|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
তুলে ধরতে চেয়েছেন নিজেদের শিল্পবোধকে |
সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল ‘দ্য ফ্রেম’-এর
সম্মেলক প্রদর্শনী। ঘুরে এসে লিখছেন
মৃণাল ঘোষ। |
সম্প্রতি ‘দ্য ফ্রেম’ নামে কলকাতা-ভিত্তিক শিল্পীদের দলটি তাঁদের সম্মিলিত অভিযাত্রার দুই দশক সম্পূর্ণ করল। তৈরি হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। যেমন হয়। কয়েকজন উদীয়মান তরুণ শিল্পী সমবেত কোনও আড্ডার আসরে হঠাৎই ভেবেছিলেন সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করার কথা। সেই ভাবনা থেকেই তৈরি হয়েছিল দল। প্রতিকূল বাস্তব পরিস্থিতিতে একসঙ্গে কাজ করার কিছু সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আছে। সম্ভবত সেটাই ছিল তাঁদের ঐক্যবদ্ধতার প্রাথমিক শক্তি। এ ছাড়া কোনও তাত্ত্বিক বা আদর্শগত ভিত্তি তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু এই সংঘবদ্ধতাকে দীর্ঘ দিন ধরে নিষ্ঠাভরে লালন করতে গিয়ে তাঁরা হয়তো অগোচরেই কিছু আদর্শ তৈরি করেছেন, যা সাম্প্রতিক শিল্প পরিস্থিতিতে খুবই প্রাসঙ্গিক। তাঁরা গ্যালারি বা অন্যান্য ক্ষমতাবান বিপণন কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে নিজেদের শিল্পবোধকে পরিশীলিত করার চেষ্টা করেছেন। এখন এই দলে যুক্ত হয়েছেন ছ’ জন শিল্পী। সৌমিত্র কর, প্রাণগোপাল ঘোষ, সন্ধ্যাকর কয়াল, দেবাশিস সামন্ত, বিশ্বজিৎ সাহা ও অরুণাংশু রায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আরও কয়েক জন শিল্পী এই দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, পরে যাঁরা দল ছেড়েছেন। সে রকম চার জন শিল্পী চয়ন রায়, ভাস্কর ভট্টাচার্য, কুমুদরঞ্জন হালদার ও সুশান্ত মণ্ডল। কুড়ি বছর পূর্তি উপলক্ষে এই দলের যে সম্মেলক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি অ্যাকাডেমির দু’টি গ্যালারি জুড়ে, তাতে এই দশ জন শিল্পীই অংশ নিয়েছেন। প্রথম ছ’ জন শিল্পীর ছবি কিছুটা আধুনিকতাবাদী, ঐতিহ্য ভিত্তিক। শেষোক্ত চার জন ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিকতায় অভিষিক্ত করতে চেষ্টা করেছেন। সে দিক থেকে তাঁদের কোনও কোনও কাজে উত্তর-আধুনিকতার বিচ্ছুরণ কিন্তু বেশ অনুভব করা যায়।
|
|
শিল্পী: বিশ্বজিৎ সাহা |
সৌমিত্র করের টেম্পারায় আঁকা দু’টি ছবির শিরোনাম ‘মাই হোম ইন গ্রিন ডেজ’। লৌকিক সারল্যের সঙ্গে আধুনিকতার জ্যামিতির মেলবন্ধন নিয়ে তাঁর দীর্ঘ দিনের যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তার অত্যন্ত সমৃদ্ধ প্রকাশ ঘটেছে এই দুটি ছবিতেও।
প্রাণগোপাল ঘোষ অ্যাক্রিলিকে আঁকা ‘নেচার’ শীর্ষক চারটি ছবিতে বৃক্ষ, ফুল ও পল্লবের স্পন্দনকে প্রকৃতির সামগ্রিকতায় অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন।
বিশ্বজিৎ সাহা কলকাতার কলেজ অব ভিজুয়াল আর্টের ছাত্র ছিলেন। ফাইবার শিটের উপর অ্যাক্রিলিকে করা তাঁর তিনটি ছবি বর্ণময়, কল্পরূপাত্মক, কৌতুকদীপ্ত এবং সমাজচেতনা সম্পৃক্ত।
দেবাশিস সামন্ত গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন। ‘হোপ অব লিভিং’ শিরোনামে স্বচ্ছ ও অস্বচ্ছ জলরঙে আঁকা পাঁচটি ছবি রয়েছে তাঁর। নিসর্গ ও জীবনের সম্পৃক্ততাকে বিশ্লিষ্ট করে তিনি বিমূর্তায়িত চিত্রীয় সংহতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজ থেকে ১৯৯০তে পাশ করেছেন সন্ধ্যাকর কয়াল। মিশ্র মাধ্যমে আঁকা বিশ্লিষ্ট আঙ্গিকের পাঁচটি ছবিতে আলোড়িত জীবনের বিশুদ্ধ চিত্রীয় রূপ সন্ধান করেছেন তিনি। ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজ থেকে ২০০০-এর স্নাতক অরুণাংশু রায়ের অ্যাক্রিলিকে আঁকা অলঙ্করণধর্মী, কৌতুকদীপ্ত চারটি ক্যানভাস ঐতিহ্যগত রূপভাবনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অত্যন্ত সফল ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
রবীন্দ্রভারতী থেকে ১৯৯০-এর স্নাতক ভাস্কর ভট্টাচার্যের টেম্পারায় আঁকা তিনটি ছবিতে অণুচিত্রের আঙ্গিকে জীবনের অসঙ্গতিকে কৌতুকদীপ্ত ভাবে অনুধাবনের চেষ্টা। ‘হোয়ার উই আর’ শিরোনামে তিনটি অ্যাক্রিলিকের ছবি ও একটি ইনস্টলেশনধর্মী কাজ করেছেন চয়ন রায়। অবর্ণনাত্মক, আখ্যান নিরপেক্ষ, বিমূর্তায়িত বিশুদ্ধ চিত্রীয় সংহতির সন্ধান তাঁর ছবিতে স্বতন্ত্র মাত্রা এনেছে।
কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ১৯৯০-এর স্নাতক সুশান্ত মণ্ডল বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩তে স্নাতকোত্তর করেছেন। সাতটি ড্রয়িং-এর সমাহারে গড়া তাঁর রচনাটির শিরোনাম ‘৭০-এর স্মৃতি’। একটি ড্রয়িং-এ দেখা যাচ্ছে একটি স্টোভ জ্বলছে। অগ্নিশিখা দৃশ্যমান। পাশে একটি বোল্ট পড়ে রয়েছে। দক্ষ ড্রয়িং। আবেগ-নির্লিপ্ত উপস্থাপনা। সমস্ত আপাত-অনান্দনিকতাকে নান্দনিকতায় অভিষিক্ত করার উত্তর-আধুনিকতাবাদী প্রয়াস তাঁর ছবির বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এটাকে বেশি দূর নিয়ে গেলে কেমন করে তা তাৎপর্য হারায় তার দৃষ্টান্ত কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ১৯৯০-এর স্নাতক কুমুদরঞ্জন হালদারের ভিডিওটি। |
|
|
|
|
|