নতুন দোকানঘর পাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়ে আবেদন করেছিলেন তাঁরা। তাঁদের জন্য নতুন মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি হয়ে গেলেও দোকান হাতে তুলে দেয়নি এডিডিএ। এ দিকে, সরকারি জমি থেকে এডিডিএ-র দখলদার উচ্ছেদ অভিযানে ভাঙা পড়েছে তাঁদের অস্থায়ী দোকানঘরও। এর ফলে পুজোর আগে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ দুর্গাপুরের বি-জোনের প্রায় ষাট জন ব্যবসায়ীর।
সম্প্রতি বিধাননগর এলাকায় এডিডিএ সরকারি জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদে অভিযান চালায়। ভেঙে দেওয়া হয় জায়গা দখল করে থাকা অস্থায়ী দোকানঘরগুলি। এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, বি-ওয়ান মোড়ে বহু বছর ধরে রাস্তার ধারে জমি দখল করে দোকান চালাচ্ছিলেন জনা ষাট ব্যবসায়ী। তাঁদের কারও ঘড়ির দোকান, কারও সেলুন, কারও মাংসের দোকান ছিল। ২০০৫-এ এডিডিএ-র তরফে তাঁদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, অন্যত্র মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ে নতুন দোকানঘর দেওয়া হবে। কিন্তু রাস্তার ধারে সরকারি জমি জবরদখল করে থাকা যাবে না। নানা টালবাহানার পরে সবাই এক মত হন। সেই মতো ৬৫ জন ব্যবসায়ী ২ হাজার টাকা করে জমা দিয়ে নতুন দোকানের আবেদন করেন। আবেদনপত্র পরীক্ষার পরে ৫ জনের নাম বাদ যায়।
বছরখানেক পরে ৬০ জনের জন্য স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পাশে প্রায় সাড়ে চার একর জমিতে কমপ্লেক্স গড়ার কাজ শুরু করে এডিডিএ। বরাদ্দ হয় প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরে ২০১১ সালের ৩ মার্চ দোকানগুলি ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তার আগে ১ মার্চ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ায় দোকানঘর বিলির প্রক্রিয়া আটকে যায়।
ভোটের পরে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে। এডিডিএ-র দখলও বামেদের থেকে গিয়েছে তৃণমূলের হাতে। এডিডিএ-র নতুন বোর্ড ওই দোকানগুলি বিলির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। উপরন্তু, বিধাননগর এলাকায় সাম্প্রতিক উচ্ছেদ অভিযানে রেহাই পায়নি তাঁদের অস্থায়ী দোকানগুলিও। ব্যবসায়ী সুশান্ত দে, মৃণালকান্তি গোস্বামী, মহম্মদ সরতাজ আলম, সঞ্জীব ঘোষেদের দাবি, নতুন দোকান হাতে পেলে নিজেরাই অস্থায়ী দোকানগুলি ভেঙে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁদের ক্ষোভ, “আমরা পুনর্বাসন প্রকল্পে সায় দিয়ে চালু দোকান ছাড়তে রাজি হয়েছি। অথচ আমাদের অস্থায়ী দোকানও ভেঙে দেওয়া হল। আমাদের প্রতিবাদে কর্ণপাত করা হল না।”
সিপিএমের বিধাননগর-জেমুয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, “এডিডিএ-র নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পরে বছর গড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রাপকদের হাতে দোকানগুলি তুলে দেওয়ার কোনও উদ্যোগ হচ্ছে না। নতুন ঘরগুলি রক্ষণাবেক্ষণেরও কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে সেগুলি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।” এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানান, দোকানঘরগুলির প্রকৃত প্রাপকদের তালিকায় সামান্য গরমিল রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে তথ্য মিলেছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হলেই দোকানঘর প্রাপকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। |