বিপর্যস্ত ঝিল
দুয়োরানি
যেন দূষণে নীলকণ্ঠ!
এখানে মিশেছে হাওড়ার একাধিক নিকাশি। রেলের কার শেডের বর্জ্য। মেশে আশপাশের নানা কলকারখানার বর্জ্যও। অভিযোগ, সব মিলিয়ে দূষণে বেহাল রানিঝিল।
দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে পলি জমে রানিঝিলের জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। অবস্থা এমনই যে সামান্য বৃষ্টিতেই জল উপচে উত্তর হাওড়ার বিস্তৃত অংশ ভেসে যায়। এই ঝিলের জল পড়ছে হাওড়ার গুরুত্বপূর্ণ নিকাশি পচাখালে। পচাখাল আবার সরাসরি গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত। ফলে দূষণে ক্ষতি হচ্ছে গঙ্গারও।
লিলুয়া থানার ঠিক উল্টো দিকে, বামনগাছি রোডের গায়ে প্রায় ৮০০ মিটার লম্বা এই ঝিলের পাশেই রয়েছে রেলের ডিজেল কারশেড। সেখানে চলে ইঞ্জিন মেরামতির কাজ। অভিযোগ উঠেছে, ইঞ্জিনের তেল ও গ্রিস রেলের নালা দিয়ে সরাসরি রানিঝিলে পড়ে।
এই ঝিলের সংস্কার নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ২০০৯ এবং ’১১-য় দু’দফায় মামলা করেন সুভাষবাবু। আদালত রেলকে রানিঝিল সংস্কারের নির্দেশ দেয়। ঝিলের জল কতটা দূষিত তা পরীক্ষার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দেয় আদালত। সম্প্রতি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুই বিশেষজ্ঞ ঝিলের দূষণ পরীক্ষা করেন। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে খবর, প্রতি ১০০ মিলিলিটার জলে পাঁচশোর কম কলিফর্ম থাকলে তা ব্যবহারযোগ্য বলে মানা হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, রানিঝিলের জলে ১ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার কলিফর্ম রয়েছে।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে খবর, অবিলম্বে ওই ঝিলের সংস্কার প্রয়োজন। বাসিন্দারা জানান, ২০১১ থেকে এ পর্যন্ত ঝিলের অর্ধেক অংশে কচুরিপানা তোলা আর পলি পরিষ্কার ছাড়া আর কিছুই হয়নি। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি রানিঝিল পরিদর্শনে যান হাইকোর্ট নিযুক্ত স্পেশাল অফিসার উদয়ন রায়, পরিবেশবিজ্ঞানী কাজী কায়রুল হোসেন, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত এবং রেলের অফিসারেরা।
এই দূষণের জন্য রেল কতটা দায়ী?
রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল হালদার বলেন, “ডিজেল শেডে রেলের নিজস্ব অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট রয়েছে। সেখানে তেল, গ্রিস ও অন্য নানা বর্জ্য শোধন করে বাইরে ফেলা হয়। এখন ওই ঝিলে যে তেল ভাসতে দেখা যায় তা আগের। এখন আর ওই ঝিলে তেল বা গ্রিস পড়ে না।” রেলের অভিযোগ, ডিজেল শেডের নীচ দিয়ে পুরসভার তিনটি নিকাশি নর্দমা গিয়েছে। এর মাধ্যমে শহরের পাশাপাশি নানা কারখানার বর্জ্যও পড়ে।
রানিঝিলের এক পাশে রয়েছে ধোবিঘাট। ধোবিঘাটের নীচ দিয়ে রেলের নর্দমা গিয়েছে বেলগাছিয়া, ভট্টনগর, কোনা মোড় হয়ে দু’কিলোমিটার দূরে পচাখালে। এই খাল আবার পদ্মপুকুর হয়ে নাজিরগঞ্জ খালে মিশেছে, যা গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত। পচাখালের পাশে পায়ে চলার রাস্তা। কয়েকটি কলোনিও তৈরি হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, খাল পারাপারের জন্য বাঁশ ও কংক্রিটের সেতু তৈরি হওয়ায় জলের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কমেছে জলবহন ক্ষমতাও। সামান্য বৃষ্টিতেই নানা পুর-এলাকায় জল জমে যাচ্ছে।
সুভাষবাবু বলেন, “রানিঝিল বা পচাখালের সংস্কার না হওয়ায় একটু জোরে বৃষ্টি হলেই হাওড়া ভাসছে। তা ছাড়া দূষিত জল গঙ্গায় পড়ছে। এর ফল সুদুরপ্রসারী। রানিঝিলের দূষণ রুখতে সর্বাত্মক প্রকল্পের প্রয়োজন।”
হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়ালের কথায়: “রানিঝিল রেলের জমি। রানিঝিলের সংস্কার নিয়ে দফায় দফায় রেলের সঙ্গে বেঠক হয়েছে। আমাদের যে ক’টি নিকাশি আছে তার সংস্কারের কাজ চলছে। রানিঝিল পরিষ্কার হলে সমস্যা মিটে যাবে।”

ছবি : দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.