|
|
|
|
 |
উৎপীড়িতের কান্না না-শুনে
খনি লিজ, ক্ষুব্ধ বিচারপতি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে বিতর্কে দিনের পর দিন অচল হচ্ছে সংসদ। সেই সময়েই খনি লিজ নিয়ে একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে বনাঞ্চল থেকে উৎখাত হওয়া মানুষের বেদনার কথা তুলে ধরলেন। প্রকাশ করলেন সহমর্মিতা।
সিংগ্রি প্রাইভেট লিমিটেড এবং ওড়িশা ম্যাগনেসিয়াম ও মিনারেল প্রাইভেট লিমিটেড নামে দু’টি সংস্থার বিরোধ নিয়ে একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কিছু মানুষকে বেআইনি সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশের অধিকাংশ মানুষকে তাঁদের ঐতিহ্যগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ওড়িশার ওই সংস্থা লোহা আকরিক খনির লাইসেন্স পায় ২০০৫ সালে। সাত বছর পরেও তারা ‘অপারেশন’ বা কাজ শুরু করেনি। অথচ এর জন্যই খনি এলাকার আদিবাসী, অরণ্যবাসীরা ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হয়েছেন। দুর্ভাগ্য এটাই যে, ওই মানুষদের সংবিধানে দেওয়া অধিকার প্রতি পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। যেন তাঁদের কণ্ঠস্বরের মূল্যই নেই!
এখানেই থামেননি বিচারপতি। বিচার ব্যবস্থার মতো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়েও কিছুটা আত্মসমালোচনা শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। বলেছেন, সংবিধান দাবি করে, বিচার ব্যবস্থা সামাজিক বিপ্লব ও বৃহত্তর মানুষের স্বার্থে কাজ করবে। এটাই ভারতীয় সংবিধানের লক্ষ্য। এটাও ঠিক, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরোধ দেখা দিলে বিচার ব্যবস্থা তা মেটাবে। এটা তাদের একটা কাজ। কিন্তু বিচার ব্যবস্থার প্রধান কাজ হল, তাকে ব্যক্তিগত বা সামগ্রিক ভাবে মানুষের অধিকার রক্ষার প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে হবে। বিচারপতি মন্তব্য করেন, গত তিন দশক বা তারও আগের সময়টা ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার সুবর্ণ অধ্যায় ছিল।
সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের কথা উল্লেখ করে বিচারপতি মন্তব্য করেন, প্রতিদিনের সংবাদ দেখেই সাধারণ মানুষের অসহায়তা বোঝা যায়। কিছু মানুষের আরও বেশি চাহিদা পূরণের জন্য উৎপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর, পদে পদে অধিকার হারানোর কথা চাপা পড়ে যাচ্ছে। বিচারপতির মতে, শুধু ব্যবসার স্বার্থে দিনের পর দিন খনি অঞ্চল লিজ নিয়ে ফেলে রাখা হচ্ছে। কাজ শুরু করা হচ্ছে না। এই নিয়ে সব পক্ষই নীরব। কিন্তু যে-সব মানুষ অরণ্য ও অরণ্যনির্ভর জীবনযাত্রা হারাচ্ছেন, তাঁদের কথা ধর্তব্যেই আনা হচ্ছে না। অথচ সংবিধান তাঁদের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপরে। বিচার ব্যবস্থাও এমনই একটা প্রতিষ্ঠান।
মামলায় আবেদনকারী সংস্থার আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। |
|
|
 |
|
|