নারোড়া পাটিয়া হত্যা মামলায় দাঙ্গার ‘মূল চক্রী’ মায়া কোডনানি ও উত্তেজিত জনতার পুরোভাগে থাকা বাবু বজরঙ্গির ব্যতিক্রমী শাস্তি ঘোষণা করল বিশেষ আদালত।
২৮ বছরের কারাদণ্ড হল নরেন্দ্র মোদী-ঘনিষ্ঠ বিজেপি বিধায়ক মায়া কোডনানির। আর বজরং দলের নেতা বাবু বজরঙ্গিকে বাকি জীবন গারদের আড়ালেই থাকতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
বিশেষ আদালত সাজা ঘোষণা করতে গিয়ে বলেছে, গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী মায়া কোডনানি নরোড়া পাটিয়া দাঙ্গার সময় শুধু অন্যকে আক্রমণই করেননি, দশ বছর আগেকার ওই দাঙ্গার ‘মূল চক্রী’ও তিনি। দুই অপরাধের জন্য ১০ এবং ১৮ বছরের মিলিয়ে মোট ২৮ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে তাঁকে। সাম্প্রদায়িক হিংসাকে ‘ক্যানসার’ বলে বর্ণনা করে কোর্ট জানিয়েছে, বজরঙ্গিকেও বাকি জীবনটা জেলেই কাটাতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডে
 |
মায়া কোডনানি |
 |
বাবু বজরঙ্গি |
জড়িত অন্য ৭ জনের ২১ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। ৩২৬ ধারায় এদের প্রথমে ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আর বাকি ২২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড (সে ক্ষেত্রে ১৪ বছর কারাবাসের পরে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা যাবে) ঘোষণা করেছে বিশেষ আদালত।
এই সাজা বেশ কয়েকটি দিক থেকেই ব্যতিক্রমী। এই প্রথম গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গায় কোনও মহিলা দোষী সাব্যস্ত হলেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সাংঘাতিক অস্ত্র দিয়ে কাউকে ভয়ানক ভাবে জখম করার (৩২৬ ধারা) অপরাধে মায়াকে প্রথম দফায় দশ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এই সাজা শেষ হওয়ার পর দিন থেকেই অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং খুনের অভিযোগে ফের ১৮ বছরের কারাদণ্ড শুরু হবে তাঁর। তাই সব মিলিয়ে হাজতবাসের মেয়াদ মোট ২৮ বছর।
বজরঙ্গিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এই দু’জনের মধ্যে কেউই যাতে ১৪ বছর কারাবাসের পরে রাজ্য সরকারের কাছে মুক্তির আবেদন করার কোনও রকম সুযোগ না পায়, তা সুনিশ্চিত করতেই আদালত এমন ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা।
বিশেষ বিচারক জ্যোৎস্না যাজ্ঞিক বলেছেন, “সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতার উপরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অনেকটা ক্যানসারের সমান। নারোড়া পাটিয়ার ঘটনা ভারতীয় সংবিধানের ইতিহাসে একটা কালো অধ্যায়।” আদালতের মতে, সাম্প্রদায়িক হিংসা নৃশংস, অমানবিক এবং লজ্জাজনক। নারোড়ার ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। এক দিনে ৯৭ জন মানুষকে ভয়ঙ্কর ভাবে মেরে ফেলা হয়েছিল। যার মধ্যে ছিলেন অসহায় মহিলা, শিশু ও বয়স্ক মানুষ। এই ঘটনার হিংস্রতার তুলনা হয় না। মাত্র কুড়ি দিনের শিশুকেও খুন করতে হাত কাঁপেনি দাঙ্গাবাজদের।
দাঙ্গায় আক্রান্ত এবং গণধর্ষণের শিকার মহিলাদের প্রত্যেককে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গুজরাত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। |