সেচ কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়ল মহারাষ্ট্র সরকার। কেলেঙ্কারির অভিযোগের পরে ইস্তফা দিয়েছেন উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার। তার পরে রাজ্য মন্ত্রিসভায় এনসিপি-র সব সদস্যই ইস্তফা দিতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন দলীয় মুখপাত্র মহেশ। তবে পরে এনসিপি শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দেন, আর কোনও মন্ত্রী ইস্তফা দেবেন না। রাজ্য সরকার থেকে বেরিয়ে আসারও প্রশ্ন নেই। মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ জানিয়েছেন, অজিতের পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস ও এনসিপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে সেচ কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে সুর চড়িয়েছেন এনসিপি নেতা প্রফুল্ল পটেল। তাঁর দাবি, এনসিপি-র ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চক্রান্ত চলছে। তাতে ‘বন্ধুভাবাপন্ন’ দলগুলিও সামিল হয়েছে।
 |
অজিত পওয়ার |
১৯৯৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস-এনসিপি জোট সরকারে জলসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন অজিত। বিরোধীদের অভিযোগ, এই এক দশকে সেচের ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য। কিন্তু, সেচের উন্নতি হয়েছে খুবই কম। পরে বিধানসভায় সরকারও জানায়, দশ বছরে সেচে ৪২ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু, সেচের আওতায় এসেছে মাত্র ০.১ শতাংশ জমি। সংবাদমাধ্যমের একাংশে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বিদর্ভ অঞ্চলের জন্য ৩৮টি প্রকল্প অনুমোদন করেছিলেন অজিত। নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্পগুলি বিদর্ভ সেচ উন্নয়ন নিগমের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে পেশ করা উচিত। ওই পর্ষদে রয়েছেন মুখ্যসচিব ও অর্থ দফতরের কর্তারা। কিন্তু, অজিত ও সেচ উন্নয়ন নিগমের কার্যনির্বাহী ডিরেক্টর এই নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করেননি বলে অভিযোগ। বিদর্ভ এলাকার সেচ কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে বম্বে হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
প্রত্যাশিত ভাবেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অজিত। বিরোধীদের চাপে সেচ কেলেঙ্কারি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। তার পরেই শুরু হয় দুই শরিকের মন কষাকষি।
অজিত জানিয়েছেন, কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্তেও তাঁর কোনও আপত্তি নেই। পদত্যাগপত্র তিনি মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন অর্থ ও বিদ্যুৎ দফতরের দায়িত্বে ছিলেন অজিত। বিধানসভায় এনসিপি পরিষদীয় দলের নেতা হিসেবে ওই দু’টি দফতর এনসিপি-র রাজেশ তোপে ও জয়ন্ত পাটিলকে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন তিনি।
কেন্দ্রেও কংগ্রেসের জোট শরিক এনসিপি। তাই মহারাষ্ট্রের জের কেন্দ্রেও পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এনসিপি শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, তাঁরা রাজ্য সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চান না। শরদ পওয়ার জানিয়েছেন, অজিতকে তিনি গত কালই ইস্তফা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। ভাইপোকে নিয়ে তিনি গর্বিত। এনসিপি সূত্রে খবর, অজিতের ইস্তফার কথা শুনে কিছুটা আবেগের বশেই ইস্তফা দিতে চান দলের অন্য মন্ত্রীরা। কলকাতায় শরদ পওয়ারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন শীর্ষ নেতৃত্ব। শরদ বাকি মন্ত্রীদের ইস্তফার সিদ্ধান্ত সমর্থন করেননি। ফলে, বিষয়টি আর এগোয়নি।
অজিতের ইস্তফা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নয় কংগ্রেস। তবে একান্ত আলোচনায় কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, বিষয়টি এনসিপি-র ‘অভ্যন্তরীণ বিবাদ’। তা ছাড়া শরদ পওয়ারও বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে চান। তবে তিনি চান, ইস্তফার পরে অজিতকে সেচ কেলেঙ্কারি থেকে রেহাই দেওয়া হোক। কিন্তু কংগ্রেসের দাবি, এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত রয়েছেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। অজিতকে বাঁচাতে গেলে গডকড়ীও পার পেয়ে যাবেন। কংগ্রেসের এক নেতা বলেছেন, এনসিপি-র সঙ্গে রাজ্যে সমস্যা হলেও দিল্লিতে এখনই সমর্থন প্রত্যাহার করবেন না শরদ। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, এনসিপিতে শরদের সঙ্গে অজিতের কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি প্রচুর টাকা খরচ করে নিজের জন্মদিন পালন করেন অজিত। তা নিয়েও ক্ষুব্ধ শরদ। মহারাষ্ট্রের রাজনীতির দিকে তাকিয়ে কাকা-ভাইপোর দূরত্ব বাড়িয়ে দিতে চায় কংগ্রেস। |