উত্তর কলকাতা
সাগর দত্ত
শুধুই প্রতিশ্রুতি
হির্বিভাগ সপ্তাহে মাত্র তিন দিন। প্যাথলজি বিভাগে কাজ হয় না। ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু হয়নি। জরুরি অস্ত্রোপচারের কোনও ব্যবস্থাই নেই। অথচ এই হাসপাতালকেই রাজ্যের অন্যতম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর স্বাস্থ্য দফতর।
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ। চলতি বছরে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) যার অনুমোদন বাতিল করার পরে মুচলেকা দিয়ে ছাত্র ভর্তির অনুমতি আদায় করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। কী ছিল মুচলেকায়? কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এক বছরের মধ্যে সমস্ত পরিষেবার বন্দোবস্ত করা হবে, এই শর্তেই ছাত্র ভর্তি করতে দিয়েছে এমসিআই। এখন কী পরিস্থিতি? কর্তৃপক্ষ বলছেন, বাকি পরিকাঠামো তো দূরের কথা, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চিকিৎসকের ব্যবস্থাই করা যায়নি। ওয়েবসাইটে এই মেডিক্যাল কলেজে যে সব শিক্ষক-চিকিৎসকের নাম লেখা রয়েছে, তাঁদের একটা বড় অংশই অন্য কোনও মেডিক্যাল কলেজে ডেপুটেশনে রয়েছেন। কবে তাঁরা ফিরবেন, কেউ জানে না।
বেলঘরিয়া রথতলার বাসিন্দা শৌভিক বসু সম্প্রতি তাঁর সাড়ে তিন বছরের ছেলে আবিরকে নিয়ে আসেন এই হাসপাতালের শিশু বিভাগে। হাসপাতালের তরফে বলা হয় মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার ছাড়া এই বিভাগের বহির্বিভাগ বন্ধ। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে আবিরের ডেঙ্গি ধরা পড়ে। “একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ কেন রোজ খোলা থাকবে না?” প্রশ্ন তুলেছেন শৌভিকবাবু। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিভাগের চার জন চিকিৎসকের দু’জনই ডেপুটেশনে রয়েছেন অন্য হাসপাতালে। প্রতি দিন এই বিভাগে আসা রোগীর সংখ্যা দু’শো থেকে আড়াইশো। দু’জনের পক্ষে সেই চাপ সামলানো সম্ভব নয়।
রোগীদের অভিযোগ, চক্ষু, শল্য এবং ইএনটি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ বহির্বিভাগ এখানে চলে সপ্তাহে মাত্র তিন দিন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে বিভিন্ন বিভাগের বেশ কয়েক জন চিকিৎসক ডেপুটেশনে অন্যান্য হাসপাতালে আছেন। ইট, কাঠ, সিমেন্টের কাজ খানিকটা এগিয়েছে। পাঁচতলা কলেজ বাড়ি তৈরির কাজ কিছুটা এগোলেও শেষ হতে ঢের দেরি। পাঁচশো শয্যাবিশিষ্ট আট তলা হাসপাতাল ভবনের কাজ সবে ভিতের পর্যায়ে।
শেষ হতে দু’বছরের বেশি সময় লাগবে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কোনও ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটার না থাকায় একটু জটিল কেস এলেই রোগীদের ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে। প্যাথলজি বিভাগে যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক আছেন। কিন্তু কোনও টেকনিশিয়ান নেই। ফলে শুধুমাত্র পড়ানো ছাড়া এই বিভাগের চিকিৎসকদের কোনও কাজ নেই।
অধ্যক্ষ দেবাশিস ভট্টাচার্য মেনে নিয়েছেন, চিকিৎসকের অভাবে পরিষেবা মার খাচ্ছে। তিনি বলেন, “যেহেতু দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত ক্লাস চলছে তাই কলেজের পড়াশোনা সে ভাবে আটকাচ্ছে না। কিন্তু এর পরে সমস্যা হবে। ডেপুটেশনে থাকা চিকিৎসকদের ফেরত চেয়ে এবং নতুন শিক্ষক-চিকিৎসক চেয়ে আবেদন করেছি রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার কাছে। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
স্বাস্থ্য অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বহির্বিভাগ প্রতি দিন খোলা থাকা উচিত। কেন থাকছে না খোঁজ নেব। ডাক্তারের অভাবের জন্য এমন হচ্ছে বললে মানব না। রোজ বহির্বিভাগ শুরু করতেই হবে।” তাঁর কথায়: “লাইসেন্সের জন্য আটকে আছে ব্লাড ব্যাঙ্ক। এ বার সেই বাধাও কেটে যাবে। খুব তাড়াতাড়ি টেকনিশিয়ান নিয়োগের পদ্ধতিও শুরু হবে।” তবে ডেপুটেশনে থাকা চিকিৎসকদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “এই মুহূর্তে চিকিৎসকের অভাব থাকায় সেটা সম্ভব নয়।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.