বিনোদন: ডিসেম্বরে নতুন কহানি
কলকাতা ঘুরে ৫০ দিনে ‘গুন্ডে’ গড়বে যশরাজ
নস্পেক্টর রানা থেকে বব বিশ্বাস। কালীঘাট মেট্রো স্টেশন থেকে নোনাপুকুর ট্রাম ডিপো ‘কহানি’ ছবির কৃপায় এই শব্দগুলো এখন গোটা দেশের মুখস্থ।
‘কহানি’-রই সূত্রে বলিউড যেন আবার নতুন করে প্রেমে পড়ল শহর কলকাতার। বলিউডের পয়লা নম্বর প্রযোজক সংস্থা যশরাজ ফিল্মস এ বার কলকাতাকে লোকেশন করে ছবি করতে চলেছে। আদিত্য চোপড়ার প্রযোজনায় ‘গুন্ডে’ ছবির শ্যুটিং শুরু হবে ডিসেম্বর মাস থেকে। প্রায় পঞ্চাশ দিন ধরে টানা শ্যুটিং।
ইমরান খান-ক্যাটরিনা অভিনীত ‘মেরে ব্রাদার কি দুলহন’ ছবির পরিচালক আলি আব্বাস জফর-ই থাকবেন ‘গুন্ডে’-র পরিচালনার দায়িত্বে। ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করবেন রণবীর সিংহ এবং ‘ইশাকজাদে’-খ্যাত অর্জুন কপূর। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে ইরফান খানকেও। নায়িকা কে? প্রযোজক সংস্থা এ ব্যাপারে মুখ বন্ধ রেখেছেন। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে শোনা যাচ্ছে, ক্যাটরিনা কাইফ হতে পারেন এ ছবির অন্যতম নায়িকা। অর্থাৎ? ডিসেম্বর থেকে ক্যাটরিনা-রণবীররা নেচেগেয়ে বেড়াবেন এই কলকাতার মাটিতেই।
‘কহানি’। কলকাতার প্রতি বলিউডের আগ্রহ বাড়িয়েছে যে ছবি।
ছবির লাইন প্রযোজক, অর্থাৎ যিনি কলকাতা-পর্বে শ্যুটিংয়ের সব ব্যবস্থা করছেন, সেই অরিন্দম শীল বলছেন, “কলকাতায় এত ব্যয়বহুল ছবি এর আগে আর কখনও হয়নি। এই রকম বিপুলায়তন শ্যুটিংও এর আগে কলকাতা কখনও দেখেনি।” যেমন? মাঝগঙ্গায় একটি নাচের দৃশ্যের জন্য দেড়শো জন নৃত্যশিল্পীকে আনা হচ্ছে। ভাড়া করা হচ্ছে বিশালাকার বার্জ। ভবানীপুর সমাধিস্থল থেকে শুরু করে কুমোরটুলি, শালিমার রেল ইয়ার্ড, হাওড়া স্টেশন এমন সব জায়গাকে বাছা হচ্ছে শ্যুটিংয়ের লোকেশন হিসেবে। ছবিতে ক্যামেরা করছেন ‘এক থা টাইগার’-এর চিত্রগ্রাহক অসীম মিশ্র, কোরিওগ্রাফি বস্কো-সিজার। ফাইট মাস্টার আনা হবে বিদেশ থেকে।
এর আগেও মণি রত্নমের ‘যুবা’ ও ‘রাবণ’, প্রদীপ সরকারের ‘পরিণীতা’, সুধীর মিশ্রর ‘ক্যালকাটা মেল’, ইমতিয়াজ আলির ‘লভ আজ কল’, ওনিরের ‘আই অ্যাম’, রাজকুমার গুপ্তর ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ বলিউডের একাধিক সাড়া জাগানো ছবির শ্যুটিং কলকাতায় হয়েছে ঠিকই। সম্প্রতি রণবীর কপূর-প্রিয়ঙ্কা চোপড়া অভিনীত অনুরাগ বসুর ‘বরফি’ ছবির একটা বড় অংশের শ্যুটিংও হয়েছে এই শহরে। কিন্তু এ বছরে সুজয় ঘোষ পরিচালিত ‘কহানি’র মুক্তির পরে বিষয়টা সম্পূর্ণ অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে বলে ইন্ডাস্ট্রি সূত্রের খবর। শহরের গলিঘুঁজি সমেত আদ্যন্ত কলকাতাকেন্দ্রিক একটি ছবি দেশজুড়ে এই পরিমাণ সাফল্য এর আগে পায়নি।
পরিচালক সুজিত সরকার যেমন কলকাতায় অনেক বিজ্ঞাপনী ছবির শ্যুটিং করেছেন। এ বার কলকাতার পটভূমিতে বড় বাজেটের একটা হিন্দি ছবির শ্যুটিং করারও পরিকল্পনা করছেন। তাঁর মতে, “কহানি’র সাফল্য দেখে বলিউডের মনে হচ্ছে যে, সুপারহিট ছবির শ্যুটিংও কলকাতায় হতে পারে।” পরিচালক অনুরাগ বসু মনে করেন এমনটা আসলে হওয়ারই ছিল। “বেটার লেট দ্যান নেভার। খুব ভাল লাগছে দেখে যে, এত দিনে বলিউড শহর কলকাতাকে সুন্দর লোকেশনের মর্যাদা দিচ্ছে।”
আগে যখন কলকাতায় হিন্দি ছবির শ্যুটিং হয়েছে, অনুরাগ মনে করছেন, তার সঙ্গে এখনকার পরিস্থিতির একটা মৌলিক তফাত আছে। অবশেষে বলিউডের মানসিকতায় একটা পাকাপাকি পরিবর্তন এসেছে। “প্রদীপদা (সরকার) ‘পরিণীতা’ করেছিলেন। সুজয় ‘কহানি’ করল। ওনির, আমি আর সুজিতও অনেক শ্যুটিং করেছি। কিন্তু আমাদের এই কলকাতা-প্রেম ছিল মূলত বাঙালি হওয়ার সুবাদে। এখন আদিত্য চোপড়ার মতো শীর্ষস্থানীয় অবাঙালি প্রযোজকও কলকাতায় শ্যুটিং করতে আগ্রহী হচ্ছেন।”
