বাড়িতে ঢুকে এক আদিবাসী বধূকে গণধর্ষণ করে অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠল কাশীপুর থানা এলাকায়। মঙ্গলবার রাতের ঘটনা। ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সেই রাতেই পুলিশ সমীর মাঝি নামে স্থানীয় গামারকুড়ি গ্রামের এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে। বুধবার তাকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, প্রতিহিংসা বশত এই ঘটনা ঘটেছে। সবরকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বধূটির স্বামী আসানসোলে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁদের একটি নাবালক ছেলে রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বধূটি বাড়িতে একা ছিলেন। বধূর স্বামী তখনও কাজ থেকে ফেরেননি। ছেলে গ্রামেই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল। সেই সময় তিন দুষ্কৃতী বাড়িতে ঢুকে বধূটিকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। পরে স্বামী বাড়িতে ফিরে স্ত্রীকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে খবর দেন পুলিশকে। পুলিশ গ্রামে গিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করে ভর্তি করান কাশীপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। রাতেই সেখান থেকে ওই বধূকে পাঠানো হয় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।
ঘটনার পরে মানসিক ও শারিরীক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন ওই গৃহবধূ। হাসপাতালে শুয়ে তিনি জানান, রাতে ছেলেকে পড়তে পাঠিয়ে রান্না করছিলেন। সেই সময়েই পিছন থেকে কয়েকজন তাঁকে জাপটে ধরে। করেও তিনি তাঁদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারেননি। তাঁর অভিযোগ, “তিনজনের মুখ কাপড়ে ঢাকা ছিল। ওরা দ্রুত কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেঁধে দিয়ে, মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। চিৎকার করে কাউকে ডাকতেও পারিনি। পরে হাত বেঁধে খাটে ফেলে আমার উপরে অত্যাচার চালায়। জ্ঞান হারাই।”
পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলাকে ধর্ষণ করার পরে তাঁর উপর আরও অত্যাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তেমন কিছু প্রমাণও প্রাথমিক ভাবে পাওয়া গিয়েছে। হাসপাতালে স্ত্রীর পাশে ছিলেন তাঁর স্বামী। তিনি জানান, রাত প্রায় ৮টায় বাড়িতে ফিরে দেখি চোখ-মুখ-হাত বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে স্ত্রী। পড়শিদের ডেকে স্ত্রীর বাঁধন খুলে দিয়ে খবর পুলিশে দিয়েছিলাম। রঘুনাথপুরের এসডিপিও সেখানে যান। বধূটির স্বামীর সঙ্গে কথা বলার পরে রাতেই আটক করা হয় সমীর মাঝি নামের ওই ব্যাক্তিকে। বধূটির স্বামী বলেন, “কারা আমার স্ত্রীর এই সর্বনাশ করেছে বুঝতে পারছি না।” তাঁর দাবি, “তবে জমি নিয়ে সমীরের সঙ্গে আমার গোলমালের কথা পুলিশকে জানিয়েছি।” এসডিপিও বলেন, “ধর্ষণের পরেও বধূটিকে আরও অত্যাচার চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। প্রাথমিক ভাবে তার কিছু নমুনাও পাওয়া গিয়েছে। তবে আমাদের অনুমান, শুধু ধর্ষণের উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতীরা সেখানে যায়নি। এর পিছনে প্রতিহিংসা নেওয়ার মনোভাব রয়েছে।” তিনি জানান, জমি নিয়ে বিবাদে এই ঘটনা কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।”
তবে ধৃত সমীর মাঝি তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে বধূটির মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে। ধৃতের মেডিক্যাল পরীক্ষা করার জন্য পুলিশ আদালতে আবেদন জানাবে। |