|
|
|
|
সিপিএম যুব সম্মেলন |
বেঙ্গালুরুতে প্রশ্নে
জেরবার পশ্চিমবঙ্গ
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
 |
|
দলের পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটিতে অতীতে যা হয়েছে, এ বার তারই প্রতিফলন ঘটছে সিপিএমের যুব সম্মেলনে। দলের মধ্যেই ঝাঁকে ঝাঁকে প্রশ্নের মুখে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ। আক্রমণ আসছে মূলত দক্ষিণ ভারত থেকে। এমনকী, খোদ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকও প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না!
গত বছর দুই রাজ্যেই সিপিএম ক্ষমতা হারানোর পরে কেরলের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গেই দলের গণসংগঠনগুলির ক্ষয় বেশি হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে ডিওয়াইএফের সর্বভারতীয় সম্মেলনে যে সব প্রশ্ন উঠছে, তার গোড়ার কথা এই বৈপরীত্যই। সম্মেলন-মঞ্চে বুধবার রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করতে গিয়ে যে ‘সত্য’ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেননি ডিওয়াইএফের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক তাপস সিংহও। তিনি বলেছেন, ক্ষমতা হারানোর আগেই পশ্চিমবঙ্গে বামেদের যে প্রবল আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল, তারই জেরে ধাক্কা খায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান। একই সঙ্গে তিনি আঙুল তুলেছেন সাংগঠনিক ‘বিচ্যুতি’র দিকে। তাঁর মতে, সংগঠনের তরফে যে সব পরিকল্পনা থাকলে ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতিতেও নিজেদের কাজ ছড়িয়ে দেওয়া যেত, তার অভাব যথেষ্টই। নেতা-কর্মীদের একাংশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর পরামর্শ, নতুন যাঁরা যুব সংগঠনে আসছেন, তাঁরা যেন ‘ঔদ্ধত্য’ এড়িয়ে চলেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রতিবেদন পেশ করতে গিয়ে তাপসবাবু দলীয় নেতৃত্বকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। কারও নাম না-করেই তাঁর বক্তব্য ছিল, কোথাও কোথাও ‘অদৃশ্য হাতে’র খেলায় যুব সংগঠন কাঙ্খিত চেহারা পায়নি। দলের একাংশের ব্যাখ্যা, যুব সংগঠন এবং তার নেতাদের ‘প্রাপ্য মর্যাদা’ সিপিএমে মিলছে না বলে দীর্ঘ দিন ধরেই ক্ষোভ ছিল তাপসবাবুর। যুব সম্পাদকের পদ থেকে ‘অব্যাহতি’ নেওয়ার আগে প্রকারান্তরে এ বারের সম্মেলনের প্রারম্ভিক ভাষণেই নেতৃত্বের ‘ভুল’ ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন তিনি। তাপসবাবুর ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বক্তব্যের সময় প্রাক্তন যুব নেতা হিসাবে কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য মহম্মদ সেলিম ও হান্নান মোল্লা হাজির ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক যদিও বা কিছুটা রেখেঢেকে প্রশ্ন তুলে থাকেন, ভিন্ রাজ্যের প্রতিনিধিরা একেবারেই পশ্চিমবঙ্গকে রেয়াত করছেন না! কেরল, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যের প্রতিনিধিরা যেমন এ দিন সরব হয়েছেন। তামিলনাড়ুর সম্মুগসুন্দরম যেমন প্রশ্ন তুলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ‘সন্ত্রাসে’র কথা বহুচর্চিত। কিন্তু এ রাজ্যের আদিবাসী তরুণেরা কেন মাওবাদীদের পাশে থেকেছেন, তার জবাব তো দিতে হবে! তাঁদের আস্থা অর্জনে সিপিএমের যুব সংগঠন তাদের করণীয় করতে পেরেছিল কি? তামিলনাড়ুরই আরও প্রশ্ন, কার্টুন-কাণ্ডে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র গ্রেফতার হওয়ায় সারা দেশে চর্চা হল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এমন ‘হাতিয়ার’ পেয়েও ডিওয়াইএফআই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নামল কই? পশ্চিমবঙ্গে কী ধরনের আক্রমণের মুখে তাঁদের পড়তে হয়েছে, তার অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন এ রাজ্যের প্রতিনিধি শঙ্কর ঘোষ।
সমালোচনা থেকে রেহাই পাননি তাপসবাবুরাও! এ ক্ষেত্রেও নেতৃত্বে ‘কেরল ব্রিগেড’ (যে রাজ্য থেকেই নতুন সর্বভারতীয় যুব সভাপতি হওয়ার কথা এক সাংসদের)! কেরল থেকে এ এন শামসির বলেন, দিল্লিতে ডিওয়াইএফের নতুন ভবন গড়তে কেরল ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। ভবন গড়ার চেয়ে আন্দোলন গড়ায় নেতৃত্ব নজর দিলে সংগঠনের উপকার হত! দেশে যেখানে পাঁচ বছরে লোকসভা বা রাজ্যে বিধানসভা ভোট হয়, সেখানে সিপিএমের মতো ‘সুসংহত’ দলে যুব সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্মেলন করতে সাড়ে পাঁচ বছর কেটে গেল কেন উঠেছে সেই প্রশ্নও! দ্বিতীয় দিনেই স্পষ্ট, বেঙ্গালুরুতে উত্তাপ বাড়ছে! |
|
|
 |
|
|