ণি রত্নমের ছবি যুবা। এর শ্যুটিংও কলকাতায় হয়েছিল।
কল্লোলিনী তিলোত্তমার সঙ্গে বলিউডের এই নতুন প্রেম দেখে অভিভূত ‘কহানি’র পরিচালক সুজয় ঘোষ। “বলিউডের এই কলকাতা প্রীতির পিছনে ‘কহানি’ নিশ্চয়ই অন্যতম কারণ।” তা ছাড়াও সুজয় বলছেন, “আরও দুটো বিষয় আছে। মুম্বই থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টার ফ্লাইটে সহজেই কলকাতায় পৌঁছনো যায়। আর কলকাতার সংস্কৃতি এতটাই সমৃদ্ধ যে, গল্পের মধ্যে সেটাকে বুনেও দেওয়া যায়। বাঙালি হিসেবে এর জন্য সত্যি আমি খুব গর্বিত।”
কলকাতার এই সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যই এখন বলিউডের চোখ টেনেছে। অনুরাগ মুক্ত কণ্ঠে বলছেন, “ভারতের অধিকাংশ শহর এখন একই রকম দেখতে হয়ে গিয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম কলকাতা, দৃশ্যত যার একটা নিজস্ব চরিত্র আছে।” সুজিতের অভিজ্ঞতা বলছে, “কলকাতা সারা ভারতের সবচেয়ে ‘সিনেম্যাটিক’ শহর। আমি হলিউডের কলাকুশলীদের সঙ্গে কাজ করে এসেছি। তারা আমায় বলে, কলকাতা এমন একটা শহর যেখানে ক্যামেরা খুললেই আশ্চর্য সব ফ্রেম পাওয়া যায়।” মোনালিসা গেস্ট হাউস থেকে ক্যামাক স্ট্রিট, ঠাকুরপুকুর থেকে বিশ্বম্ভর মল্লিক লেন ‘কহানি’র পর্দা জুড়ে কলকাতার খুব চেনা চিহ্নগুলোই নতুন করে আশ্চর্য মোহময় হয়ে উঠেছিল। ‘কলকাত্তা’কে তার পরই নতুন করে আবিষ্কার করছে বলিউড।
এর পিছনে বলিউডের নিজের তাগিদও কম নয়। সুজিত সরকারের কথায়, মুম্বইয়ের লোকেশনগুলো অনেক বার করে দেখানো হয়েছে। অতি ব্যবহারে পুরনো হয়ে গিয়েছে ওই সব জায়গা। গত কয়েক বছর শ্যুটিংয়ের জায়গা হিসেবে দিল্লি পছন্দ হয়েছিল বলিউডের। তৈরি হয়েছিল ‘রং দে বসন্তী’, ‘দিল্লি সিক্স’, ‘দিল্লি বেলি’র মতো সব ছবি। “আমার পরিচালনায় ‘ভিকি ডোনার’ও তৈরি হয়েছে দিল্লিতে। কিন্তু এখন দিল্লিও পুরনো হয়ে গিয়েছে।” সেই জায়গাতেই ধূমকেতুর মতো উঠে আসছে কলকাতা।
এত দিন সেটা হয়নি কেন? পরিকাঠামোর উন্নতি একটা বড় কারণ। বলিউডের বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলো অবশেষে মানছে যে, ইদানীং কলকাতায় শ্যুটিংয়ের পরিকাঠামো প্রায় মুম্বইয়ের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অরিন্দম শীল দাবি করলেন, “শুধু তা-ই নয়। আগে মুম্বইয়ের প্রযোজকরা ভাবতেন, কলকাতায় শ্যুটিং মানেই লেবার আর ইউনিয়নের নানা বাধাবিপত্তি দেখা যাবে। এখন সে সব অতীত।” রাজ্য সরকারও সর্বতো ভাবে সাহায্য করছে। “মহাকরণ তথা লালবাজার ইতিমধ্যেই শান্তিপূর্ণ শ্যুটিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটা খুবই ইতিবাচক লক্ষণ,” বললেন অরিন্দম।
এক দিকে শাহরুখ খানের বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়া, অন্য দিকে বিদ্যা বালানের বাঙালি প্রীতি! পরের কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব অমিতাভ বচ্চনের উদ্বোধন করতে আসার সম্ভাবনা! কলকাতা আর বাঙালিতেই কি তবে মজছে বলিউড?

মুম্বইয়ের সিদ্ধি বিনায়ক মন্দিরে করিনা কপূর। ছবি: পি টি আই

‘অয়দিপাউস’ নাটকের মহড়া। আছেন দেবশঙ্কর হালদার। নিরঞ্জন সদনে। ছবি: রোহন ইসলাম

সুবর্ণ বন্ড
৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব জেমস বন্ড দিবস।’ ১৯৬২-র এই দিনেই বেরোয় প্রথম বন্ড-চিত্র ‘ড. নো’। এ বছর সুবর্ণজয়ন্তী।

জ্যাকসন ৫৪
মাইকেল জ্যাকসনের পরিবার তাঁর ৫৪তম জন্মদিন পালন করল। ভক্তরা ভিড় করেন তাঁর বাড়ির সামনে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.