উদাসীন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ
এক বছর ধরে বন্ধ ১৪টি যন্ত্র, বিভ্রান্তি বায়ুদূষণের তথ্য নিয়ে
প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কলকাতায় বাতাসের দূষণ মাপার চোদ্দোটি যন্ত্র। ফলে শহরে বায়ুদূষণের প্রকৃত তথ্য সরবরাহ করতে পারছে না রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। অথচ শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণের সুষ্ঠু ব্যবস্থার জন্যই বায়ুদূষণের সম্পূর্ণ তথ্য নিয়মিত জানা দরকার। পর্ষদ কেন যন্ত্রগুলো বন্ধ করল তা জানতে চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। জবাবে পর্ষদ হলফনামা দিয়ে যা জানিয়েছে, তাতেও ধোঁয়াশা কাটেনি। পর্ষদের এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত পরিবেশকর্মীরাও। পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্তের মত, এটা সাময়িক অবস্থা। এতে বিশেষ অসুবিধা হবে না।
দু’টি স্বয়ংক্রিয় ও সতেরোটি সাধারণ বায়ুদূষণ পরিমাপের যন্ত্র বসানো ছিল শহরের বহু জায়গায়। কিন্তু বছরখানেক আগে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে বিনয়কান্তি দত্ত যোগ দেওয়ার অব্যবহিত পরেই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দু’টি বহাল রেখে বাকি যন্ত্রগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র থেকে তথ্য সরাসরি পর্ষদের দফতরের তথ্য ভাণ্ডারে পৌঁছয়। কিন্তু সাধারণ যন্ত্র থেকে দূষণ পরিমাপের তথ্য কাউকে সংগ্রহ করে আনতে হয়। কলকাতায়-সহ রাজ্যের বহু শহরে যে যন্ত্রগুলো বসানো আছে সেগুলি কেনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচের বেশির ভাগই দেয় কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, কলকাতার মতো দূষণপ্রবণ শহরে বায়ুদূষণ পরিমাপের পরিকাঠামো বিকল করে দিলে তা পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কারণ এতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজ ব্যাহত হবে।
ডানলপ ব্রিজ, শ্যামবাজার, গড়িয়াহাট, তারাতলা, তপসিয়া, বেলেঘাটা, বেহালা চৌরাস্তা, মিন্টো পার্ক, হাইড রোড, পিকনিক গার্ডেন, টালিগঞ্জ, মোমিনপুর, মৌলালি এবং বৈষ্ণবঘাটায় বায়ুদূষণ মাপার যন্ত্রগুলো প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ। অথচ ওই এলাকাগুলো থেকে তথ্য নিয়ে গড় না করলে শহরের প্রকৃত দূষণ-মাত্রা জানা অসম্ভব। এতগুলি যন্ত্র বন্ধ করার পরে এখন পর্ষদ দূষণের যে পরিমাপ দিচ্ছে তা স্বভাবতই কম। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের অভিযোগ, “এ ভাবে পর্ষদ শহরের ভয়ানক দূষণের ছবিটা আড়াল করছে। বিকল্প ব্যবস্থা না করেই যন্ত্রগুলো বন্ধ করে পর্ষদ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে।” অভিযোগ মানতে নারাজ বিনয়কান্তি দত্ত। তিনি বলেন, “আরও পাঁচটা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বসানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমি দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকে কথা বলে এসেছি।”
কেন বন্ধ করা হল যন্ত্রগুলো? পর্ষদের যুক্তি, ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক বাতাসের দূষণ পরিমাপের যে নতুন মাপকাঠি তৈরি করে সাধারণ যন্ত্রে তার পরিমাপ সম্ভব ছিল না। তাই সেগুলি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাইকোর্টে জমা দেওয়া হলফনামাতেও পর্ষদ এ কথা জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সাধারণ যন্ত্রে ১০ মাইক্রনের চেয়ে ছোট ধূলিকণা, সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড মাপার ব্যবস্থা আছে। পর্ষদের দাবি, বাতাসের ১২ রকমের দূষণ মাপার জন্য মাপকাঠি নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করার পরে সাধারণ যন্ত্র বাতিল করা হয়। কারণ ওই যন্ত্রে নাকি এত রকমের তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। পরে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাধারণ যন্ত্রেই দূষণের ওই মাপকাঠিগুলি পরিমাপ সম্ভব। এর পরে অবশ্য তিনটি সাধারণ যন্ত্র চালু করেছে পর্ষদ।
যন্ত্রগুলো চালানো এবং সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পর্ষদকে সরবরাহ করার কাজটা করত রাজ্য ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অনুমোদিত কয়েকটি সংস্থা। টেন্ডারের ভিত্তিতে তাঁরা কাজগুলো পেতেন। সেই সংস্থাগুলিকেও বাতিল করা হয়েছে। গত মার্চে কেন্দ্রীয় পর্ষদ রাজ্য পর্ষদকে জানিয়ে দেয়, বাতাসের যে দূষণ মাপতে বলা হয়েছে সেগুলো সাধারণ যন্ত্রেই মাপা সম্ভব। এখন আবার সাধারণ যন্ত্র বসানোর জন্য পর্ষদকে ফের নতুন করে টেন্ডার ডাকতে হচ্ছে। তাছাড়া স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের দাম সাধারণ যন্ত্রের তুলনায় বহুগুণ বেশি। কিন্তু যে সংস্থাগুলো এতদিন এই কাজগুলো করত তাদের বাতিল করে নতুন সংস্থাকে যন্ত্র বসানোর বরাত দিতে গিয়ে সব কাজই আটকে গিয়েছে বলে পরিবেশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.