|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
সেই ট্র্যাডিশন
অব্যাহত |
আশিস পাঠক |
হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ। দিতে হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। চাইছেন এক কবি। চাইবেনই তো, অনুমতি ছাড়াই যে তাঁর কবিতা বাংলা কাব্যপরিচয়-এ (১৯৩৮) সংকলিত করেছেন সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ। আরও কারও কারও কাছে অনুমতি চাওয়া হয়নি বলে বেঁকে বসেছেন তাঁরা। বিশ্বভারতী-র কর্মীরা রবীন্দ্রনাথকে জানাচ্ছেন সমূহ বিপদটি, ‘বই বাজারে বেরোলেই আমাদের নামে উকিলের চিঠি আসতে পারে’।
২০১২। ‘দেশ’ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বেরোল, একদা ‘আনন্দমেলা’য় প্রকাশিত সাড়া-জাগানো চিত্রকাহিনি সমগ্রে প্রকাশিত হবে। তোলপাড় বইপাড়ায়। পরে জানা গেল, বিজ্ঞাপনদাতা মূল কাহিনির লেখক, চিত্রনাট্যকার এবং শিল্পীর অনুমতি নিয়েছেন, পত্রিকার অনুমতিটা নেওয়া হয়নি। সুতরাং, কপিরাইটের বাধায় প্রকল্প আপাতত বন্ধ।
সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে...। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য বইয়ের নকল বিক্রি করায় সম্প্রতি মামলা করেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। এমন উদ্যোগ কলেজ স্ট্রিটে? প্রায় ভাবাই যায় না। কেন?
আসল সমস্যা বাজার, জানাচ্ছেন এক প্রকাশক, সাধারণত বাংলা বই বেচে লাভ যা তাতে আইনের ঝামেলায় জড়ালে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি হবে। তবে বড় লেখকদের বই সত্যিই বাজারে কাটে, তাঁদের কথা আলাদা। তাঁদের বই নিয়েও অবশ্য মামলা-মোকদ্দমা তেমন হয়নি, হয়েছে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং।
কিন্তু এটাই কি একমাত্র কারণ? না। বইপাড়ায় কপিরাইট সম্পর্কে সচেতনতা আছে এবং সেটা সৎ ভাবে মেনে চলে এমন প্রকাশনা সম্ভবত দুআঙুলের কড়েই গোনা যাবে। সচেতন করার তেমন প্রচেষ্টাও হয়নি কখনও। প্রকাশনার যে পাঠ্যক্রম চালু করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিগাল সেখানে কপিরাইট আছে বটে, কিন্তু তার প্রয়োগ দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আর এক প্রজন্ম।
কপিরাইট তো শুধু লেখকের নয়, সম্পাদনা, প্রচ্ছদ, অলংকরণ এমনকী গ্রন্থবিন্যাসেরও যে কপিরাইট হয় সে সব নিয়ে মাথা ঘামান না কেউই। আর কপিরাইট ও আইপিআর বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট-এর পার্থক্য? অত সূক্ষ্মতা বইপাড়ার কুটিরশিল্পে আপাতত শিকেয় থাক।
প্রশ্নটা আসলে আইনের চেয়েও বেশি নৈতিকতার। হট কেক-দের কথা আলাদা, সাধারণ ভাবে বাঙালি লেখক-সম্পাদক-শিল্পী-আলোকচিত্রী বইয়ে তাঁদের কাজ ব্যবহৃত হলে খুব একটা টাকা-পয়সা দাবি করেন না, আশা করেন একটু সৌজন্যবোধ, স্বীকৃতি। তার কারণ এ ধরনের লিখন বা শিল্পকৃতি তাঁদের অন্ন জোগায় না। এটা শখ, প্যাশন, সেবা-ও। ফলে লেখার জন্য টাকা চাইতে অনেকেরই দ্বিধা হয়। লক্ষ্মীর সঙ্গে সরস্বতীর সেই চিরাচরিত ঝগড়া আর কি! মুশকিল সেটাই, প্রকাশক, মুদ্রক, কাগজ সরবরাহকারী, বাঁধাইকর সবাই অর্থের জন্য কাজ করেন, কিন্তু বই লেখেন বা সম্পাদনা করেন যিনি তিনি শুধুই সরস্বতীর সেবক।
বাংলা বইয়ে ‘কপিরাইট’, এবং পেশাদারিত্ব, বেরোতে পারছে না এই ‘সাহিত্যসেবা’ থেকে। |
|
|
|
|
|