পাথরের গায়ে জলের দাগ দেখে নদীর গতিবেগ বোঝা সম্ভব। আপাতত যে ছবি মিলেছে, তা দেখে গবেষকেরা আঁচ করেছেন, সেকেন্ডে অন্তত তিন ফুট বেগে নদী ছুটত। এ বার ওই এলাকার আশপাশে ওই নদীর খাত মেলে কি না, সেটাই দেখার। এ প্রসঙ্গে চমৎকার একটি উদাহরণ দিয়েছেন অমিতাভবাবু। তিনি বলেন, “হরিদ্বারে গঙ্গার যে গতি, তা হুগলিতে দেখা যায় না। কারণ, উৎসের কাছে গতি তুলনায় বেশি থাকে। মোহনার কাছে (হুগলি গঙ্গার মোহনার কাছে) কম। গতির তফাতে পাথরের ক্ষয়েও তারতম্য দেখা যায়।” একই ভাবে মঙ্গলেও পাথরের ক্ষয় দেখে চলবে নদীর গতিপথ সন্ধান। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নদীর মোহনায় গিয়ে কোনও সাগরের খোঁজ মিললে, সেটাও মানবসভ্যতার কাছে এক চমকপ্রদ আবিষ্কার হবে।
৬ অগস্ট মঙ্গলে পা দেওয়ার পর থেকে একের পর এক ছবি পাঠাচ্ছিল কিউরিওসিটি ওরফে ‘মিস কৌতূহল’। সম্প্রতি সেখানে ফুটে ওঠে, এক খাতের চিহ্ন। যা দেখে চমকে ওঠেন বিজ্ঞানীরা। |
|
|
কিউরিওসিটির চোখে মঙ্গলে ছোট ধারা ও নদীর খাত |
|
ছোট-বড় পাথরের গায়ে আঁচড় দেখে তাঁরা বুঝতে পারেন, কোনও সময়ে ওই খাত দিয়েই বইত নদী। এখন জল না থাকলেও পাথরের গায়ে সে তার চিহ্ন রেখে গিয়েছে।
নদীর খোঁজ মেলায় লাল গ্রহের মাটিতে প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ আরও জোরালো হয়েছে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, নদীখাত প্রমাণ করে ওই গ্রহে দীর্ঘদিন ধরে জলের প্রবাহ ছিল। অমিতাভবাবু বলছেন, নদী বয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বিষয় বায়ুচাপ। পৃথিবীতে উপযুক্ত বায়ুচাপের কারণেই জলপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অনুমান করা যায়, মঙ্গলেও একই ধরনের বায়ুচাপ ছিল। না হলে নদীপ্রবাহ থাকতে পারত না। তিনি বলছেন, “মঙ্গলে জলের প্রমাণ মিলেছিল। কিন্তু নদী বয়ে যাওয়ার প্রমাণ মেলেনি। কিউরিওসিটির অভিযানে এটাই আপাতত সব চেয়ে বড় সাফল্য।”
|
মোহনা-সন্ধানে যে পথে
এগোচ্ছে কিউরিওসিটি |
এই বাঙালি বিজ্ঞানী বলেছেন, আগে অন্য মঙ্গলযান ওই গ্রহের মাটি খুঁড়ে জলের চিহ্ন পেয়েছিল। বিধ্বংসী বন্যার জলের বয়ে যাওয়ার মতো দাগও মঙ্গলের মাটিতে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এমনকী, জল বাষ্প হয়ে উবে যাওয়ার চিহ্নও মিলেছিল। পাওয়া যায় মঙ্গলের আবহাওয়ায় হাইড্রোজেনের অস্তিত্বও (হাইড্রোজেন জলের অন্যতম উপাদান)। কিন্তু বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ, জলপ্রবাহ ছিল কি না, তা মেলেনি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ জল থাকলেই প্রাণের অস্তিত্ব থাকবে, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। কিন্তু জলের প্রবাহ এবং উপযুক্ত আবহাওয়া এই ধারণাকে জোরালো করে যে, লাল গ্রহে হয়তো প্রাণ ছিল। একই সুর মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান অ্যাস্ট্রোবায়োলজি রিসার্চ সেন্টারের গবেষক পুষ্কর বৈদ্যর গলাতেও। তাঁর মতে, “মঙ্গলে নদী ছিল এটা প্রমাণ হওয়াতে ধরে নেওয়াই যায় সেখানে প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশও ছিল।” তবে গতিপথ সন্ধানেই শেষ নয়। নদীখাতের মাটি-পাথরও বিশ্লেষণ করা বাকি রয়েছে কৌতূহলের। সেখানেও তার সন্ধানী চোখে কিছু ধরা পড়ে কি না, সেটাই দেখার। |
ছবি: এপি, রয়টার্স ও নাসার বিজ্ঞানী অনিতা সেনগুপ্তের সৌজন্যে |