ভারত-পাকিস্তান বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ঠিক আগের দিন এক দিকে সন্ত্রাস ঘিরে কূটনৈতিক চাপানউতোরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল দ্বিপাক্ষিক পরিস্থিতি। অন্য দিকে ভিসা-সহ অন্য একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা এগোল ইতিবাচক রাস্তাতেই। যার ফলস্বরূপ, দিনের শুরুতে যে ভিসা চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছিল, তা অবশেষে সই হতে চলেছে বলে জানিয়ে দিলেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন মন্ত্রী রেহমান মালিক। তবে তার পরেও সন্ত্রাস নিয়ে নিজেদের কঠোর অবস্থান বদল করছে না দিল্লি।
কিন্তু সে তো পরের কথা। শুক্রবার সকালে বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ ইসলামাবাদের চাকলালা এয়ারবেসে পা রাখার পর থেকে রাত পর্যন্ত পাক নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় যে বৈঠক করেছেন, তার বার্তা স্পষ্ট। মুম্বই সন্ত্রাসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রস্তাবিত পাক সফরের কোনও সম্ভাবনা নেই। যা শুনে পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার ভারতীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মনমোহন সিংহের পাক সফরকে ‘শর্তাধীন’ করা উচিত হবে না নয়াদিল্লির। ভারতের উচিত মুম্বই বিস্ফোরণের বিষয়টিকে ‘আবেগহীন ভাবে’ দেখা! পাক কর্তৃপক্ষের একাংশের বক্তব্য, মনমোহনের সফর শুরুর আগে ২৬/১১-র ব্যাপারে ইতিবাচক কোনও পদক্ষেপ করা কঠিন বুঝেই হিনা এ কথা বলেছেন। এখানেই থামেননি হিনা। মুম্বই সন্ত্রাসের পাল্টা হিসেবে ১৯৭১-এর যুদ্ধ এবং সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণের কথা তুলতেও পিছপা হননি পাকিস্তানের কনিষ্ঠতম এবং প্রথম মহিলা বিদেশমন্ত্রী! |
আজ দু’দেশের মধ্যে বিদেশসচিব পর্যায়ের আলোচনা, পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরফের সঙ্গে কৃষ্ণের বৈঠক সর্বত্রই সন্ত্রাস প্রশ্নে কড়া অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি। সন্ত্রাস মূল প্রতিপাদ্য হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ভারত যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারই পক্ষপাতী, তারও প্রমাণ মিলেছে এ বারের সফরে। পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রাতে বলেন, “দু’দেশের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত ভিসা-চুক্তি শনিবার সই হবে।” দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং সম্পর্ক বাড়াতে এই চুক্তি কাযর্কর হবে বলেই দু’দেশের আশা। আজই ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে ভারতীয়দের পাকিস্তানে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ভিসা চুক্তিতে বহু দিনের দাবি মেনে যে বিষয়গুলি রাখা হচ্ছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, সে গুলি হল, প্রথমত, একাধিক শহরে ঘোরার জন্য এক বছরের ভিসা দেওয়া হবে ব্যবসায়ীদের। দ্বিতীয়ত, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য আগাম ভিসার বদলে পৌঁছনো মাত্র ভিসার ব্যবস্থা। তৃতীয়ত, অনুমোদিত ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে গেলে ভ্রমণার্থীদের গ্রুপ ভিসা দেওয়া হবে।
কিন্তু এত কিছুর পরেও শনিবারের আলোচনার মূল মঞ্চ যে সন্ত্রাসই দখল করে নেবে, তার ইঙ্গিতও আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। গত মাসে তেহরানে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আলোচনায় বসে মনমোহনকে পাকিস্তানে আসতে অনুরোধ জানান জারদারি। কিন্তু মনমোহনের বক্তব্য ছিল, পাকিস্তান সফরের জন্য প্রয়োজনীয় ‘পরিবেশ’ তৈরি হলেই তিনি ইসলামাবাদ যাবেন। সরকারি ভাবে আজকের বৈঠকগুলিতে মূলত মনমোহনের সেই অবস্থানেরই প্রতিধ্বনি করেছেন কৃষ্ণ।
তবে শুধু সন্ত্রাস নিয়ে চাপ দিতে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা যাতে ভেস্তে না যায়, সে জন্যও সক্রিয় ভারত। আজ আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে বৈঠকে সর্বজিৎ সিংহের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন কৃষ্ণ। গত কাল দু’দেশের যৌথ কমিশনের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হয়েছে। সেখানে কৃষি থেকে বাণিজ্য দ্বিপাক্ষিক আদানপ্রদান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কৃষ্ণের কথায়, “যে সব বিষয়গুলি সমস্যা তৈরি করছে, সেগুলির জট ছাড়ানোর ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” পাকিস্তানের শীর্ষ সরকারি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গেও আজ বৈঠক করেছেন বিদেশমন্ত্রী। |