রাস্তা জুড়ে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য রুখতে বজ্র আঁটুনির নিদান হেঁকেছিলেন খোদ পরিবহণমন্ত্রীই। আবার তিনিই দেখিয়ে দিলেন, গেরোটা নেহাতই আলগা! অটোয় চার জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেও অটো ইউনিয়নের চাপে তা থেকে পিছিয়ে এলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। রাতে অটোরিকশায় পাঁচ জন করে যাত্রী তোলা যাবে বলে রবিবার সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন তিনি।
রাস্তা দাপিয়ে অটোর বেপরোয়া দৌড়ের জেরে হামেশাই দুর্ঘটনা ঘটে। তার উপরে প্রায় রোজই যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠছিল এক শ্রেণির অটোচালকের বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় এক নির্দেশে দু’টো পাখি মারতে অর্থাৎ অটো-দাপট নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্ঘটনা এড়ানোর ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। সেই জন্যই অটোয় চার জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না বলে মাস তিনেক আগে ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সেই অনুযায়ী পুলিশকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু রবিবার নিজের বিধানসভা কেন্দ্র কামারহাটির নজরুল মঞ্চে এক অনুষ্ঠানে মদনবাবু বলেন, বেশি রাতে খুব প্রয়োজনে অটোয় পাঁচ জন তোলা যাবে। অন্য সময় অবশ্য চার জনের বেশি তোলা যাবে না বলে ফের জানান তিনি।
এখনও কলকাতা ও শহরতলির অনেক রুটে পাঁচ জন যাত্রী নেওয়া চলছে। যেখানে পাঁচ জন যাত্রী নেওয়া যাচ্ছে না, সেখানে ভাড়া বেড়ে গিয়েছে এক টাকা থেকে তিন টাকা পর্যন্ত। এখন পরিবহণমন্ত্রী নিজেই রাতে খুব প্রয়োজনের সময় অটোয় পাঁচ জন যাত্রী তোলার ছাড়পত্র দেওয়ায় পাঁচ জন করে নেওয়াটাই ফের রীতি হয়ে যাবে বলে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের কর্তাদের একাংশের ধারণা। তাঁদের আশঙ্কা, এতে অটোর রাশ টানার উদ্যোগ ব্যাহত হবে।
কড়াকড়ির পথে এগিয়েও মন্ত্রী নিজেই সেটা শিথিল করলেন কেন?
পরিবহণমন্ত্রী রাতে বলেন, “আপৎকালীন ক্ষেত্রে অর্থাৎ যখন অন্য কোনও যানবাহন মিলবে না, সেই সব ক্ষেত্রে অটোয় পাঁচ জন যাত্রী নেওয়ার কথা বলেছি। এটা একদম বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে।” কিন্তু ক্ষেত্রটা যে ‘বিশেষ’, সেটা ঠিক করবে কে? মন্ত্রীর কাছে এর কোনও জবাব বা ব্যাখ্যা মেলেনি। অটোচালকেরা অবশ্য মন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণায় খুশি। তাঁদের কাছে ইতিমধ্যেই বার্তা পৌঁছে গিয়েছে যে, রাতে পাঁচ যাত্রী তোলার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার।
ঘটনাচক্রে এ দিনই চেতলা এলাকায় অটো-দৌরাত্ম্যের শিকার হন কলকাতা পুলিশের এক অবসরপ্রাপ্ত ইনস্পেক্টর। পুলিশি সূত্রের খবর, প্রবীরবরণ সরকার নামে ওই প্রাক্তন ইনস্পেক্টর এবং তাঁর স্ত্রী ট্যাক্সিতে বেহালা-পর্ণশ্রীর বাড়ি থেকে ঢাকুরিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, চেতলা সেতুতে বেপরোয়া ভাবে অটো চালানোর প্রতিবাদ করায় এক অটোচালক তাঁকে গালিগালাজ ও মারধর করেন। তিনি জানান, ওই এলাকায় কোনও ট্রাফিক পুলিশের দেখা মেলেনি। পরে লেক থানায় গিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোলে বিষয়টি জানান এবং রাতে চেতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রবীরবাবু। পুলিশকে সংশ্লিষ্ট অটোর নম্বরও দিয়েছেন তিনি।
অটোয় যাত্রী তোলার ব্যাপারে নিয়ম কিছুটা শিথিল করলেও ভাড়া বৃদ্ধির প্রশ্নে তাঁর দফতরের মনোভাব কঠোরই থাকছে বলে এ দিন ঘোষণা করেন পরিবহণমন্ত্রী।
তিনি জানান, ট্যাক্সি ও অটোচালকেরা ভাড়া বেশি চাইলেই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ট্যাক্সি ও অটোচালকদের জন্য এ দিন একটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন
করেছিল ব্যারাকপুর কমিশনারেট। মন্ত্রী সেখানে বলেন, “আমার ছবি দেখিয়ে ইউনিয়ন করে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেলে সেই সব চালকের বিরুদ্ধে বেশি বেশি কেস দেবে পুলিশ। অটোচালকদের নির্দিষ্ট পোশাক
পরতে হবে। ভাল চালকদের পুরস্কৃত করা হবে।” মন্ত্রী জানান, ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় শীঘ্রই ১২টি ট্যাক্সি ও অটো স্ট্যান্ড নির্দিষ্ট করে সেখানে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। |