জুন-জুলাইয়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখেছিল শহর। টানা দু’দিনের বর্ষাতেও সেই ‘পরিবর্তনের’ ছবিই ধরা পড়ল। এ বার মহানগরীর রাস্তায় জল জমার ‘ট্র্যাডিশন’-এ।
শহরবাসীর অভিজ্ঞতা বলছে, বৃষ্টি হলেই রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়বে, থমকে যাবে শহরের গতি। বিশেষজ্ঞদেরও দাবি, জল জমা এই শহরের ভবিতব্য। তাঁরা বলেছেন, কলকাতার ভৌগোলিক গঠনের জন্যই পথে জল জমে। এ শহরের আকৃতি গামলার মতো। চার দিক উঁচু, মাঝখানে নিচু। তাই হাল্কা-মাঝারি বৃষ্টিতেও মধ্য কলকাতার বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু এ বারের ছবিটা অন্য রকম।
মঙ্গল ও বুধবারের টানা বৃষ্টিতেও জলমগ্ন হয়নি রাস্তাঘাট। কয়েক জায়গায় অল্প-বিস্তর জল জমলেও যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তার তুলনায় সেটা কিছুই নয় বলে পুরসভার দাবি। পুরসভা সূত্রের খবর, বৃষ্টি হলেই আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, বাগবাজার, শোভাবাজারের মতো এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। খাস কলকাতার রাস্তায় নৌকো চলার দৃশ্যও বিরল নয়। কিন্তু এ দিন সেই ছবির দেখা মেলেনি। অথচ আলিপুরের হাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে ৭৫ মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টি হয়েছে, যা এ মরসুমে সর্বোচ্চ। |
যাত্রাপথে: বৃষ্টির শহরে ছাতার মিছিল। বুধবার, বিধাননগর রোড স্টেশনে। ছবি: সুমন বল্লভ |
পুরসভা সূত্রের খবর, কসবা নিউ মার্কেটের সামনে জল জমলেও বেলার দিকে তা কমে যায়। সকালের দিকে জল জমে বালিগঞ্জের কিছু রাস্তায়। ডায়মন্ড হারবার রোডে শীলপাড়া থেকে কদমতলা পর্যন্ত জল জমলেও বেশিক্ষণ দাঁড়ায়নি।
কেন এ বার জল জমল না শহরে? পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, দিনে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি না হলে মহানগরীতে জল জমার কথা নয়। কিন্তু জুলাইয়ের শেষের দিকে তো এক দিনের বৃষ্টিতেই শহরের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, সে বার এক দিনে অল্প সময়েই মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় জল বেরোতে পারেনি। এ বার দু’দিন ধরে কম-বেশি বৃষ্টি হওয়ায় জল বেরিয়ে যেতে পেরেছে। পাশাপাশি, কাল রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকায় পাম্প চালানো হয়েছে বলেও জল জমতে পারেনি। পুরসভার দাবি, বালিগঞ্জ এলাকায় চলেছে ৯টি পাম্প।
পুরসভা জানায়, শহরে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে চেতলায়। এর পরেই জিঞ্জিরাবাজার, যোধপুর পার্ক ও বেহালা। উত্তরে বৃষ্টি হয়েছে তুলনায় কম। জল জমার দিক থেকে উত্তর প্রতিবারই দক্ষিণকে টেক্কা দেয়।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বৃষ্টিতে সকাল থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ির গতি কমে যায়। বাইপাসের রুবি কানেক্টরে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় যানজট হয়। বৃষ্টির জেরে যোধপুর পার্ক ও ফার্ন রোডে গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে অবশ্য পুরকর্মীরা গিয়ে গাছ কেটে তা স্বাভাবিক করেন। |